দূরবীণ নিউজ প্রতিবেদক:
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপােরেশনের (ডিএসসিসি) সাবেক মেয়র সাঈদ খোকনের বক্তব্যকে মানহানিকর উল্লেখ করে এ বিষয়ে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন ডিএসসিসির বর্তমান মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস।
সোমবার (১১ জানুয়ারি ) সকালে নগরীর ৭ নং ওয়ার্ডের মানিকনগর স্লুইস গেইট ও ৮ নং ওয়ার্ডের গোপীবাগস্থ টিটি পাড়া সেগুনবাগিচা বক্স কালভার্ট এর গোপী পাড়াস্থ টিটিপাড়া আউটলেটে চলমান বর্জ্য অপসারণ কার্যক্রম পরিদর্শন শেষে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এ মন্তব্য করেন ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস এই ঘোষণা দেন। সাবেক মেয়র গত ৯ জানুয়ারি বর্তমান মেয়র তাপসের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলেছেন।
১৭ মে দায়িত্বভার গ্রহণের পর থেকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান আরম্ভ করেছি এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান চলমান রয়েছে উল্লেখ করে ডিএসসিসি মেয়র ব্যারিস্টার শেখ তাপস আরও বলেন, আপনারা লক্ষ্য করেছেন, মার্কেট সংক্রান্ত কিছু তথ্য বেরিয়ে এসেছে। সংবাদকর্মীরা – আপনারাই সেগুলো অনুসন্ধান করে বের করেছেন। সেখানে বিভিন্নভাবে টাকা লেনদেন হয়েছে।
যাদের সাথে টাকা লেনদেন হয়েছে, যারা লেনদেন করেছেন, তারাই অভিযোগ এনেছেন। আমরা ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে অথবা আমি ব্যক্তিগতভাবে কোনভাবেই কোন অভিযোগ আনি নাই। সেখানে যারা লেনদেন করেছে, যারা ব্যবসায়ী দোকানদার অবৈধভাবে সেই জায়গাগুলো দখলে ছিল, তারা অর্থ লেনদেন করেছেন। এখন তিনি পুরো দোষ আমার উপর চাপানোর চেষ্টা করছে। সেটা আমি মনে করি খুবই অনভিপ্রেত। সেটা শুধুমাত্র ব্যক্তিগত আক্রোশের বশবর্তী হয়ে তিনি এই বিষয়গুলো তুলে ধরছেন।
আপনার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করেছে সেজন্য মানহানি মামলা করবেন কিনা – এমন প্রশ্নের জবাবে ডিএসসিসি মেয়র ব্যারিস্টার শেখ তাপস বলেন, হ্যাঁ, অবশ্যই। তিনি অবশ্যই মানহানিকর বক্তব্য দিয়েছেন। আমি তার বক্তব্য শুনে অবাক হয়েছি। তিনি নিজেকে চুনোপুটি দুর্নীতিবাজ হিসেবে স্বীকার করেছেন। আর আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন। আমার বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রেক্ষিতে – অবশ্যই এটা মানহানিকর হয়েছে। আমি এ ব্যাপারে ব্যবস্থা অবশ্যই নিতে পারি।
আইনি ব্যবস্থা নিচ্ছেন কিনা, এই প্রশ্নে ডিএসসিসি মেয়র ব্যারিস্টার শেখ তাপস বলেন, মানহানির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে তো আইনি ব্যবস্থাই নিতে হবে।
ডিএসসিসি মেয়র ব্যারিস্টার শেখ তাপস এ সময় আরও বলেন, দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের এলাকায় ঢাকায় যেসব খাল, বক্স কালভার্ট রয়েছে – সেগুলো হস্তান্তর প্রক্রিয়া আরম্ভ হয়েছে এবং চলমান রয়েছে। সেই প্রেক্ষিতে, গত পহেলা জানুয়ারি থেকেই আমাদের খালগুলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করাসহ কালভার্টগুলো থেকে বর্জ্য অপসারণ কার্যক্রম আরম্ভ করেছি।
আজকে আমরা মানিকনগর টিটি পাড়া এলাকা পরিদর্শনে এসেছি, গণমাধ্যমকর্মীরা লক্ষ্য করেছেন – কি অবস্থা বিরাজমান আছে?এটা বিশাল একটা কর্মযজ্ঞ। যতটুকু অনুধাবন করতে পেরেছি, যে ধ্যান ধারণা ছিল – তারচেয়ে সম্পূর্ণ ভিন্ন।
এখানে দীর্ঘদিন ধরে কোনো কাজই হয়নি। সব জায়গায় শুধু বদ্ধই না, স্তুপই না – শক্ত পলিমাটি জমে গেছে। সুতরাং এটা একটা বিশাল কর্মযজ্ঞ। তারপরও আমরা পরিকল্পনা নেব, কর্মপরিকল্পনা ঠিক করব। আমরা এরই মাঝে এই পহেলা জানুয়ারি থেকে আরম্ভ করেছি, আগামী মার্চ মাসের মধ্যে যাতে এসব জায়গায় পানি প্রবাহ এবং পানি নিষ্কাশনের কিছু ব্যবস্থা করা যায়, এই লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে আমরা এগিয়ে চলেছি। বিশাল কর্মযজ্ঞ, তবুও আমাদের দৃঢ়তা রয়েছে, ইনশাআল্লাহ – আগামী বর্ষা মৌসুমে আমরা ঢাকাবাসীকে কিছুটা হলেও সুফল দিতে পারব।
ডিএসসিসি মেয়র এ সময় আক্ষেপ করে বলেন, এর আগে বিভিন্ন ধারণা দেয়া হলেও আসলে সত্যিকার অর্থে গত কয়েক বছর ধরেই এখানে কোনো কাজ হয়নি। বক্স কালভার্টগুলো ও পরিষ্কার করা হয়নি এবং খালগুলোও পরিষ্কার করা হয়নি। যার কারণে দীর্ঘদিনের পুঞ্জিভূত সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করেছে।
সুতরাং আমাদের এখনকার যে কাজটা – এটা আমাদের জন্য অত্যন্ত জটিল, অত্যন্ত দুরূহ। তারপরও আমরা আরম্ভ করেছি। আমরা যদি এটা সফলভাবে করতে পারি, তাহলে ভবিষ্যতে কাজগুলো আরো শৃঙ্খলার মধ্যে আসবে, ব্যবস্থাপনার মধ্যে আসবে। সুফলগুলো আমরা ঢাকাবাসীকে দিতে পারব।
এখন যে পরিস্থিতিতে আছে তাতে জলাবদ্ধতা আরো বেশি হওয়ার কথা। তারপরও কিভাবে আমরা টিকে আছি তা অবাক কাণ্ড উল্লেখ করে ডিএসসিসি মেয়র আরও বলেন, আপনারা নিজেরা দেখেছেন, এখানে পানি প্রবাহের কোন ব্যবস্থাই নাই। পানি যে আসবে, তারপরই তো পাম্প হাউজ ব্যবহার হবে। পাম্প হাউস দিয়ে পানিটা আবার নিষ্কাশন হবে।
এরপর মান্ডা ও জিরানি খাল দিয়ে প্রবাহিত হবে। কিন্তু পানি আসার কোনো উপায় নেই। কারণ পুরোটাই বদ্ধ। আমাদের এখন বিশাল কর্মযজ্ঞ করতে হচ্ছে। পুরো বক্স কালভার্ট – এখান থেকে সেগুনবাগিচা পর্যন্ত পুরো কালভার্টটা পরিষ্কার করতে হবে। আপনারা অনুধাবন করতে পারছেন, এটা কতটা দুরূহ কাজ।
পরে ডিএসসিসি মেয়র জিরানি খালের ত্রিমোহনী অংশে চলমান বর্জ্য অপসারণ, চ্যানেল পরিষ্কার ও উচ্ছেদ কার্যক্রম পরিদর্শন করে বিভিন্ন দিক নির্দেশনা দেন।
এ সময় অন্যান্যের মধ্যে ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী, প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা এয়ার কমডোর মোঃ বদরুল আমিন, প্রধান প্রকৌশলী রেজাউর রহমান, সচিব আকরামুজ্জামান, প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা রাসেল সাবরিনসহ কর্পোরেশনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ এবং স্থানীয় কাউন্সিলরবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। / প্রেস বিজ্ঞপ্তি।