দূরবীণ নিউজ প্রতিবেদক:
স্বাস্থ্য খাতের প্রভাবশালী ঠিকাদার মোতাজ্জেরুল ইসলাম ওরফে মিঠুর বিরুদ্ধে আমেরিকা,অস্ট্রেলিয়া ও সিংগাপুরসহ আরও কয়েকটি দেশে বিপুল পরিমান অর্থ পাচার এবং এদেশের বিভিন্ন এলাকায় শতকোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে। অবশেষে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আবেদনের প্রেক্ষিতে ঢাকার একটি আদালত মিঠুর অবৈধ ৭৪ কোটি টাকার সম্পদ জব্দ করা এবং তার বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞার আদেশ জারি করেছেন।
বৃহস্পতিবার (১৯ অক্টোবর) দুদকের সচিব মো. মাহবুব হোসেন গণমাধ্যমকে মিঠুর বিরুদ্ধে অবৈধ ৭৪ কোটি টাকার সম্পদ জব্দ করা এবং তার বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞার জারি করেছেন। কারণ বিরুদ্ধে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিপুল পরিমান অর্থ পাচার এবং অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগের অনুসন্ধান চলমান রয়েছে। মিঠু এতোদিন বিদেশে পালিয়ে ছিলেন। যারফলে তাকে দুদকের অনুসন্ধাকারী টিমের সদস্যরা তলবি চিঠি পাঠিয়েও দুদকে আনতে পারেননি। সম্প্রতি তিনি বাংলাদেশে এসেছেন বলেন একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা নিশ্চিত করেছেন।
দুদক সচিব সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন মিঠুর বিরুদ্ধে চলমান অনুসন্ধান শেষ না হওয়া পর্যন্ত আগাম করণীয় বিষয়ে কোন মন্তব্য করা উচিত হবে না। তবে এ বিষয়ে আদালতের নির্দেশনা এবং দুদকের আইন মোতাবেক যা প্রয়োজনন অনুসন্ধানী কর্মকর্তা তা করবেন।
সূত্র মতে,গত ১৮ অক্টোবর দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে কমিশনের অনুমোদনক্রমে অনুসন্ধানকারী টিম প্রধান উপপরিচালক মো. মশিউর রহমান আদালতে মিঠুর বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা এবং তার ৭৪ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ জব্দের অনুমতি চেয়ে আবেদন করেন। একই সঙ্গে মিঠুর বিদেশগমন রহিত করতে বাংলাদেশ পুলিশের স্পেশাল শাখা (এসবি) বরাবর চিঠি পাঠানো হয়েছে।
মিঠুর ৭৩ কোটি ৭৪ লাখ ৭১ হাজার ৭৩৮ টাকার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ ক্রোক ও অবরুদ্ধ করতে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ২০১২-এর ১০ ও ১৪ ধারা এবং দুর্নীতি দমন কমিশন বিধিমালা ২০০৭-এর ১৮ ধারায় মহানগর স্পেশাল জজ আদালতে আবেদন করা হয়েছে। আবেদনে জব্দ করা সম্পদের মধ্যে ১৬ কোটি ৪১ লাখ ৯১ হাজার ৫০০ টাকার স্থাবর সম্পদ এবং ৫৭ কোটি ৩১ লাখ ৮০ হাজার ২৩৮ টাকা অস্থাবর সম্পদের তথ্য রয়েছে।
দুদক সূত্রে জানা যায়, মিঠু সিন্ডিকেট করে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে স্বাস্থ্য খাতে মালামাল সরবরাহ ও উন্নয়ন কাজে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। যার মধ্যে দেশের ১২ হাসপাতালের কেনাকাটায় অনিয়ম ও দুর্নীতির সঙ্গে সম্পৃক্ততার প্রমাণ মিলেছে অনুসন্ধানে। হাসপাতালগুলো হলো- কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, মুগদা জেনারেল হাসপাতাল, জেনারেল হাসপাতাল মৌলভীবাজার, জেনারেল হাসপাতাল গোপালগঞ্জ, আই এইচ টি সিলেট, ঢাকা ডেন্টাল কলেজ, ঢাকা ডেন্টাল হাসপাতাল এবং রাজধানীর সিএমএসডি।
এসব হাসপাতালে মিঠু সিন্ডিকেট করে অতি উচ্চ মূল্য দেখিয়ে নি¤œমানের মালামাল সরবরাহ, দরপত্রের শর্তানুযায়ী মালামাল সরবরাহ না করা, কোনো কোনো ক্ষেত্রে মালামাল সরবরাহ না করেই বিল উত্তোলন এবং অপ্রয়োজনীয় ও অযাচিত মালামাল সরবরাহ করেছে।
অভিযুক্ত মিঠুর বিরুদ্ধে আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, সিঙ্গাপুরসহ বিভিন্ন দেশে বিপুল অর্থ পাচারের অভিযোগ রয়েছে। অবৈধ সম্পদের মধ্যে রয়েছে- রাজধানীর বানানী ডিওএইচএস এলাকার রোড-৪/এ-তে ৫ কাঠা জমিতে পাঁচতলা বাড়ি, বানানীর ৬ নং রোডের বøক সিতে ১৮২৫ বর্গফুট ফ্ল্যাট, উত্তরার ৬ নম্বর সেক্টরের ১০ নং রোডে ৫.২৫ কাঠা জমিতে চারতলা বাড়ি, একই এলাকার ৫ নম্বর সেক্টরের ৭ নং রোডে ছয়তলা বাড়ি, গুলশানের সুবাস্তু নজর ভিলায় ৩৭২৫ ও ৫৮৫ বর্গফুটের ফ্ল্যাট ও ২টি কার পার্কিং, দক্ষিণ কল্যাণপুরের ১ নম্বরে রোডে ১৫৮৩ বর্গফুট ফ্ল্যাট, উত্তরার ১৫সি রোডের ৩ কাঠার দুটি প্লট, টঙ্গী শিল্প এলাকায় ২ বিঘা জমি ও ভবন এবং রংপুরের বুড়িহাট রোডে কয়েক কোটি টাকায় নিজ বাড়ি।
এছাড়াও একোয়া কালচার ফার্মস লিমিটেড, জিএমজি এয়ারলাইন্স, নর্থ চিকস প্রাইভেট লিমিটেড, ঢাকা সেন্ট্রাল ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতাল, কছিল উদ্দিন মেমোরিয়াল মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, বায়ো মেডিকেল মার্চেন্টাইজ প্রাইভেটি লিমিটেড ও আই-পাইওনিয়ার হিটাসি প্রাইভেট মেডিকেলে শত কোটি টাকা বিনিয়োগ রয়েছে বলে জানা গেছে।
অপরদিকে শেয়ার বাজারে শত কোটি টাকার বিনিয়োগ, ব্যক্তিগত দুটি গাড়ি, সাউথইস্টসহ বিভিন্ন ব্যাংকে শতকোটি টাকার সম্পদ থাকার তথ্য রয়েছে বলে দুদক সূত্রে জানা গেছে। স্বাস্থ্য খাতে সব ধরনের টেন্ডার ও কেনাকাটায় একচ্ছত্র আধিপত্য ছিল মিঠুর। আমেরিকাসহ কয়েকটি দেশেও বিপুল সম্পদ রয়েছে তার। তার বিরুদ্ধে অর্থ পাচারের একটি অভিযোগে দুদকের অনুসন্ধান চলমান রয়েছে। ২০২০ সালের ৬ আগস্ট মাস্ক-পিপিই ক্রয় দুর্নীতির অনুসন্ধানে মো. মোতাজ্জেরুল ইসলাম মিঠুকে তলব করা হলেও অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে হাজির হননি তিনি। # কাশেম