দূরবীণ নিউজ ডেস্ক:
রাজধানী ঢাকা থেকে শুরু করে গ্রামাঞ্চলেও এখন প্রায় প্রতি ঘরে ঘরে হাঁটুর ব্যাথা রোগী। আগে ৪০ বছর বয়স পর শুরু হত। শুধুমাত্র মেয়েদেরই যে হাঁটুব্যথা হয় এমন নয়।
ছেলে-মেয়ে নির্বিশেষেই এই সমস্যা আসছে। তবে ৫০ এর উপর বয়স হলে মেয়েদের ক্ষেত্রে একটু বেশি হয়। হাঁটু ব্যথা থাকলে কখনই মাটিতে বসার চেষ্টা করবেন না। এখন ওয়ার্ক ফ্রম হোমের দৌলতে ২৫ বছর বয়স থেকেই শুরু হয়ে যাচ্ছে হাঁটুর ব্যথা।
হাঁটু ভাঁজ করে বসতে কিংবা চলতে ফিরতে খুবই সমস্যা হয়। আর বয়স হলে তো এমনিই সমস্যা হয়। হাঁটু ক্ষয়ে যাওয়ার প্রবণতা দেখা যায়। ফলে হাঁটতে বা সিঁড়ি ভাঙতে বেশ অসুবিধে হয়। তবে এই হাঁটু ব্যাথার বেশ কিছু কারণ রয়েছে। যেমন-
অনেকেরই জন্মগত কারণে পায়ে নানারকম অসুবিধে থাকে। এরপর কোনও কারণে সংক্রমণ হলে, চোট লাগলে বা আঘাত লাগলে সেখান থেকে ব্যথা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আবার আথ্রারাইটিস হলে কিংবা যদি কোনও কারণে টিউমার হয় সেখান থেকেও হাঁটুতে ব্যথা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
এছাড়াও অনেক সময় অস্টিয়ো আথ্রারাইটিসের ফলে হাড় এতটাই ক্ষয়িষ্ণু হয়ে যায় যে সামান্য ধাক্কাতেও ভেঙে যেতে পারে। সেই অবস্থাকে অস্টিয়োপোরোসিস বলে। পরে সেখান থেকে পায়ের পাতা ফোলা, হাঁটতে না পারা এসব অনেক সমস্যাই আসে।
এখন অনেকেই দীর্ঘক্ষণ বসে কাজ করছেন। আর এক জায়গায় এতক্ষণ বসে থাকার ফলে সেখান থেকে বেশ কিছু সমস্যা আসছে। ঘাড়, কোমরের সমস্যা তো আসছেই। এছাড়াও হাঁটু ক্ষয়ে যাচ্ছে, দীর্ঘক্ষণ বসে থাকার ফলে। হাঁটুর সাধারণ সংকোচন-প্রসারণ ক্ষমতাও নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আর ব্যথা বাড়লেই সেই প্রভাব পড়ে দৈনন্দিন জীবনে। সেখান থেকে হঠাৎ করে পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনাও থেকে যায়। আর হাঁটু ব্যথা হলে সাধারণ চলাফেরা কমে যায়। তখন খুব সহজেই ওজন বেড়ে যায়।
নিয়মিত ফিজিও থেরাপি, ওষুধের পরও যদি এই ব্যথা না কমে তাহলে তখন সার্জারির কথা ভাবতে হবে। তবে সার্জারির আগেও মেনে চলতে হবে বেশ কিছু নিয়ম। সবার আগে ওজন কমাতেই হবে।
এছাড়াও কোনও রকম সংক্রমণ, ঠান্ডা লেগে যাওয়া এসব থেকে দূরে থাকতে হবে। শীত-গ্রীষ্ম হোক বা বর্ষা স্নান করতে হবে গরম জলেই। আর হাঁটু অপারেশনের পর চিকিৎসকের পরামর্শ মতো ব্যায়াম, বরফ সেঁক এসবও করে যেতে হবে। বাড়িতে বিশ্রামে থাকতে হবে। সিঁড়ি ভাঙা চলবে না। লাঠি নিয়ে আস্তে আস্তে হাঁটা অভ্যেস করতে হবে।
শীত কিন্তু পড়তে শুরু করেছে। বাতাসে হিমেল স্পর্শ। সেই সঙ্গে পুজোর মধ্যে বেশ পরিশ্রম হয়েছে। একটু বেশিই হাঁটাচলা হয়েছে। দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকেছেন। সব মিলিয়ে এখন হাঁটু ফুলে গিয়েছে। উঠতে বসতে কষ্ট হচ্ছে। এই অবস্থায় মেনে চলুন কিছু ঘরোয়া টোটকা।
তিন থেকে চার টুকরা বরফ তোয়ালেতে জড়িয়ে হাঁটুর ঠিক যে জায়গায় ব্যথা হচ্ছে, সেখানে ১০ থেকে ১৫ মিনিট চেপে ধরে রাখুন। এতে অনেকসময় ব্যথা কমে যায়। তবে খুব বেশি বরফ সেঁক দেবেন না। ঠান্ডা লেগে যেতে পারে।
কোনও রকম গরম কিছু মালিশ করবেন না। অনেকেই তেল গরম করে মালিশ করেন। এটি কিন্তু চিকিৎসকরা সব সময় বারণ করেন। খুব বেশি হলে ঠান্ডা জল-গরম জলে পা ডোবাতে পারেন। হট ওয়াটার ব্যাগ ব্যবহার করতে পারেন।
৩ থেকে ৪ চামচ অলিভ অয়েল গরম করে ব্যথার জায়গায় আলতো হাতে ১০ থেকে ১৫ মিনিট মালিশ করুন। দিনে দুই থেকে তিনবার এটা করলে ব্যথা অনেকটা কমে যাবে। দুধের সঙ্গে একচামচ আমন্ড বাদাম কুচি, আখরোট কুচি আর হলুদ দিয়ে ফুটিয়ে খান। বেশ কয়েকদিন এইভাবে খেলে হাঁটুর ব্যথা কমে।
যে কোনও ব্যাথার ক্ষেত্রে রসুন খুব ভালো। তাই সকালে খালিপেটে রসুন-মধু খান। কিংবা তরকারিতে বেশি রসুন দিন। এছাড়াও রসুন ভাজাও ভাত দিয়ে খেতে পারেন। আদাও কিন্তু ব্যথার জন্য ভালো। শুকনো মুড়ি খেলে সঙ্গে আদা খান। কিংবা আদা দিয়ে চান খান।
নিয়মিত ব্যায়াম করতেই হবে। হাঁটুতে লাগবে এরকম জটিল ব্যায়াম করবেন না। বাড়ির বাইরে বেরনোর আগে অবশ্যই নিকাপ ব্যবহার করবেন। প্রতিদিন টানা ১৫ মিনিট হলেও হাঁটুন। হালকা ব্যায়াম করুন। দেখবেন অনেক সুস্থ থাকছেন।
আর সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ হল ওজন। কোনও মতেই ওজন বাড়তে দেবেন না। সঠিক ডায়েট করে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন। ওজন বাড়লেই সমস্যা বাড়বে। প্রয়োজনের তুলনায় ৫ কেজি ওজন বাড়লেই কিন্তু নানা শারীরিক সমস্যা আসবে। # সূত্র: এই সময়