দূূরবীণ নিউজ প্রতিবেদক :
বিপুল পরিমান স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ অর্জনের অভিযোগে সমবায় অধিদপ্তরের উপ-নিবন্ধক মুহাম্মাদ গালীব খান এবং তার স্ত্রী ইষ্টান ব্যাংক লিমিটেরেডর ভাইস প্রেসিডেন্ট (ভিপি) তানিয়া সুলতানা রাখির বিরুদ্ধে পৃথক দুই মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক)। দুদকের উপ-পরিচালক ও অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা শাহীন আরা মমতাজ বাদী হয়ে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে গত ১২ অক্টোবর মামলা দুটি দায়ের করেন।
দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১ এ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে দুদক আইন ২০০৪ সালের ২৭ (১) ধারায় মামলা দুইটি রেকর্ড করা হয়েছে। এর আগে কমিশনের পক্ষ থেকে ২৮ সেপ্টেম্বর অফিস আদেশে অভিযুক্ত সমবায় অধিদপ্তরের উপ-নিবন্ধক মুহাম্মাদ গালীব খান এবং তার স্ত্রী ইষ্টান ব্যাংক লিমিটেরেডর ভাইস প্রেসিডেন্ট তানিয়া সুলতানা রাখির বিরুদ্ধে পৃথক দুইটি মামলা দায়েরের অনুমোদন দেওয়া হয়।
গণমাধ্যমকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন দুদকের জনসংযোগ বিভাগ। দুদকের মামলায় উল্লেখ্য রয়েছে, অভিযুক্ত মুহাম্মাদ গালীব খানের রাজধানীর খিলগাঁওয়ে ফ্ল্যাট, জমি, ফরিদপুরের বিভিন্ন জায়গায় প্রায় ২৫৪ শতাংশ জমি, বসুন্ধরা রিভারভিউ প্রকল্পে প্লট, ধানমন্ডিতে ফ্ল্যাট। শেয়ারবাজারে কোটি টাকা বিনিয়োগ এবং বিভিন্ন ব্যাংকে কয়েক কোটি টাকা এফডিআর ও সঞ্চয়। এছাড়াও তাদের নামে গাড়ি-বাড়ির পাশাপাশি ব্যাংকে আরও কয়েক কোটি টাকার সম্পদের তথ্য বেরিয়ে আসছে।
সূত্র মতে, দুদকের প্রাথমিক অনুসন্ধানে তানিয়া সুলতানা রাখির নামে ৭ কোটি ২৫ লাখ টাকার সম্পদ রয়েছে। এরমধ্যে দুই কোটি ৮৩ লাখ ২৫ হাজার ৫২০ টাকার সম্পদই অবৈধ।
অপরদিকে মোহাম্মদ গালীব খানের স্থাবর ও অস্থাবর মিলিয়ে প্রাথমিকভাবে মোট দুই কোটি ৭৬ লাখ টাকার সম্পদের তথ্য পেয়েছে দুদক। এরমধ্যে তার বিরুদ্ধে দুই কোটি ১৩ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদের অভিযোগ এনেছে দুদক। অর্থাৎ গালীব খানের সম্পদের বেশিরভাগই ‘অবৈধ’। ওই হিসাবে এই দম্পতির ৪ কোটি ৯৭ লাখ ২৪ হাজার ৭৩৩ টাকার অবৈধ সম্পদ রয়েছে।
দুদকের অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তারা যতই গভীরে যাচ্ছেন ততই অবাক হবার মতো চা ল্যকর তথ্য পাচ্ছেন মুহাম্মাদ গালীব খান এবং তার স্ত্রী তানিয়া সুলতানার বিরুদ্ধে। এরই মধ্যে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে পৃথক দুটি মামলা হয়েছে।
দুদকের কর্মকর্তা পেয়েছেন অভিযুক্ত তানিয়া সুলতানা রাখির দাখিল করা বক্তব্য তার সম্পদের রেকর্ডপত্র পর্যালোচনায় বেরিয়ে আসে (রাখির) নিজ নামে ফরিদপুরের বিভিন্ন জায়গায় প্রায় ২৫৪ শতাংশ জমি, খিলগাঁওয়ে ৩ দশমিক ৫০ কাঠা জমি, বসুন্ধরা রিভারভিউ প্রকল্পে সাড়ে তিন কাঠার প্লট এবং ধানমন্ডির ৭ নম্বরে অ্যালায়েন্স প্রপার্টিজ লিমিটেড থেকে কেনা একটি ফ্ল্যাট রয়েছে। সব মিলিয়ে দালিলিক হিসাবে এক কোটি ১ লাখ ৮০ হাজার টাকার স্থাবর সম্পদের তথ্য।
অপরদিকে রাখির নামে বিভিন্ন সময়ে চালু করা এফডিআর, পারিবারিক স য়পত্র, শেয়ারে বিনিয়োগ, নিজ নামে বিভিন্ন ব্যাংকে চালু করা সেভিংস ও চলতি অ্যাকাউন্টে টাকা জমা, গাড়ি কেনাসহ মোট ছয় কোটি ২৪ লাখ ১২ হাজার টাকার অস্থাবর সম্পদের তথ্য পাওয়া যায়। সব মিলিয়ে সাত কোটি ২৫ লাখ ৯৩ হাজার টাকার সম্পদের তথ্য পায় দুদক। এরমধ্যে চার কোটি ৪২ লাখ ৬৮ হাজার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের বৈধ উৎস পাওয়া গেলেও বাকি দুই কোটি ৮৩ লাখ ২৫ হাজার ৫২০ টাকার সম্পদের স্বপক্ষে কোনো বৈধ উৎস পাওয়া যায়নি।
এছাড়াও অভিযুক্ত মোহাম্দ গালীব খানের বিরুদ্ধে করা মামলার এজাহারে উল্লেখ রয়েছে, গালীব খানের নিজ নামে খিলগাঁওয়ের মেরাদিয়ায় ১৪১৬ বর্গফুটের ফ্ল্যাট ও ফরিদপুরে দুই যায়গায় ৬২ শতাংশ জমিসহ ৩৪ লাখ ৬৩ হাজার ৮০০ টাকায় স্থাবর সম্পদের তথ্য পাওয়া যায়। গালীবের নামে এফডিআর ও স য় হিসাবসহ মোট দুই কোটি ৪১ লাখ ৮৮ হাজার টাকার অস্থাবর সম্পদের তথ্য মেলে। স্থাবর ও অস্থাবর মিলিয়ে মোট দুই কোটি ৭৬ লাখ ৫২ হাজার টাকার সম্পদ রয়েছে। গালীব খানের শেয়ারে বিনিয়োগ পাওয়া যায় এক কোটি ২৩ লাখ ৫৭ হাজার টাকা। ওই টাকাসহ দুই কোটি ১৩ লাখ ৯৯ হাজার টাকা সম্পদের বৈধ কোনো উৎস পাওয়া যায়নি। তবে এই মামলার তদন্তে আরও অবৈধ সম্পদের চা ল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসার সম্ভাবনা রয়েছে বলে ধারনা দুদক কর্মকর্তাদের। #