দূরবীণ নিউজ প্রতিবেদক :
উন্নয়ন পরিকল্পনার দর্শন ও প্রায়োগিকতায় মানুষের দারিদ্র্যকে পূঁজি করে শিল্প শ্রমিকদের জীবন বিপন্ন করে ব্যবসায়ীদের মুনাফা লাভের প্রবৃত্তির লাগাম টানবার মৌলিক দায়িত্বে রাষ্ট্রের নজদোরি ব্যর্থতার কারণেই এ ধরণের হত্যাকাণ্ড অব্যাহত হচ্ছে বলে বিআইপি’র সংলাপে বিশেষজ্ঞরা অভিমত ব্যক্ত করেছেন ।
আজ মঙ্গলবার ( ১৩ জুলাই) বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স এর উদ্যোগে অনলাইনে আয়োজিত “নারায়ণগঞ্জের কারখানায় অগ্নিকান্ডের দায় ও করণীয়” শীর্ষক পরিকল্পনা সংলাপে বিশেষজ্ঞরা উপরোক্ত মতামত প্রদান করেন।
বিশেষজ্ঞদের অভিমতে উল্লেখ করেছেন যে, ব্যক্তশিল্প-কারখানা নির্মাণে বিল্ডিং কোড ও ফায়ার কোড অনুসরণ না করা, রাজউকের বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনার নির্দেশিত ভূমি ব্যবহার প্রস্তাবনার সুস্পষ্ট ব্যত্যয় করা, ভবন ও অগ্নি নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিদ্যমান আইন ও বিধিমালার প্রয়োগের অভাব, অগ্নি মোকাবেলার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতির অভাব, কারখানা তদারকির সাথে সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থাসমূহের প্রকৃত নজরদারির অভাব- প্রভৃতি অনুষজ্ঞসমূহ নারায়ণগঞ্জের অগ্নিকাণ্ডের মূল কারণ যাকে হত্যাকাণ্ড বলে অভিহিত যায়।
উক্ত পরিকল্পনা সংলাপে আলোচক ছিলেন, বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সাবেক মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার আলী আহমেদ, সাবেক শ্রম সচিব মিকাইল শিপার, ইউএনডিপি বাংলাদেশের ন্যাশনাল কনসালটেন্ট এবং ডিজাস্টার রিস্ক রিডাকশন বিশেষজ্ঞ মোঃ আনিসুর রহমান, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের যন্ত্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. আশিকুর রহমান, নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের নগর পরিকল্পনাবিদ মোঃ মঈনুল ইসলাম, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) কর্তৃক প্রণীত ড্যাপে প্রকল্প পরিচালক পরিকল্পনাবিদ আশরাফুল ইসলাম, শিল্প স্থাপনা নকশাবিদ পরিকল্পনাবিদ স্থপতি মোহাম্মদ আমিমুল এহসান, বি.আই.পি.-র সহ-সভাপতি পরিকল্পনাবিদ মুহাম্মদ আরিফুল ইসলাম এবং যুগ্ম সম্পাদক পরিকল্পনাবিদ মোহাম্মদ রাসেল কবীর প্রমুখ।
বি.আই.পি.-র সাধারণ সম্পাদক পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান এর সঞ্চালনায় পরিকল্পনা সংলাপে সভাপতিত্ব করেন বি.আই.পি.-র সভাপতি পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক ড. আকতার মাহমুদ।
মূল বক্তব্য উপস্থাপনে বি.আই.পি. সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, ভবন নির্মাণে ত্রুটি এবং নির্মাণ ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত আদর্শ মান অনুসরণ না করা হলে এবং বিল্ডিং কোড ও ইমারত নির্মাণ বিধিমালার ব্যত্যয় ঘটলে, কোন ভবনই ঝুকিমুক্ত হতে পারে না।
নারয়ণগঞ্জের হাশেম ফুড কারখানাটিতে অগ্নি নিরাপত্তার আধুনিক কোন ব্যবস্থাপনাই ছিল না। ড. আদিল আরও বলেন, ঢাকা মহানগর এলাকায় বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনার ব্যত্যয় ঘটিয়ে অধিকাংশ শিল্প কারখানা গড়ে উঠেছে। কৃষি জমি কিংবা আবাসিক এলাকায় ন্যূনতম অবকাঠামো নিয়ে গড়ে উঠা এসকল কারখানাগুলো মৃত্যুকূপ হয়ে দেখা দিচ্ছে প্রতিনিয়ত।
নারায়ণগঞ্জের কারখানার অভ্যন্তরীণ পরিবেশ থেকে পরিলক্ষিত হয় যে, জরুরি বহির্গমনের জন্য বিল্ডিং কোড অনুযায়ী যেভাবে সিঁড়ি রাখার দরকার ছিল, তা এখানে ছিল না। অধ্যাপক আদিল আরও বলেন, নারায়ণগঞ্জের কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের পেছনে কারখানার অভ্যন্তরিণ অগ্নি মোকাবেলার প্রস্তুতির অভাব এবং প্রাতিষ্ঠানিক নজরদারি ও আইনের শাসনের অভাবই প্রধানত দায়ী।
অগ্নি নিরাপত্তা নিশ্চিতে শিল্প কারখানায় ফায়ার এলার্ম, ফায়ার এক্সটিংগুইশার, ফায়ার স্প্রিংকলার, স্মোক ও হিট ডিটেকশন, ফায়ার ডোর, ফায়ার লিফট, কম্পার্টমেন্টালাইজেশন, ভবনের আয়তন ও ব্যবহারকারীর সংখ্যা অনুপাতে পর্যাপ্ত সংখ্যক সিঁড়ি, জরুরি নির্গমন সিঁড়ি, ফায়ার লিফট, পর্যাপ্ত বারান্দা, ভবনের অভ্যন্তরে আলো ও বায়ু প্রবাহের অভিগম্যতা, ভবনের মধ্যবর্তী পর্যাপ্ত দূরত্ব, আন্ডারগ্রাউন্ড ওয়াটার রিজার্ভ, ফায়ার হাইড্রেন্ট, ফায়ার ফাইটিং পাম্প হাউজ, ওয়েট রাইজার, আগুন, তাপ ও ধোঁয়া মুক্ত এলাকা, ইমারজেন্সি লাইট এবং আধুনিক ফায়ার ফাইটিং উপকরণ নিশ্চিত করবার উপর জোর দেন অধ্যাপক আদিল।
বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স এর সাবেক মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার আলী আহমেদ খান ভবনের নিরাপত্তা নিয়ে বলেন, বিল্ডিং কোড, ফায়ার কোড এবং পরিকল্পনার অনুসরণ ছাড়া কোন ভবন তৈরি করা হলে তার ঝুঁকি থেকেই যায়।
অনেক জায়গায় বিল্ডিং কোড অনুসরণ করলেও ফায়ার কোড অনুসরণ করা হয় না, যার ফলে অগ্নিকান্ডের সময় রাস্তা না থাকার জন্য ফায়ার সার্ভিসের গাড়ী ঢুকতে পারে না। গার্মেন্টসের পাশাপাশি, দেশে যে সকল প্লাস্টিক, খাদ্য এবং বিভিন্ন প্রকার কারখানা রয়েছে সেখানে বিল্ডিং সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সরকারকে চাপ প্রয়োগ করতে হবে, যাতে মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয় এবং সেইসাথে জবাবদিহিতা ও নজরদারী বাড়ানোর মাধ্যমে এসব মানবসৃষ্ট দূর্যোগ মোকাবেলা করতে হবে।
সাবেক সচিব মিকাইল শিপার, নারায়ণগঞ্জের হাশেম কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় মালিক, কারখানার ব্যবস্থাপক এবং কারখানার নির্মাণ ও তদারকির সাথে সংশ্লিষ্ট সকল সরকারী কর্তৃপক্ষসমূহকে সমভাবে দায়ী করেন। সাবেক এই সচিব বলেন, মালিকদের পাশাপাশি কলকারখানা পরিদর্শনের সাথে যুক্ত কর্মকর্তারা তাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করলে এ ধরনের হত্যাকাণ্ড ঘটবার কথা ছিল না।
তাজরিন দূর্ঘটনার পর ঢাকা শহরের ভেতর নিয়ম বহির্ভূত ও অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠা গার্মেন্টস কারখানা স্থানান্তরের উদাহরণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, যথাযথ উদ্যোগ নেয়া সম্ভব হলে শিল্প কারখানার পরিবেশ এর উন্নয়ন সম্ভব।
বি.আই.পি.-র সভাপতি পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক ড. আকতার মাহমুদ বলেন অর্থনৈতিকভাবে দ্রুত অগ্রসরমান বাংলাদেশে দূর্বল আইনি শাসন ব্যবস্থার ফলে সময়ে সময়ে বিপদজনক অবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে। ভবন নির্মাণের অনুমতি থেকে শুরু করে ব্যবহার, সকল ক্ষেত্রে প্রফেশনাল কোড অব এথিক্স মানা হচ্ছেনা; ফলশ্রুতিতে সকল ইমারত, শিল্পপ্রতিষ্ঠান বিপদজনক হয়ে উঠছে।
টেকসই লক্ষমাত্রা অর্জনের কথা বলা হলেও এতো চ্যালেঞ্জ সামনে রেখে নিরাপদ নগরী গড়ে তোলা সম্ভব নয় বলেও মন্তব্য করেন তিনি। একই সাথে সার্বিক সুরক্ষা প্রদানে অগ্নি নিরাপত্তা কোড, ইমারত নির্মাণ কোড সহ সকল আইনি কোড মেনে চলতে হবে। এছাড়া তিনি আরও বলেন প্রতিটি ক্ষেত্রে আইনের ব্যত্যয় ঘটছে; নিরাপদ কারখানা তৈরি করতে হলে কারিগরি ব্যক্তিবর্গ সহ সংশ্লিষ্ট সকলকে দায়বদ্ধতার মধ্যে আনতে হবে।
বুয়েটের যন্ত্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. আশিকুর রহমান বলেন, আগুন যাতে লাগতে না পারে সেদিকে গুরুত্ব দিতে হবে, আগুন ছোট রাখার চেষ্টা করতে হবে এবং লেগে গেলে তা দ্রুত নিভিয়ে ফেলার পদক্ষেপ নিতে হবে। তিনি আরও বলেন, লোভ ও দূর্নীতি, সক্ষমতার অভাব, আইনের প্রয়োগ নিশ্চিত করার অভাব এবং কর্তৃপক্ষকে বিচার ও দায়বদ্ধতার মধ্যে নিয়ে আসার অভাব এসবই মানব সৃষ্ট অগ্নি দূর্যোগের প্রধান কারণ।
ইউএনডিপি বাংলাদেশ এর ন্যাশনাল কনসালটেন্ট এবং ডিজাস্টার রিস্ক রিডাকশন বিশেষজ্ঞ পরিকল্পনাবিদ মোঃ আনিসুর রহমান বলেন দূর্ঘটনা প্রতিরোধে করণীয় হিসেবে অনিরাপদ ভবনের সম্ভাব্য ঝুঁকি সম্পর্কে সচেতনতা ও প্রচার জোরদারের মাধ্যমে ভবন মালিকদের অগ্নিঝূঁকিমুক্ত নিরাপদ ভবন নির্মাণে উৎসাহিত করতে হবে হবে। এছাড়াও দূর্ঘটনা ঘটার কারণ হিসেবে পেশাগত অনুসন্ধানের মাধ্যমে ভবন ব্যবহারকারী, মালিক ও সংশ্লিষ্ট সকলের মনস্তত্ব, বিশেষতঃ দূর্যোগের সময়কালীন আচরণ বোঝার চেষ্টা করতে হবে।
শিল্প স্থাপনা নকশাকার পরিকল্পনাবিদ স্থপতি মোহাম্মদ আমিমুল এহসান বলেন শিল্প কারখানা, গার্মেন্টস সকলের জন্য প্রযোজ্য নিয়মনীতি রয়েছে। বিদেশী ক্রেতাদের চাপে গার্মেন্টস কারখানা সেগুলো মানলেও স্থানীয় ক্রেতাদের কোন চাপ না থাকায় অন্যান্য অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠান সেই নিয়ম নীতি মানছে না।
ভবনের বসবাস নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে শ্রমিকদের যথার্থ সুরক্ষা প্রদান নিশ্চিত করতে পেশাজীবী সংগঠনের সহায়তায় প্রতিটি থানা বা উপজেলা পর্যায়ে কমিটি গঠন এবং কমপ্লায়েন্স অডিটিং এর মাধ্যমে ভবনের নিরাপত্তা সম্পর্কিত রিপোর্ট যথাযথ কর্তৃপক্ষের নিকট প্রদান করা দরকার। একই সাথে রাজনৈতিক অর্থনীতির নির্মোহ বিশ্লেষণের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় কাঠামোতে প্রয়োজনীয় সংস্কারের মাধ্যমে শ্রমিকদের কর্মপরিবেশের যথাযথ সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে বলে মন্তব্য করেন এই বিশেষজ্ঞ।
বি.আই.পি.-র যুগ্ন সম্পাদক পরিকল্পনাবিদ মোহাম্মদ রাসেল কবীর বলেন বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত পর্যালোচনা করে দেখা যায় সংশ্লিষ্ট সকলের গাফিলতি এবং কারখানা তৈরিতে পরিকল্পনা ও নির্মাণ স্ট্যান্ডার্ড অনুসরণ না করার ফলেই দূর্ঘটনা ঘটছে। একই সাথে জনসচেতনা বৃদ্ধির পাশাপাশি জনগণকে আইন মানতেবাধ্য করার জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেবার আহবান জানান তিনি।
বি.আই.পি.-র সহ সভাপতি পরিকল্পনাবিদ আরিফুল ইসলাম বলেন শিল্প কারখানার নিরাপত্তা সংক্রান্ত সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য অংশগ্রহণমূলক পদ্ধতিতে সরকারি বেসরকারি সকল অংশীজনসহ পেশাজীবিদের সমন্বয়ে কমিটি গঠনের মাধ্যমে সকল শিল্পকারখানাকে কমপ্লায়েন্স এরমধ্যে আনতে হবে। একই সাথে শিশুশ্রম বন্ধে রাষ্টীয় সামাজিক নিরাপত্তা বলয় বৃদ্ধি করতে হবে।
পরিবেশ দূষণের মাত্রার উপর ভিত্তি করে শিল্পকারখানা গুলোকে ভাগ করা হলেও দাহ্য ও অদাহ্য পদার্থের ভিত্তিতেও শিল্পকারখানাগুলোকে ভাগ করা সময়ের দাবি বলে মন্তব্য করেন নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন এর নগর পরিকল্পনাবিদ মোঃ মঈনুল ইসলাম। তিনি আরও বলেন শ্রমিকের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট সকল প্রতিষ্ঠানের দায়বদ্ধতার নিশ্চিত করা একান্ত দরকার।
রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) কর্তৃক প্রণীত ড্যাপ এর প্রকল্প পরিচালক পরিকল্পনাবিদ আশরাফুল ইসলাম বলেন বেশিরভাগ শিল্পকারখানা অপরিকল্পিতভাবে ভূমি ব্যবহারের ব্যত্যয় ঘটিয়ে অনুমোদনহীনভাবে গড়ে উঠেছে। সামগ্রিকভাবে শহরকে নিরাপদ করতে ভবন তদারকি ও অনুমোদন সংস্থাসমূহের দায়িত্ব ও করণীয়সমূহ সুস্পষ্টকরণ করতে হবে এবং একইসাথে শিল্পকারখানার ইমারত নকশা ও নির্মাণের সাথে সংশ্লিষ্ট পেশাজীবিদেরও দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করবার জোর দাবি জানান তিনি।
পরিকল্পনাবিদ তামান্না বিনতে রহমান বলেন শিল্প দূর্ঘটনার ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরণের জটিলতা লক্ষ্য করা যায়, যার মধ্যে নকশা অনুমোদন সংক্রান্ত জটিলতা, নির্মানগত ত্রুটি, অগ্নি নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত ত্রুটিসমূহ অন্যতম।
বি.আই.পি.-র বোর্ড সদস্য পরিকল্পনাবিদ রেজাউর রহমান বলেন অগ্নি দূর্ঘটনা সহ সকল দূর্ঘটনা রোধে অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠা অন্যান্য শহরের দিকেও নজর দিতে হবে। একই সাথে ইমারত নির্মাণ কমিটি শক্তিশালী করা, সকল পৌরসভাতে নগর পরিকল্পনাবিদ নিয়োগ এবং ভবন নির্মাণ অনুমোদন কমিটির কার্যক্রম বৃদ্ধি করা জরুরী বলে মন্তব্য করেন তিনি।
শিল্প-কারখানায় অগ্নিকান্ডের ঘটনা রোধ এবং শ্রমিকের জীবনের সুরক্ষার পাশাপাশি উপযুক্ত কর্ম-পরিবেশ নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের প্রস্তাবনা সমূহ নিম্নরূপঃ
১) শিল্প কারখানা সহ ভবন নির্মাণে জাতীয় বিল্ডিং কোড, ফায়ার কোড ও ইমারত নির্মাণ বিধিমালা অনুসরণ করা
২) শিল্প কারখানা ও শ্রম সংক্রান্ত সকল আইন ও বিধিবিধানের প্রয়োগ নিশ্চিত করা
৩) মাস্টার প্ল্যানে শিল্প এলাকা যথাযথভাবে চিহ্নিত করবার মাধ্যমে পরিকল্পনা অনুযায়ী শিল্প এলাকায় শিল্প কারখানা গড়ে তোলা এবং অনুমোদনহীন কারখানার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা
৪) অগ্নি নিরাপত্তা নিশ্চিতে শিল্প কারখানায় ফায়ার এলার্ম, ফায়ার এক্সটিংগুইশার, ফায়ার স্প্রিংকলারসহ আধুনিক ফায়ার ফাইটিং উপকরণ নিশ্চিত করা
৫) পর্যাপ্ত সংখ্যাক জরুরী প্রস্থান পথ নিশ্চিত করবার পাশাপাশি ভবনে পর্যাপ্ত আলো ও বায়ু চলাচলের বিধান রাখা
৬) বৈদ্যুতিক ইন্সটলেশনসহ সকল পরিসেবায় পর্যাপ্ত মানদণ্ড বজায় রাখা
৭) রাসায়নিক সহ সকল দাহ্য পদার্থ গুদামজাত করবার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নীতিমালা অনুসরণ করা
৮) মালিক-শ্রমিক-সরকার সমন্বয়ে শিল্প কারখানার কর্ম পরিবেশ ও নিরাপত্তা নজরদারির লক্ষ্যে ত্রিপাক্ষিক কমিটি তৈরী করা
৯) কল কারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের নজরদারি কার্যক্রম নিশ্চিত করা এবং এই প্রতিষ্ঠানসহ কারখানার নিরাপত্তা ও নিরাপদ কর্ম পরিবশ নিশ্চিত করতে দায়িত্বপ্রাপ্ত সকল প্রতিষ্ঠানের দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করা।
১০) শ্রম পরিদর্শন সংক্রান্ত জাতীয় কৌশলপত্রের প্রস্তাবনাসমূহ অচিরেই বাস্তবায়ন করা।
১১ ) অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় মালিক, কারখানার ব্যবস্থাপক এবং কারখানার নির্মাণ ও তদারকির সাথে সংশ্লিষ্ট পেশাজীবিসহ সকল সরকারী কর্তৃপক্ষসমূহকে তদন্তের আওতায় এনে যথাযথ শাস্তি নিশ্চিত করা
১২) ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড এ অগ্নি নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কিত প্রবিধানগুলোর পূনর্বীক্ষণের মাধ্যমে যুগোপযোগী করা। নতুন কোড এ বহূতল ভবনের উচ্চতা নির্ধারণে বর্তমানে প্রস্তাবিত ১০ তলার অধিক ভবনের বদলে ৬ তলার অধিক ভবনকে বহুতল ভবন সংজ্ঞায়িত করে অগ্নি নিরাপত্তার প্রবিধান নিশ্চিত করা।
১৩) সামাজিক নিরাপত্তা খাতে পর্যাপ্ত বরাদ্দ রেখে মানুষের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করবার মাধ্যমে শিশুশ্রম ও নিম্ন মজুরির মাধ্যমে শ্রমিক নিয়োগের সুযোগ বন্ধ করবার প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা।
১৪) ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড এর প্রস্তাবিত বিল্ডিং অথরিটি দ্রুত গঠনের মাধ্যমে দেশের সকল এলাকায় ভবন নির্মাণে শৃংখলা ও নির্মাণ কোড ।
# কাশেম