নিজস্ব প্রতিবেদক
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বলেছেন, সংঘবদ্ধ ভূমিদস্যুদের কবল থেকে সরকারি খাল পুনরুদ্ধার করা হবেই। ইতোমধ্যে খাল পুনরুদ্ধার কাজে বাধা দিতে দীর্ঘদিনের ভূমিদস্যুরা একত্রিত হয়েছে। এ স্বত্বেও খালগুলো পুনরুদ্ধার করা হবে।
বুধবার (১৭ জুলাই) সকালে ৬৬ নম্বর ওয়ার্ডের সানারপাড় এলাকার ডগাইর খাল পরিদর্শন শেষে ঢাদসিক মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস এ প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
ঢাদসিক মেয়র ব্যারিস্টার শেখ তাপস বলেন, “দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে আমরা খালগুলো উদ্ধার, সংস্কার, সীমানা নির্ধারণ, গভীরতা বৃদ্ধির কার্যক্রম হাতে নিয়েছি। আমরা মান্ডা, জিরানি, শ্যামপুর ও কালুনগর খালের যে প্রকল্প সরকার থেকে পেয়েছি, সে খালগুলোতে এখন পূর্নরূপে সীমানা নির্ধারণ, হাঁটার পথ, গভীরতা বৃদ্ধি, নান্দনিক পরিবেশ সৃষ্টির কার্যক্রম শুরু হচ্ছে।”
তিনি বলেন,” দীর্ঘদিনের দখলদারেরা একত্রিত হয়েছে। খালগুলো যেন দখলমুক্ত করা না যায় সে অপচেষ্টায় তারা লিপ্ত। কিন্তু ঢাকা শহরের খালগুলোকে পুনরুদ্ধার করতে আমরা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। করপোরেশনের নতুন এলাকাসহ কুতুবখালি এলাকা থেকে শুরু করে ঢাকার বৃহৎ এলাকার বিপুল পরিমাণ পানি এই ডগাইর খাল দিয়ে নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদীতে নিষ্কাশিত হয়। এখানেও দখলদারেরা যত্রতত্র অবকাঠামো নির্মাণ করে খাল সংকীর্ণ ও খালের গভীরতা হ্রাস করেছে। আমরা এসব দখলমুক্ত করে খালের সীমানা নির্ধারণ করব ও খালের গভীরতা তিনগুন বৃদ্ধি করব।”
ঢাকা শহরকে জলাবদ্ধতা মুক্ত করতে দীর্ঘমেয়াদি উদ্যোগ গ্রহণ করার কথা জানিয়ে মেয়র শেখ তাপস বলেন, “শুক্রবার (৯ জুলাই) যে জলাবদ্ধতা হয়েছে তা আমরা পাম্প দিয়ে পানি নিষ্কাশনের মাধ্যমে ঢাকা শহরকে ১২ ঘন্টায় জলাবদ্ধতা মুক্ত করতে পেরেছি। কিন্তু এটি দীর্ঘস্থায়ী না। আমাদের আরো বিনিয়োগ করতে হবে। সব খালের অন্তর্জাল সৃষ্টি করতে হবে যাতে নিরবিচ্ছিন্নভাবে পানি প্রবাহ নিশ্চিত করা যায়।”
তিনি বলেন, ” আমাদের যে আধারগুলো আছে সেগুলোকে পুনরুদ্ধার করে পুনঃখনন করতে হবে, আয়তন তিন গুণ বৃদ্ধি করতে হবে। আমরা আগামী সোমবার জলাবদ্ধতা নিরসনে বিশেষজ্ঞ ব্যাক্তিবর্গকে নিয়ে একটি সেমিনার আয়োজন করেছি। আমরা তাদের পরামর্শ নিব। এছাড়াও ২০১৬ সালের ড্রেনেজ মাস্টারপ্লান কতটা বাস্তবায়নযোগ্য, সংশোধন প্রয়োজন হলে তা কিভাবে করা যায়, সে বিষয়েও চুলচেরা বিশ্লেষণ করে দীর্ঘমেয়াদি কার্যক্রম গ্রহণ করব। আমরা একটি দীর্ঘমেয়াদি কার্যক্রম হাতে নিতে চাই। যাতে করে ঢাকাবাসীকে সম্পূর্ণরূপে জলমগ্নতা ও জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি দেয়া যায়।”
হস্তান্তরের প্রক্রিয়ায় থাকা পানি উন্নয়ন বোর্ডের খালগুলো দ্রুত করপোরেশনের কাছে হস্তান্তরের তাগিদ দিয়ে মেয়র শেখ তাপস বলেন, “শনির আখড়া ও কাজলার সংলগ্ন এলাকার পানি নিষ্কাশিত হয়ে এখানে (ডগাইরে) একত্রিত হয়। তাই এই এলাকার জন্য আমাদেরকে দীর্ঘমেয়াদী ও পরিকল্পিত ব্যবস্থা নিতে হবে। কিন্তু এই এলাকায় একটি প্রকল্প (ডিএনডি বাঁধ) চলমান থাকার কারণে আমরা হাত দিতে পারছি না।”
তিনি বলেন, ” প্রকল্পটি অত্যন্ত ধীরগতিতে চলছে এবং আমি মনে করি, প্রকল্পটি পরিকল্পিতভাবে নেওয়া হয়নি। সেখানে খালকে সংকীর্ণ করা হচ্ছে যা পানি প্রবাহের জন্য পর্যাপ্ত নয়। ৩ ঘন্টায় কি পরিমাণ বৃষ্টির পানি জমে সেটি হিসাব করেই আমাদেরকে পানি প্রবাহের আধার ও অবকাঠামো নির্মাণ করতে হবে। একটা কিছু মাথায় আসলো আর সেটা নির্মাণ করে ফেললে তাতে দীর্ঘমেয়াদি সমাধান আসবে না। সেজন্য হস্তান্তর প্রক্রিয়ায় আটকে থাকা পানি উন্নয়ন বোর্ডের খালগুলো দ্রুত আমাদেরকে হস্তান্তর করা হোক। যাতে করে জলাবদ্ধতা নিরসনে আমরা সমন্বিত ও পরিকল্পিত কাজ করতে পারি।”
মেয়র এ সময় জনগণকে খালের মধ্য বর্জ্য না ফেলতে অনুরোধ করেন বলেন, এটি বন্ধ না করলে খালগুলো বাঁচানো যাবেনা। জলাবদ্ধতা নিরসন করা যাবে না।
এ সময় অন্যান্যের মধ্যে করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান, অঞ্চল-৮ এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সুজাউদ্দৌলা, সম্পত্তি কর্মকর্তা মো. মুনিরুজ্জামান, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. খায়রুল বাকের, প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ সিরাজুল ইসলাম, নির্বাহী প্রকৌশলী ড. মোহাম্মদ সফিউল্লাহ সিদ্দিক ভুঁইয়া ও হারুনুর রশিদ, নগর পরিকল্পনাবিদ মো. নজরুল ইসলাম, ৬৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আব্দুল মতিন সাউদ, সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর নিলুফার ইয়াসমিন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
/ কাশেম