দূরবীণ নিউজ প্রতিবেদন:
এবার সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এসকে সিনহা) সিনহার বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জন ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে প্লট বরাদ্দের অভিযোগে মামলা দায়ের করেছে দুনীতি দমন কমিশন (দুদক)।
আজ বৃহস্পতিবার (৭ অক্টোবর) দুদকের উপপরিচালক মো. গুলশান আনোয়ার প্রধান বাদী হয়ে কমিশনের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে (ঢাকা-১) মামলাটি করেন।
দুদকের মামলায় এসকে সিনহার বিরুদ্ধে ৭ কোটি ১৪ লাখ ৫ হাজার ৮৬৫ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন এবং মানিলন্ডারিংয়ের অভিযোগ আনা হয়েছে। আজ বিকেলে দুদক সচিব ড. মু. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার সাংবাদিকদের এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে এসকে সিনহাসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে ঋণ জালিয়াতির পৃথক আরেকটি মামলা করে দুদক। এ মামলাটির বিচার শেষ পর্যায়ে। ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪ এ মামলাটি বিচারাধীন। আগামী ২১ অক্টোবর এ মামলার রায় ঘোষণার জন্য দিন ধার্য রয়েছে।
অবৈধ সম্পদের মামলার এজাহারে বলা হয়, এসকে সিনহা নিজ নামে ইতোপূর্বে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) হতে উত্তরা আবাসিক এলাকায় একটি প্লট বরাদ্ধ প্রাপ্ত হন। পরবর্তীতে তিনি অসৎ উদ্দেশ্যে নিজ ক্ষমতা অপব্যবহার করে অবৈধ প্রভাব খাটিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে তার ভাই নরেন্দ্র কুমার সিনহার নামে রাজউক পূর্বাচল প্রকল্পে প্লটের জন্য আবেদন করান এবং ৩ কাঠার একটি প্লট বরাদ্ধ করান।
এরপর প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা ওই সময় ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে ওই ৩ কাঠার প্লটটিকে ৫ কাঠার প্লটে উন্নীত করান। এরপর পুনরায় ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে পূর্বাচল থেকে প্লট স্থানান্তর করে উত্তরার প্লটটি (উত্তরার সেক্টর-৪, রোড নং-৬, বাড়ী নং-১/এ) রাজউক থেকে অনুমোদন করান। এসকে সিনহা নিজেই ওই প্লটের যাবতীয় অর্থ পরিশোধ করেন।
তিনি নিজের ভাই নরেন্দ্র কুমার সিনহার নামে প্লট বরাদ্ধ প্রাপ্তির পর ওই প্লটের পাওয়ার অব এর্টনি নিয়োগ করেন জনৈক শংখজিৎ সিংহকে। যিনি এসকে সিনহার গ্রামের আত্মীয়।
সংখজিৎ সিংহকে চাকুরীর প্রলোভন দেখিয়ে এ কাজে নিয়োজিত করান এবং তাকে বাড়ী নির্মাণ কাজের যাবতীয় কার্যাদি সম্পাদনের জন্য নিয়োজিত রাখেন। ওই প্লটে ৯তলা ভবন নির্মাণের জন্য এসকে সিনহা তার বড় ভাই নরেন্দ্র কুমার সিনহা ও সংখজিৎ সিংহের যৌথ নামে শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের উত্তরা শাখায় হিসাব (হিসাব নং-৪০০৮১২১৪৯০৪২) খোলেন।
হিসাবটি সংখজিতের একক স্বাক্ষরে পরিচালিত হয়। ২০১৬ সালের ২৮ নভেম্বর এসকে সিনহা তার নিজ নামের সোনালী ব্যাংকের সুপ্রিম কোর্ট শাখার হিসাব থেকে (হিসাব নং- ৪৪৩৫৪৩৪০০৪৪৭৫) দুই চেকে এক কোটি ৪৯ লাখ ছয় হাজার এবং ৭৪ লাখ ৫৩ হাজার টাকা ওই যৌথ হিসাবে স্থানান্তর করেন।
এজাহারে আরও বলা হয়, এসকে সিনহার আয়কর নথিতে উত্তরা আবাসিক এলাকায় নির্মানাধীন ওই বাড়ীটি প্রদর্শন করেছেন। বাড়ি নির্মাণের আয়ের উৎস হিসেবে জনৈক খালেদা নামীয় মহিলার কাছে ফ্ল্যাট বিক্রির অগ্রীম বাবদ চার কোটি ৪০ লাখ টাকা, তার ভাই সুরেন্দ্র কুমার সিনহার কাছ থেকে ফ্ল্যাট বিক্রি বাবদ এক কোটি ৪৯ লাখ ছয় হাজার টাকা এসকে সিনহার মেয়ে সুচনা সিনহার কাছ থেকে ৭৪ লাখ ৫৩ হাজার টাকা এবং ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছেন ৮৯ লাখ ৮১ হাজার ৭১১ টাকা নিয়েছেন বলে দেখানো হয়েছে। তবে দুদকের অনুসন্ধানে ওই মহিলা কোনো টাকা দেননি বলে প্রমাণিত হয়।
অর্থাৎ আসামি এসকে সিনহা অসৎ উদ্দেশ্যে নিজ ক্ষমতার অপব্যবহার পূর্বক প্রতারণার মাধ্যমে নিজের ভাই ও আত্মীয়ের নামে ৭ কোটি ১৪ লাখ ৫ হাজার ৮৬৫ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন এবং তা অর্জনের ক্ষেত্রে অবৈধ পন্থায় বিভিন্ন ব্যক্তির হিসাবের মাধ্যমে স্থানান্তর, রুপান্তর ও হস্তান্তর করেন।
দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৭ (১) ধারা, ১৯৪৭ সনের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারা এবং মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪ (২), (৩) ধারায় মামলাটি করা হয়েছে। #