দূরবীণ নিউজ প্রতিবেদক:
দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) দায়ের করা সুনিদিষ্ট তথ্য প্রামাণের ভিত্তিতে দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে মামলাগুলো সরকার চাইলেই প্রত্যাহার করতে পারবে না বলে রায় ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট।
রায়ে আরো উল্লেখ করা হয়েছে, সরকার দুর্নীতির মামলা প্রত্যাহার তো করতে পারবে না এবং দুদকের করা মামলা প্রত্যাহারে সুপারিশও করা যাবে না। দুর্নীতির মামলায় সরকার হস্তক্ষেপ করতে পারবে না।
রোববার (১৩ ডিসেম্বর) হাইকোর্টের বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত ভার্চুয়াল বেঞ্চ পূনাঙ্গ রায় ঘোষণা করেন। এর আগে গত ১০ ডিসেম্বর আংশিক রায় ঘোষনা করেছিলেন হাইকোর্টের ওই বেঞ্চ।
এদিকে হাইকোর্টের এ রায়ের বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন দুদকের আইনজীবী খুরশিদ আলম খান।
মো. খুরশীদ আলম খান বলেন, ‘একটি টিন চুরির অভিযোগে দায়ের হওয়া দুর্নীতি মামলায় বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চ চূড়ান্ত রায় ঘোষণা করেন। ওই রায়ের ফলে এখন থেকে কোনো দুর্নীতি মামলায় সরকারের আইনি হস্তক্ষেপের আর কোনো সুযোগ থাকলো না।’
এছাড়াও ১/১১ এর সময়ে দুদকের দায়ের করা দুর্নীতি মামলা প্রত্যাহারের আবেদন করার বিষয়েও হাইকোর্টের রায়টি সুনির্দিষ্টভাবে সব প্রশ্নের অবসান ঘটালো বলেও জানান দুদক আইনজীবী।
আইনজীবী খুরশিদ আলম খান এ রায়কে যুগান্তকারী অ্যাখ্যা দিয়ে বলেন, ‘রায়ের মধ্য দিয়ে উচ্চ আদালত দুদকের মামলার বিষয়ে কোনো ধরনের নাক না গলানোর সর্তকবার্তা দিয়েছেন। দুদকের মামলা সরকার চাইলেও যে প্রত্যাহারের সুপারিশ করতে পারবে না, এ নিয়ে হাইকোর্টের রায় এটাই প্রথম বলেও জানান তিনি।’
মামলার বিবরণে জানা যায়, বিগত ১/১১ এর পর আওয়ামী লীগ সরকার যখন ক্ষমতায় আসে তখন ফৌজদারিসহ অসংখ্য মামলা প্রত্যাহারের সুপারিশ করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ফৌজদারি কার্যবিধির ৪৯৪ ধারা অনুযায়ী এ মামলা প্রত্যাহারের আবেদন করা হয়। সেই সময় দুদকের মামলাও প্রত্যাহারের আবেদন করা হয়। তখন অনেক ফৌজদারি মামলা প্রত্যাহার হলেও দুদকের মামলায় আইনী প্রশ্ন জড়িত থাকার কারণে কোনো মামলা প্রত্যাহার হয়নি।
কিন্তু ওই সময়ে সিলেটের ইউনিয়ন পরিষদের এক চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ৫টি টিন চুরির অভিযোগে দুদকের মামলা প্রত্যাহারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সুপারিশ করে। আদালতও মামলাটি চূড়ান্তভাবে প্রত্যাহারের আদেশ দেন।
এ ঘটনায় ২০১৬ সালে হাইকোর্টে রিভিশন আবেদন করেন দুর্নীতি দমন কমিশন দুদকের পক্ষ থেকে। আবেদনে বলা হয়, যে প্রক্রিয়ায় দুদকের মামলাটি প্রত্যাহার করা হয়েছে তা সঠিক আইন মেনে হয়নি। সে আবেদনের ওপর হাইকোর্ট চূড়ান্ত রায় ঘোষণা করেন ১০ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার।
রায়ে হাইকোর্ট বলেন, ‘২০০৪ সালের সংশোধিত আইন অনুযায়ী দুনীতি দমন কমিশন একটি স্বাধীন ও স্বতন্ত্র সংস্থা। এর ফলে দুদকের অনুমোদিত কোনো মামলা প্রত্যাহারে কেউ কোনো হস্তক্ষেপ করতে পারবে না।’