দূরবীণ নিউজ প্রতিবেদক :
বাংলাদেশের কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতর করোনাভাইরাসের এই প্রাদুর্ভাবের সময়ে যেসব কারখানা মালিক শ্রমিকদের ছাঁটাই করছেন কিংবা ছাঁটাইয়ের পরিকল্পনা করছেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ জানিয়েছে। এই মর্মে বাংলাদেশের কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতর থেকে এই বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কয়েকটি মন্ত্রণালয় বরাবর একটি স্মারক চিঠি পাঠিয়েছে ।
গত মাসে দেশের রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক শিল্প কারখানাসহ প্রায় ১৬ হাজার ৮০০ কারখানা বন্ধ হয়ে যায়। এতে কর্মহীন হয়ে পড়েন ৩২ লাখ শ্রমিক।
এই বিপুল সংখ্যক শ্রমিককে লে অফ করে অর্থাৎ তাদের মূল বেতনের অর্ধেক পরিশোধ করে, তাদেরকে ছাঁটাই করে দেয়া হবে জানতে পেরেছেন অধিদফতরের মহাপরিদর্শক শিবনাথ রায়।
বর্তমান দুর্যোগপূর্ণ পরিস্থিতি বিবেচনায় এসব ছাঁটাই বন্ধ করতে তিনি সংশ্লিষ্ট কয়েকটি মন্ত্রণালয় নির্দেশনা চেয়ে এই চিঠি দেন। ওই চিঠিতে তিনি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণের অনুরোধ জানিয়েছেন।
শিবনাথ রায় বলেন, “বেশ কিছু কারখানা থেকে শ্রমিকদের ছাঁটাই করা হচ্ছে বা ছাঁটাই করা হবে এরকম বেশ কিছু তথ্য আমাদের কাছে এসেছে। এখন শ্রমিকরা কাল যোগদানের পরে যদি জানতে পারে তাদের ছাঁটাই করা হবে, তখন একটা বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে।”
“সামনে রোজা আর ঈদ আসছে। এ অবস্থায় শ্রমিক ছাঁটাই করা হলে তাদের জন্য জীবন ধারণ করা দুঃসাধ্য হয়ে পড়বে। তাই এ বিষয়টি আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানোর উদ্যোগ নিয়েছি,” বলেন শিবনাথ রায়।
প্রধানমন্ত্রীর ৩১ দফা নির্দেশনার ২২তম দফায় বলা হয়েছে যে, শিল্প মালিকরা শ্রমিকদের সাথে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে নিজেদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করে উৎপাদন অব্যাহত রাখতে পারবেন।
এদিকে, শ্রমিকদের ছাঁটাইয়ের এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন শ্রমিক নেতারা।
তাদের তথ্য মতে, এই ছুটির সময়ে গাজীপুর, টঙ্গি, উত্তরাসহ আরও বিভিন্ন এলাকার বেশ কয়েকটি কারখানায় হাজার হাজার শ্রমিক ছাঁটাই করা হয়েছে। এই বন্ধের মধ্যেই চাকরি হারিয়েছেন তিন হাজারের বেশি শ্রমিক।
আবার অনেক শ্রমিকদের জন্য লে-অফ ঘোষণা করা হয়েছে। অর্থাৎ শ্রমিকদের মূল বেতনের অর্ধেক দেয়া হবে।
অথচ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই সংকটকালীন সময়ে শ্রমিক কর্মচারীদের বেতন ভাতা পরিশোধের জন্য ৫০০০ কোটি টাকার আর্থিক প্রণোদনার প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন।
সরকারের বরাদ্দ এই অর্থ শ্রমিকদের বেতন-ভাতা বাবদ ব্যয় করা হবে কিনা সেটা নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেছেন এই শ্রমিক নেতারা।
এ অবস্থায় গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক জলি তালুকদার সরকারকে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জানান।
তিনি বলেন, “সরকার এই টাকা দিয়েছে শ্রমিকদের বেতন-ভাতা দেয়ার জন্য, কিন্তু মালিকরা এই টাকা নিজেদের ফান্ডে নিতে চাইছেন। আমরা কোন আস্থা পাচ্ছি না এই টাকা শ্রমিক পর্যন্ত পৌঁছাবে। কারণ এই টাকা থাকা সত্ত্বেও মালিকরা লে-অফের নোটিশ দিচ্ছে।”
এদিকে সরকার সাধারণ ছুটির সময়সীমা ৯ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়ালেও অধিকাংশ কারখানা পূর্ব ঘোষিত ৪ এপ্রিলের পরে আর ছুটি বাড়ায়নি।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণের এই সময়ে শ্রমিকদের নিরাপত্তা হুমকির মুখে ফেলা হচ্ছে বলেও ক্ষোভ প্রকাশ করেন জলি তালুকদার।
“মালিকরা সরকারি ছুটি অমান্য করে শ্রমিকদের দিয়ে জোর করে কাজ করাচ্ছে। দূর দূরান্ত থেকে পায়ে হেঁটে এই শ্রমিকদের কারখানায় আসতে হচ্ছে। এই শ্রমিকদের নিরাপত্তা কী?”
এদিকে গার্মেন্টস মালিকরা বলছেন, অনেক ক্রয় আদেশ বাতিল হয়ে যাওয়া এবং অর্ডার স্থগিত হওয়ার কারণে তারা কারখানা চালু রাখতে পারছেন না।
উৎপাদন সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তারা শ্রমিকদের ছাঁটাই করতে বাধ্য হচ্ছেন। তবে তার আগে সব শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধ করা হবে বলে জানান তারা। # সূত্র বিবিসি।