দূরবীণ নিউজ প্রতিবেদক :
রাজধানীর অভিজাত হোটেল প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁওয়ের শুল্কসহ ভ্যাট ফাঁকির ২০ কোটি ৭৪ লাখ ৯২ হাজার টাকা আগামী ১৫ কর্মদিবসের মধ্যে ট্রেজারি চালানের মাধ্যমে সরকারি কোষাগারে জমা দিয়ে ট্রেজারি চালানের মূল কপি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট বিভাগে দাখিলের জন্য বলা হয়েছে।
গত ১৮ মে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) ভ্যাট বিভাগের কমিশনার ওয়াহিদা রহমান চৌধুরীর স্বাক্ষরে পৃথক দুই চিঠিতে ১৫ কর্মদিবসের মধ্যে ট্রেজারি চালানের মাধ্যমে শুল্কসহ ভ্যাটের টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দিয়ে ট্রেজারি চালানের মূল কপি এলটিইউ-এর অফিসে দাখিলের জন্য অনুরোধ করা হয়।
পাঁচ তারা অভিজাত এ হোটেলের ‘পানশালা ও ড্যান্স ফ্লোরের ওপর ১০ শতাংশ সম্পূরক শুল্কসহ ভ্যাট প্রযোজ্য রয়েছে। গত ২০০৫ সাল থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত শুল্কবাবদ ভ্যাট পরিশোধ করেনি উক্ত হোটেল কর্তৃপক্ষ। পরে অনুসন্ধান চালিয়ে এনবিআরএ’র ভ্যাট বিভাগ রাজস্ব ফাঁকির এ তথ্য উদঘাটন করেছে। হোটেল সোনারগাঁও কর্তৃপক্ষকে বকেয়া শুল্কসহ ভ্যাট প্রদানের অনুরোধ জানিয়ে পৃথক চিঠি পাঠান ভ্যাট বিভাগের কর্মকর্তারা।
কিন্তু ওই চিঠির বিরুদ্ধে প্রথমে হাইকোর্টে এবং পরে আপিল বিভাগে আবেদন করেন হোটেল সোনারগাঁও কর্তৃপক্ষ। এভাবে চলে যায় টানা ৬ বছর। অবশেষে হাইকোর্ট এবং আপিল বিভাগ ‘হোটেল সোনারগাঁও কর্তৃপক্ষের’ আপিল খারিজ করে সরকারের পাওনা সমুদ্বয় বকেয়া সম্পূরক শুল্কসহ ভ্যাট পরিশোধ করার জন্য আদেশ দেন। আপিল বিভাগের চূড়ান্ত রায়ে বিষয়টির মীমাংসা হয় এবং ফাঁকি দেওয়া ভ্যাট সরকারের কোষাগারে জমা দেওয়ার আদেশ জারির প্রেক্ষিতে ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে ট্রেজারি চালানের মাধ্যমে সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়ার জন্য পৃথক ২টি চিঠি পাঠানো হয়।
ভ্যাট ফাঁকির বিষয়ে জানতে চাইলে হোটেল সোনারগাঁওয়ের অডিট বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. হান্নান গণমাধ্যমকে বলেন, সরকারের কিছু সাংঘর্ষিক আইন রয়েছে। ওই আইন নিয়েই এক ধরনের দ্বন্দ তৈরি হয়েছিল। যারফলে আদালত পর্যন্ত যেতে হয়েছে। বাংলাদেশের অনেক অভিজাত হোটেল একই ধরনের সমস্যা নিয়ে আদালতে গিয়ে সুরাহা করেছে। কিন্তু আদালতের রায় আমাদের বিপক্ষে গেছে। কোর্ট আমাদের আপিল ডিসমিশড (খারিজ) করেছে। ‘এখন আদালতের রায় মেনে নিতে হবে। এর বাইরে আমার বলার কিছু নেই।’
অপরদিকে, এনবিআরের ভ্যাট বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা গণমাধ্যমকে বলেন, পাঁচ তারকা হোটেল সোনারগাঁও এ আলাদা পানশালা (মদের বার) ও ড্যান্স ফ্লোর রয়েছে। “অনুসন্ধানে দেখা গেছে, পানশালা ও ড্যান্স ফ্লোরে মদসহ বিভিন্ন সেবাবাবদ হোটেল সোনারগাঁও ২০ কোটি ৭৪ লাখ ৯২ হাজার টাকা শুল্কসহ ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে। বকেয়া রাজস্ব আদায়ের চিঠি পাঠালেও ভ্যাট দিতে অস্বীকৃতি জানায় হোটেল কর্তৃপক্ষ।
ফলে বকেয়া রাজস্ব আদায়ে তাদের বিরুদ্ধে আদালতে সরকারের পক্ষে মামলা করে ‘এলটিইউ ভ্যাট বিভাগ’। ২০১৭ সালের ১২ জুলাই আপিল বিভাগ একই রায় দেন। রায়ে শুল্কসহ ভাট ফাঁকির অভিযোগ প্রমাণিত হয়। কিন্তু মামলার চূড়ান্ত রায়ের পরও হোটেলটি রাজস্ব পরিশোধ না করে আপিল করে এবং তাদের আপিল খারিজের পর এবার বকেয়া রাজস্ব আদায়ে চিঠি দেওয়া হয়।”
হোটেল সোনারগাঁওয়ের এমডি বরাবর পাঠানেরা চিঠিতে বলা হয়, সোনারগাঁও হোটেল কর্তৃপক্ষের দায়েরকৃত রিট পিটিশন ও সিভিল রিভিউ পিটিশন (রিট পিটিশন নং- ৫৪৩০/২০০৯ , সিভিল রিভিউ পিটিশন নং- ৫৩৭/২০১৭) মামলার রায় সরকারের পক্ষে রায় হয়েছে। যা হোটেল ডেভেলপমেন্ট লিমিটেড নামীয় প্রতিষ্ঠানের সিভিল রিভিউ পিটিশন (পিটিশন নং- ৪৯৮/২০১৭) মামলার সাথে একত্রে সোনারগাঁও হোটেলের সুপ্রিম কোর্টের আপিল ডিভিশনে দায়েরকৃত সিভিল রিভিউ পিটিশনের রায়ে মামলাটিও খারিজ হয়েছে।
সুতরাং উচ্চ আদালতের প্রদত্ত আদেশ অনুযায়ী ২০০৫ সালের জুলাই থেকে ২০০৯ সালের জানুয়ারি পযন্ত অপরিশোধিত সম্পূরক শুল্কসহ মুসক বাবদ ১০ কোটি ৩৬ হাজার ১৮৪ টাকা বকেয়া রয়েছে। প্রথম চিঠিতে আগামী ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে ট্রেজারি চালানের মাধ্যমে সরকারি কোষাগারে জমা দানপূর্বক ট্রেজারি চালানের মূল কপি এনবিআরের বৃহৎ করদাতা ইউনিটের মূল্য সংযোজন কর বিভাগে দাখিলের জন্য অনুরোধ করা হয়।
দ্বিতীয় চিঠিতে হোটেল সোনারগাঁওয়ের ১০ কোটি ৭৪ লাখ ৫৬ হাজার ১৬ টাকা ভ্যাট ফাঁকির টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়ার জন্য বলা হয়। চিঠিতে ২০০৯ সালের ফেব্রæয়ারি থেকে ২০১১ সালের এপ্রিল পর্যন্ত সম্পূরক শুল্কসহ মূসকবাবদ ১০ কোটি ৭৪ লাখ ৫৬ হাজার ১৬ টাকা বকেয়া রয়েছে। ওই টাকা সরকারের কোষাগারে জমা না দিয়ে এলটিইউ-এর চিঠিতে উল্লেখিত দাবিনামা চ্যালেঞ্জ করে ২০১১ সালে হোটেল কর্তৃপক্ষ হাইকোর্ট বিভাগে রিট (রিট পিটিশন নং- ৮০৫১/২০১১) দায়ের করেন।
ওই রিটের আদেশ সরকারের পক্ষে যায়। পরে ২০১৭ সালে রিভিউ পিটিশন (সিভিল রিভিউ পিটিশন নং- ৫৩৮/১৭) করে। আপিল বিভাগ এ মামলাটি খারিজের রায় হয়। ফলে উচ্চ আদালতের আদেশ অনুযায়ী ওই দুই বছরের অপরিশোধিত সম্পূরক শুল্কসহ মূসক ১০ কোটি ৭৪ লাখ ৫৬ হাজার ১৬ টাকা বকেয়া রয়েছে। আগামী ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে ট্রেজারি চালানের মাধ্যমে সরকারি কোষাগারে প্রদান করতে হবে। একই সঙ্গে জমাদানপূর্বক ট্রেজারি চালানের মূলকপি এলটিইউ-এর ভ্যাট বিভাগে দাখিলের জন্য অনুরোধ করা হলো।