দূরবীণ নিউজ প্রতিনিধি:
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) রমনা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুল ইসলামের বিপুল সম্পদ ও মোহাম্মদপুরে এক বীর মুক্তিযোদ্ধার বাড়ি দখলের অভিযোগের অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

ইতোমধ্যে হাইকোট আগামী ৩ মাসের মধ্যে ওসি মনিরুলের বিরুদ্ধে প্রাপ্ত নানা অনিয়ম, দুর্নীতি এবং অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগের অনুসন্ধান শেষ করতে দুদককে নির্দেশ দিয়েছেন ।

রোববার (২১ আগস্ট) হাইকোর্টের বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের সমন্বয়ে গঠিত বে দুদককে নির্দেশ দিয়েছেন। এদিকে গত ১৭ আগস্ট দুদকের পরিচালক উত্তম কুমার মন্ডলের স্বাক্ষরে এক চিঠিতে ওসি মনিরুলের বিরুদ্ধে প্রাপ্ত অভিযোগ অনুসন্ধানের বিষয়টি উল্লেখ করা হয়। গণমাধ্যমকে ২১ আগস্ট এই তথ্য নিশ্চিত করেছে দুদককের সংশ্লিষ্ট দপ্তর।

সুত্র মতে, গত ৫ আগস্ট ওসি মনিরুলের ৮তলা বাড়িসহ বিপুল পরিমাণ সম্পদের বিষয়ে একটি জাতীয় দৈনিকে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ রয়েছে,‘ওসি মনিরুল ইসলাম ঢাকায় ৮তলা বাড়ি করেছেন। বানাচ্ছেন আরেকটি ডুপ্লেক্স বাড়ি। ঢাকার কেরানীগঞ্জ ও মুন্সিগঞ্জে তার রয়েছে ৪টি প্লট। বাড়ি, প্লøটসহ এ বিপুল সম্পদের মালিক তিনি। রাজধানীর মোহাম্মদপুর হাউজিং সোসাইটিতে এক মুক্তিযোদ্ধার বাড়ি দখলেরও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।’ ‘সরকারি একটি সংস্থার তদন্ত প্রতিবেদনের সূত্র ধরে অনুসন্ধানে ওসি মনিরুলের এসব অবৈধ সম্পদের সন্ধান পাওয়া গেছে।

এ প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ওসি মনিরুলের বিপুল সম্পদের উৎস সম্পর্কে অনুসন্ধান চেয়ে দুদকে চিঠি দেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন। পরে হাইকোর্টের নির্দেশে তিনি ওই অভিযোগটি অনুসন্ধান করে আইন পদক্ষেপ গ্রহণ করতে দুদক চেয়ারম্যান মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ বরাবার চিঠিসহ অভিযোগটি পাঠান। চিঠিতে আইনজীবী সুমন রমনা মডেল থানার ওসি মনিরুল ইসলামের সম্পদের অনুসন্ধান করে দ্রæত আইনি পদক্ষেপের ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ জানান।

এরআগে গত ১০ আগস্ট ওই ওসি মনিরুল ইসলামের বিপুল সম্পদের অনুসন্ধান চেয়ে হাইকোর্টে রিট করেন ব্যারিস্টার সুমন। উচ্চ আদালত রিট আবেদন শুনানিকালে ব্যারিস্টার সুমনকে এই বিষয়ে দুদকে আবেদন জমা দিতে বলেন। আদালতে পরামর্শে ১১ আগস্ট তিনি দুদকের চেয়ারম্যানের বরাবর অভিযোগ অনুসন্ধান করে আইনী পদক্ষেপ গ্রহণের আবেদন জানান।

দুদকে পাঠানো অভিযোগপত্রে ব্যারিস্টার সুমন উল্লেখ করেছেন, ১৯৯২ সালে মনিরুল ইসলাম এস আই পদে পুলিশ বাহিনীতে চাকরিতে যোগদান করেন।ওই সময়ে এসআই পদটি তৃতীয় শ্রেণির পদমর্যার ছিল। ২০১২ সালে মনিরুল ইসলাম ইন্সপেক্টর পদে তার পদোন্নতি পান। একজন সাব-ইন্সপেক্টর ও ইন্সপেক্টর হিসেবে মনিরুল ৪ বছর ৮ মাস দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের থানায় চাকরি বরেছেন। এসময়ে তিনি বসিলায় ৪ কাঠা জমির ওপর ৮তলা বাড়ি নির্মাণ করেন।

বিষয়টি নিয়ে গত ৫ আগস্ট ‘ঢাকায় ওসির ৮তলা বাড়িসহ বিপুল সম্পদ’ শিরোনামে একটি জাতীয় দৈনিকে সংবাদ প্রকাশিত হয়। প্রকাশিত সংবাদে উল্লেখ করা হয়, সরকারি একটি সংস্থার অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, মনিরুল ইসলাম অবৈধভাবে বিপুল সম্পদ অর্জন করেছেন।

চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয় ‘বিশ্বাস করার যথেষ্ট কারণ আছে যে, ক্ষমতার অপব্যবহার করে ওসি মনিরুল ইসলাম এসব অবৈধ সম্পদ গড়েছেন।’
‘নবম গ্রেডের কর্মকর্তা মনিরুলের বেতন ২০ হাজার টাকা। তিনি সাকুল্যে ৫০-৭০ হাজার টাকা বেতন পান। মনিরুল যে বেতন পান, এর তুলনায় তার অর্জিত সম্পদের পরিমাণ অনেক বেশি। পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়েছে, ২০০৫ সালে মনিরুল মোহাম্মদপুর এলাকায় একজন মুক্তিযোদ্ধার বাড়িসহ জায়গা সম্পত্তি দখল করেছেন।

পুলিশ বিভাগের সূত্রমতে দায়িত্বে অবহেলা, অসাদরচারণসহ বিভিন্ন অভিযোগে মনিরুলের বিরুদ্ধে একাধিকবার বিভাগীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। ব্যারিস্টার সুমন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘দুদকে আবেদনসহ চিঠি পাঠানো হয়েছে। ওসির মনিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান করে দুদককে আইনী ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ জানানো হয়েছে।’ #