দূরবীণ নিউজ প্রতিবেদক:
ঢাকার অক্সিজেনের আধার ও ঐতিহাসিক স্মৃতি বিজড়িত সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের উন্নয়ন প্রকল্পের নামে বৃক্ষনিধনসহ উদ্যানের গাছপালা, পরিবেশ-প্রতিবেশ এর উপর যে ধ্বংসযজ্ঞ ইতিমধ্যে চালানো হয়েছে তার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বিআইপি)।
শুক্রবার (৭ মে) এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এই প্রতিবাদ জাননো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ঢাকার বিভিন্ন পার্ক, খেলার মাঠ ও গণপরিসর ডিজাইনে যে পরিমান অবকাঠামো, কংক্রিটের ব্যবহার, কফিশপ, রেঁস্তোরা নির্মাণের মাধ্যমে গণপরিসরের চরিত্র পরিবর্তনের মাধ্যমে কর্পোরেটাজাইজেশন করবার সাম্প্রতিক ধারা লক্ষ্য করা যাচ্ছে, তাতে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বিআইপি) গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছে।
বিদ্যমান ঢাকা মহানগর ইমারত নির্মাণ বিধিমালাতে সুস্পষ্টভাবে বলা আছে, পাবলিক পার্ক এবং খোলা পরিসরে যেকোন ইমারত নির্মাণের জন্য অনুমোদনের প্রয়োজন হবে এবং খোলা পরিসরের শতকরা ৫ ভাগের বেশি জায়গায় অবকাঠামো হতে পারবে না।
পাশাপাশি এই ধরনের পার্কের ক্ষেত্রে বড় ধরনের উন্নয়ন প্রকল্প নিতে গেলে ইমারত নির্মাণ বিধিমালার আওতায় গঠিত ‘নগর উন্নয়ন কমিটি’র মতামত নেয়া অত্যাবশ্যক।
উদ্যান বা প্রাকৃতিক ও প্রতিবেশগত ভাবে গুরুত্বপূর্ণ কোন স্থানের প্রকল্প প্রণয়নে যথোপযুক্ত পেশাজীবি যথা নগর পরিকল্পনাবিদ, স্থপতি, নগর নকশাবিদ, প্রকৌশলী, উদ্যানতত্ত্ববিদ, বাস্তুতন্ত্র ও প্রতিবেশ বিশেষজ্ঞ, সমাজবিজ্ঞানী প্রভৃতি বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে নকশা প্রণয়ন করাটাই বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত পদ্ধতি।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের উন্নয়ন পরিকল্পনায় উপরোক্ত পরিকল্পনা পদ্ধতি অনুসরণ না করেই প্রকল্প চূড়ান্তকরণের মাধ্যমে বৃক্ষ নিধন ও পরিবেশ-প্রতিবেশ ধ্বংস করে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে যা চূড়ান্তভাবে অপেশাদারী আচরণ ও গণপরিসরের উপর জনগণের যে অংশীদারিত্ব রয়েছে তার চূড়ান্ত অবমূল্যায়ন।
আরও পরিতাপের বিষয় হচ্ছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের উন্নয়ন পরিকল্পনায় বড় পরিসরের গাড়ি পার্কিং, রেস্তোরা নির্মাণ সহ অবকাঠামোগত যে পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে তার পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন হলে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের উদ্যান চরিত্র নষ্ট হয়ে যাবার সম্ভাবনা প্রবল, যা বিদ্যমান ‘উন্মুক্ত স্থান, উদ্যান এবং প্রাকৃতিক জলাধার সংরক্ষণ আইন, ২০০০’ এর সুস্পষ্ট ব্যত্যয়।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স আন্তরিকভাবে বিশ্বাস করে, বঙ্গবন্ধুর ৭ ই মার্চ এর ভাষণ এবং ১৬ই ডিসেম্বর পাক হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণের স্মৃতি বিজড়িত এই ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের প্রকৃতি ও পরিবেশকে অক্ষুণ্ণ রেখেই আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা সংগ্রামের এই স্মৃতিময় স্থানগুলোকে চিরভাস্মর করে রাখবার পরিকল্পনা করা সম্ভব।
রেস্টুরেন্ট তৈরী, গাড়ি পার্কিং নির্মাণ কিংবা অন্যান্য যে সকল অবকাঠামো পরিকল্পনা বর্তমান নকশাতে আছে তা উপরোক্ত উদ্দেশ্য পূরণে পুরোপুরি ব্যর্থ হবে। বিদ্যমান বাস্তবতায় বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স নিম্নের প্রস্তাবনাসমূহ নীতিনির্ধারণী মহল সহ সংশ্লিষ্ট সকলের বিবেচনার জন্য সুপারিশ করছেঃ
প্রথমতঃ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ অনতিবিলম্বে বন্ধ করে দিয়ে প্রস্তাবিত প্রকল্পের পরিকল্পনাগত বিশ্লেষণ ও পরিবেশ-প্রতিবেশগত প্রয়োজনীয় সমীক্ষা করবার মাধ্যমে প্রয়োজনীয় সংশোধনী ও পরিমার্জন করে প্রকল্পের পরিকল্পনার প্রণয়ন করা।
দ্বিতীয়তঃ প্রকল্প প্রণয়নে যথোপযুক্ত পেশাজীবি যথা নগর পরিকল্পনাবিদ, স্থপতি, নগর নকশাবিদ, প্রকৌশলী, উদ্যানতত্ত্ববিদ, বাস্তুতন্ত্র ও প্রতিবেশ বিশেষজ্ঞ, সমাজবিজ্ঞানী প্রভৃতি বিশেষজ্ঞদের অন্তর্ভূক্ত করা।
তৃতীয়তঃ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের উন্নয়ন প্রকল্পের পরিকল্পনা ইমারত নির্মাণ বিধিমালার আওতায় গঠিত ‘নগর উন্নয়ন কমিটি’র মতামত সাপেক্ষে অনুমোদনের মাধ্যমে বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া।
চতুর্থতঃ স্থাপত্য অধিদপ্তর কর্তৃক সোহরাওয়ার্দী উদ্যান সংশ্লিষ্ট উন্নয়ন প্রকল্পের ডিজাইনে পেশাজীবীদের ‘প্রফেশনাল কোড অব এথিক্স এবং স্ট্যান্ডার্ড প্র্যাকটিস’ এর ব্যত্যয় ঘটে থাকলে সংশ্লিষ্টদের পেশাজীবি ইনস্টিটিউটের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নেয়া
পঞ্চমতঃ নগর পরিকল্পনা ও নির্মিত পরিবেশ সংশ্লিষ্ট পেশাজীবিদের ‘প্রফেশনাল কোড অব এথিক্স’ মেনে গণপরিসর পরিকল্পনায় পরিবেশ-প্রতিবেশ-জনস্বার্থ সংরক্ষণে সর্বোচ্চ পেশাদারী আচরণ নিশ্চিত করা
ষষ্ঠতঃ সোহরাওয়ার্দী উদ্যান সংশ্লিষ্ট উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে বৃক্ষ নিধন ও পরিবেশ-প্রতিবেশ এর ক্ষতিসাধন এর সাথে সাথে সংশ্লিষ্টদের দ্রুত তদন্ত সাপেক্ষে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে দৃষ্টান্ত স্থাপন করা উচিত যেন বাংলাদেশের আর কোথাও পরিবেশ-প্রতিবেশকে ধ্বংস করে উন্নয়ন ও সৌন্দর্যবর্ধনের নামে হঠকারি পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া না হয়।
সপ্তমতঃ বিশ্বের অন্যান্য দেশের ন্যায় সারা দেশের উদ্যান, পার্ক, খেলার মাঠ, গণপরিসর পরিকল্পনা ও রক্ষণাবেক্ষণে পেশাজীবিদের সমন্বয়ে অনিতিবিলম্বে বিশেষ সংস্থা গঠনের উদ্যোগ গ্রহণ করা।
# প্রেস বিজ্ঞপ্তি ।