দূরবীণ নিউজ প্রতিনিধি :
বিদেশে অর্থপাচারের ঘটনায় জড়িত এবং পানামা ও প্যারাডাইস পেপারে প্রকাশিত ব্যক্তি কিংবা প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) গঠিত ৭ সদস্যের কমিটির প্রতিবেদন চেয়েছে হাইকোর্ট। আগামী ১৫ মে-এর মধ্যে সিআইডি’র এই কমিটিকে কাজের অগ্রগতির প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন উচ্চ আদালত ।
রোববার (১০ এপ্রিল) হাইকোর্টের বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দের সমন্বয়ে গঠিত বে এ আদেশ দেন। সঙ্গে এ বিষয়ে শুনানির জন্য আগামী ১৬ মে পরবর্তী দিন ধার্য করেছেন আদালত। আদেশের বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন রিটকারী আইনজীবী অ্যাডভোকেট সুবীর নন্দী দাস।
আদালতে আজ রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পক্ষে ছিলেন আইনজীবী খুরশীদ আলম খান। আবেদনকারীর পক্ষে ছিলেন আইনজীবী আব্দুল কাইয়ুম খান ও সুবীর নন্দী দাস।
৭ সদস্যের কমিটিতে সিআইডির (অর্গানাইজড ক্রাইম) উপ-মহাপরিদর্শককে সভাপতি এবং ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিটের বিশেষ পুলিশ সুপারকে সদস্যসচিব করা হয়েছে।
এছাড়া বাকী সদস্যরা হলেন; সিআইডির দু’জন অতিরিক্ত ডিআইজি, দুদক ও বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের বিএফআইইউ’র দ’ুজন প্রতিনিধি এবং সিআইডির লিগ্যাল অ্যাফেয়ার্স ইউনিটের বিশেষ পুলিশ সুপার।
আইনজীবী সুবীর নন্দী দাস গণমাধ্যমকে জানান, গত ৬ মার্চ হাইকোর্টের উক্ত বেে সংশ্লিষ্ট বিবাদীদের পক্ষ থেকে জানানো হয়, পানামা এবং প্যারাডাইস পেপারে যাদের নাম এসেছে, তাদের বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে ৭ সদস্যের একটি কমিটি করেছে সিআইডি। ওইদিন আদালত এ কমিটিতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) একজন প্রতিনিধিকে অন্তর্ভুক্ত করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। এছাড়া এ বিষয়ে ১০ এপ্রিল পরবর্তী আদেশ ও শুনানির তারিখ নির্ধারণ করা হয়। এ সময়ের মধ্যে কমিটিকে অগ্রগতি প্রতিবেদন দিতে বলেছিলেন আদালত। তারই ধারাবাহিতায় আজ রোববার শুনানি হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ কমিটি হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট সংস্থা, বিভাগের সঙ্গে সমন্বয় করবে। অর্থপাচার মামলায় অনুসন্ধান বা তদন্তকারী কর্মকর্তা নিয়োগের আগে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেবে এবং সংশ্লিষ্ট হাইকোর্ট বেে যথাসময়ে প্রতিবেদন দাখিল করবে।
গত ৩০ জানুয়ারি এ বিষয়ে প্রতিবেদন চেয়েছিলেন হাইকোর্ট। ওইদিন দুদক, বাংলাদেশ ব্যাংক এবং বিএফআইউ-এর প্রতিবেদন দাখিলের পর এ আদেশ দেন। বিদেশি ব্যাংক বিশেষ করে সুইস ব্যাংকে পাচার করা ‘বিপুল পরিমাণ’অর্থ উদ্ধারের যথাযথ পদক্ষেপের নির্দেশনা চেয়ে গত বছরের ১ ফেব্রæয়ারি হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আব্দুল কাইয়ুম খান ও সুবীর নন্দী দাস।
ওই রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে গত বছরের ২৮ ফেব্রæয়ারি হাইকোর্ট বে রুলসহ আদেশ দেন। সুইস ব্যাংকসহ অন্যান্য বিদেশি ব্যাংকে বাংলাদেশের ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা কোনো সত্ত¡াকে, কত টাকা পাচার করেছে, পাচার করা টাকা ফিরিয়ে আনতে এবং পাচারকারীদের বিরুদ্ধে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, সে তথ্য জানতে চাওয়া হয়।
এ মামলায় ১৪ নম্বর বিবাদী ছিলেন পুলিশের মহাপরিদর্শক। এ আদেশ অনুসারে সিআইডির দেওয়া এসব তথ্য পুলিশ মহাপরিদর্শকের পক্ষে গত বছরের ১২ জুলাই অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়ে জমা দেওয়া হয়। এছাড়া দুই পর্বে গত ৫ ডিসেম্বর এবং ৩০ জানুয়ারি প্রতিবেদন দাখিল করে দুদক। বিএফআইউ এবং বাংলাদেশ ব্যাংকও ৩০ জানুয়ারি প্রতিবেদন দাখিল করেছেন। এতে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নাম ওঠে আসে।
কয়েকজন বাংলাদেশি নাগরিক ও বিভিন্ন কোম্পানির পাচারের মাধ্যমে বিদেশি ব্যাংকগুলো বিশেষত সুইস ব্যাংকে গোপনে জমা রাখা বিপুল অর্থ উদ্ধারে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে নির্দেশনা চেয়ে ২০২১ সালে হাইকোর্টে একটি রিট করেন দুই আইনজীবী। এর প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ওই বছরের ২৮ ফেব্রæয়ারি হাইকোর্টের বিচারপতি নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি মহি উদ্দিন শামীমের সমন্বয়ে গঠিত বে রুলসহ আদেশ দেন। #