দূরবীণ নিউজ ডেস্ক :
পরিবেশ রক্ষায় সরকারি সংস্থাগুলোর আরো যত্নবান হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ ।তিনি বলেছেন, দেশের বিভিন্ন এলাকায় অনেক সরকারি প্রতিষ্ঠান পরিবেশ রক্ষার বিষয়টি খেয়াল রাখে না।
শনিবার (১১ জানুয়ারি) চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) ইনস্টিটিউট অব ফরেস্ট্রি এন্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স এর পুণর্মিলনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) এর মতো একটি প্রতিষ্ঠান যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের নামে রাস্তা বানাতে গিয়ে আজ থেকে দেড়-দুই বছর আগে এশিয়ান উইমেন ইউনিভার্সিটির পাশে ৩০০ ফুট পাহাড় কেটে সমতল করে ফেলেছে। এটি আমাকে প্রচণ্ড পীড়া দিয়েছে।
যেভাবে পাহাড় কেটে সেখানে রাস্তা করেছে, এটি কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। চট্টগ্রাম শহরের সৌন্দর্য হচ্ছে পাহাড়। সেই পাহাড়কে সংরক্ষণ করে, পাহাড়কে বজায় রেখে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড করা যায়।
তথ্যমন্ত্রী চট্টগ্রামে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড করার সময় পরিবেশ রক্ষার বিষয়টি ভাবার অনুরোধ জানিয়ে বলেন , ভবন বানাতে গিয়ে, উন্নয়ন কর্মকাণ্ড করতে গিয়ে যেন এই পরিবেশ-প্রকৃতি নষ্ট না হয়, এই নান্দনিকতা যেন হারিয়ে না যায়। সেটি মাথায় রাখতে হবে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর শিরীণ আখতারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে সেনাবাহিনীর ২৪ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল এস. এম. মতিউর রহমান, নেদারল্যান্ডে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত শেখ মোহাম্মদ বেলাল, চবি ইনস্টিটিউট অব ফরেস্ট্রি এন্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সের জ্যেষ্ঠ শিক্ষক প্রফেসর গিয়াস উদ্দিন, ফরেস্ট্রি’র এলামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর ড. জসিম উদ্দিন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
দেশে বনের বাইরে ও ভেতরে গাছের সংখ্যা বেড়েছে জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, আজ থেকে ১১-১২ বছর আগে বাংলাদেশের বৃক্ষাআচ্ছাদিত এলাকার পরিমাণ ছিল ১৯ শতাংশের নিচে, এখন সেটি ২৪ শতাংশের বেশী।
মানুষ বেড়েছে গত ১১ বছরে, মানুষের জন্য নতুন বসতি নির্মাণ করতে হয়েছে, শহরগুলোর আকার বেড়েছে, একইসাথে অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয়েছে, দুই লেনের রাস্তা চার লেন হয়েছে, শিল্পায়ন হয়েছে, এরপরও বৃক্ষাআচ্ছাদিত এলাকার পরিমাণ বেড়েছে। এর কারণ হচ্ছে, মানুষের মধ্যে গাছ লাগানোর চেতনা জাগ্রত হয়েছে। আগে আমাদের বনভূমিতেই শুধু গাছ ছিল। এখন দেখা যায়, বনভুমির বাইরেও লোকালয়ে প্রচুর গাছ আছে, লাগানো হচ্ছে।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, পৃথিবীর সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ একটি ছোট্ট দেশ বাংলাদেশ। প্রতি বর্গকিলোমিটারে ১১শ’র বেশী মানুষের বসবাস। মাথাপিছু কৃষি জমির পরিমাণ পৃথিবীতে সর্বনিন্ম। এরপরও বাংলাদেশ পৃথিবীকে অবাক করে দিয়ে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। বাংলাদেশ আজকে বিশ্ব খাদ্য সংস্থার কাছে একটি কেস স্টাডি।
কিভাবে পৃথিবীর ঘনবসতিপূর্ণ একটি দেশ, যে দেশে মাথাপিছু জমির পরিমাণ পৃথিবীতে সর্বনিন্ম , ঝড়-বন্যা, জলোচ্ছ্বাস যে দেশের নিত্য সঙ্গী। জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত যেখানে দৃশ্যমান, বিদ্যমান, সেই দেশ কিভাবে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হল, এটি আজকে বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে, বিশ্ব খাদ্য সংস্থার কাছে বড় বিস্ময়, একটি কেস স্টাডি। এটি সম্ভব হয়েছে, আমাদের দেশ ছোট হলেও উর্বর দেশ। এখানে বায়ো ডাইভারসিটি এত ব্যাপক, এত প্রাচুর্যময়, সেই কারণে এটি সম্ভবপর হয়েছে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে গাছ লাগানোর প্রস্তাব দিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, আমার তিন সন্তানের মধ্যে দ্ইু সন্তানের জন্ম হয়েছে বেলজিয়ামে। জন্মের কয়েকদিন পর আমরা পৌর কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে চিঠি পেলাম, সেখানে লেখা তোমাদের সন্তানদের নিয়ে অমুক দিন অমুক জায়গায় হাজির হতে হবে।
সেখানে একটি গাছ লাগানো হবে এবং একটি নেমপ্লেট দেয়া হবে। সেই গাছটি থেকে যাবে, নেমপ্লেটটিও থেকে যাবে। অর্থ্যাৎ প্রতি সন্তান জন্মলাভের পর সেখানে সন্তানের নামে একটি গাছ লাগানো হয়। সেই গাছটি থেকে যাই। সেটি কাটা হয় না। সে যখন বড় হয়, তখন সে নেমপ্লেট থাকায় গাছটাকে খুঁজে পায়।
‘আমি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়কে অনুরোধ জানাবো, ফরেস্টি ডিপার্টমেন্ট সেক্ষেত্রে সহায়তা করতে পারে, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে যত নবজাতকের জন্ম হবে, তাদের নামে যেন একটি করে গাছ লাগানো হয়, সেজন্য একটি এলাকাকে নির্ধারণ করে দেয়া হয়। এটি যদি আপনারা করেন, আপনারা বাংলাদেশে প্রথম কর্তৃপক্ষ হবেন, এই কাজটি করার ক্ষেত্রে। অনেকেই চাইলেও এই কাজটি করতে পারবে না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চাইলেও পারবে না, কারণ তাদের গাছ লাগানোর জায়গা নেই।’
ড. হাছান মাহমুদ বলেন, অস্ট্রেলিয়া ও আফ্রিকার কোন কোন জায়গায় এখন দাবানল ও খরতাপ দেখা যাচ্ছে। পাকিস্তানের মত জায়গায় হচ্ছে বন্যা। এটি হচ্ছে পৃথিবীর মাত্র এক ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বাড়ার কারণে। মানুষ যেভাবে নির্বিচারে কার্বন নিঃসরণ ঘটাচ্ছে, প্যারিস চুক্তিতে বিভিন্ন দেশ যে প্রতিশ্রুতিগুলো দিয়েছে, সেই প্রতিশ্রুতিগুলো যদি পুরোপুরি বাস্তবায়নও হয়, পৃথিবীর তাপমাত্রা সাড়ে ৩ থেকে ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়বে।
এক ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বাড়ার কারণে যেখানে ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখোমুখি আমরা দাঁড়িয়েছি। সেখানে তাপমাত্রা সাড়ে ৩ থেকে ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়লে কী পরিস্থিতি দাঁড়াবে সেটি অনুমান করাও কঠিন।
জলবায়ু পরিবর্তন বাংলাদেশের জন্য হুমকি নয় মন্তব্য করে হাছান মাহমুদ বলেন, আমরা ইতিমধ্যে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট দুর্যোগের মোকাবেলা করছি। জলবায়ু পরিবর্তন এখানে বাস্তবতা, হুমকি নয়। এখানে আসবে তা নয়, এটা এসে গেছে। যখন আগ্রাবাদে আবাসিক এলাকা গড়ে তোলা হয়, তখন উচ্চ মধ্যবিত্ত সবাই সেখানে প্লট নিয়েছে, এখন তারা সেখান থেকে পালিয়ে যাচ্ছে।
কারণ বর্ষাকালে জোয়ারের পানি সেখানে সবসময় আসে। চট্টগ্রাম শহরে আমার পৈত্রিক বাড়ি আশির দশকে আমার বাবা তৈরি করেন। সেখানে কখনো দেখিনি পানি আসে। প্রায় ১৫ বছর আগে বাড়ির অভ্যন্তরে ড্রেনের মধ্যে দেখি জোয়ারের পানি আটকে আছে। এর আগে কখনো দেখিনি জোয়ারের পানি বাসা পর্যন্ত চলে আসতে। জোয়ার-ভাটার পানি যেভাবে চট্টগ্রাম শহরের বিভিন্ন জায়গায় এখন আসছে, এটি আগে ছিল না। #