দূরবীণ নিউজ প্রতিবেদক :
আজ রোববার (২৯ আগস্ট) দুপুরে রাজধানীর গুলশানে হোটেল লেকশোতে ‘পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে যৌথভাবে শিশু সংবেদনশীল নগর কাঠামো’ গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে কাজ করার জন্য বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বি.আই.পি.) এবং সেইভ দ্য চিলড্রেনের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়।
একটি শিশুবান্ধব শহরের পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনা হতে হবে শিশুদের অধিকার পূরণের জন্য এবং তাদের বসবাস উপযোগী নগর প্রদানে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। যেই নগরে শিশুদের খেলার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা থাকে না এবং সবুজের ছোঁয়া থাকে না, সেটি শিশুদের বাসযোগ্য শহর হতে পারে না।
বাংলাদেশের টেকসয় ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে হলে, শিশুদের বসবাস উপযোগী নগর কেমন হবে তা পরিকল্পনার সঠিক চর্চার মাধ্যমে নিশ্চিত করতে হবে। সে লক্ষ্যে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বি.আই.পি.) এবং সেইভ দ্য চিলড্রেন স্থানীয় এবং জাতীয় নগর পরিকল্পনার নীতি ও উদ্যোগে শিশুদের অধিকারের প্রচার ও সুরক্ষার জন্য একসঙ্গে কাজ করবেন এবং শিশু-বান্ধব শহরগুলি গড়ে তোলার জন্য শিশুদের অগ্রাধিকার এবং চাহিদাগুলি শোনা এবং সমাধান করা নিশ্চিত করবেন।
এছাড়াও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার মধ্যে শিশুবান্ধব নগরী গড়ে তোলার কার্যপদ্ধতি তৈরি করবে এবং পরিকল্পনাবিদদের সাথে অন্যান্য পেশাজীবি, নীতিনির্ধারক, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, সিটি মেয়র, সচিব এবং প্রশাসনিক ক্যাডার সহ সকলের জন্য শিশুবান্ধব পরিকল্পনার মানদন্ড সম্পর্কিত প্রশিক্ষণ ও আলোচনা কর্মশালার আয়োজন করা হবে।
বি.আই.পি.-র সভাপতি পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক ড. আকতার মাহমুদ বলেন নগরের পরিকল্পনা ও নীতিতে শিশুদের কিভাবে সম্পৃক্ত করা যায় সেই লক্ষ্যে বি.আই.পি. এবং সেইভ দ্য চিলড্রেন একসাথে অনেকদিন ধরে কাজ করে যাচ্ছে। একটা শহর যখন মুনাফালোভী মানুষের জন্য তৈরি করা হয় তখন সেই শহর দোকানে রুপান্তরিত হয় বলে মন্তব্য করেন বি.আই.পি.-র সভাপতি। শহরগুলোকে দোকান বানাতে চাইনা বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন শহরকে মুনাফালোভী মানুষের শহর হিসেবে না গড়ে তুলে ব্যক্তিস্বার্থের বাইরে নগরী গড়ে তুলতে হবে। একই সাথে শিশুবান্ধব শহর গড়ে তুললে সেই শহর সকলের জন্য বাসযোগ্যও হবে এবং টেকসই লক্ষ্যমাত্রার অন্তর্ভুক্তিমূলক শহর গড়ে তোলা সম্ভব হবে। সর্বসাধারণের চলাচলের স্থান যেন হ্রাস না পায় এবং গণতান্ত্রিক শহর গড়ে তুলতে সেইভ দ্য চিলড্রেন এবং বি.আই.পি.র একত্রে কাজ করার এই উদ্যোগকে সাধুবাদ এবং ধন্যবাদ জানান তিনি।
বি.আই.পি.-র সাধারণ সম্পাদক পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, পরিকল্পনার মৌলিক শিক্ষার মানদন্ডে শিশুদের বাসযোগ্য নগর দিতে পারছি কিনা আমাদের সেই লক্ষ্যে কাজ করতে হবে। একটি নগরে শিশুদের খেলার অধিকার এবং সবুজের ছোঁয়া না থাকলে, সেটি শিশুবান্ধব নগর হতে পারে না। মানব স্কেল পরিকল্পনার বড় অংশটি হলো শিশুদের পরিকল্পনার উপাদান এবং শিশুদের প্রধান্য দিয়ে শিশুবান্ধব নগর গড়ে তোলা।
তাই যে জিনিসটি শিশুদের জন্য প্রয়োজন সে বিষয়টিকে প্রধান্য দিয়ে, পরিকল্পনার সঠিক চর্চার মাধ্যমে নগর পরিকল্পনা নিশ্চিত করতে হবে। তিনি আরও বলেন, শিশুদের কথা শুনতে হবে, তাদের পরিকল্পনার প্রক্রিয়ায় সংযুক্ত করতে এবং বাংলাদেশকে শিশুদের বসাবাসযোগ্য করে গড়ে তুলতে শিশুদের সাথে নিয়ে বি.আই.পি. এবং সেইভ দ্য চিলড্রেন কাজ করবেন।
সেভ দ্য চিলড্রেন বাংলাদেশ এর কান্ট্রি ডিরেক্টর অনো ভ্যান ম্যানেন স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি এবং বাংলাদেশের পরিকল্পনা নিয়ে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন পরিকল্পনার মাধ্যমে শিশুদের অধিকার এবং শিশুদের বিকাশ অর্জন সম্ভব। বর্তমানে জলবায়ু পরিবর্তন, নগরায়ন সহ অনেক নতুন চ্যালেঞ্জ রয়েছে, তবে আগামীর শিশুদের ভবিষ্যতের কথা বিবেচনায় রেখে বাংলাদেশের সকল শহর, কমিউনিটিতে শিশুদের প্রয়োজনীয় অধিকার পরিকল্পনার মাধ্যমে প্রদান করতে হবে।
পরিকল্পনা ও নীতি প্রণয়নে শিশুদের সম্পৃক্ত করতে হবে, যেন শিশুরা তাদের অধিকার এবং চাহিদার কথা তুলে ধরতে পারে। নীতিনির্ধারক থেকে শুরু করে বৃহৎ জনসংখ্যা সেই সাথে শিশুদের নিয়ে নগর পরিকল্পনা করতে হবে। ভবিষ্যৎ উন্নয়নের কথা বিবেচনায় রেখে নীতিনির্ধারক এবং শিশুদের মধ্যে মেলবন্ধন তৈরি করতে হবে তবেই আগামীর শিশুদের জন্য শিশুবান্ধব নগরী গড়ে তোলা সম্ভব হবে। একই সাথে তিনি বলেন এটাই সঠিক সময় পরিকল্পনার মাধ্যমে শিশুবান্ধব নগরী গড়ে তোলার। আর এই ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব প্ল্যানার্স (বি.আই.পি.) অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
পরিচালক (হিউম্যানিটারিয়ান) মোঃ মোশতাক হুসাইন বলেন, বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব প্ল্যানার্স এবং সেইভ দ্য চিলড্রেন শিশুবান্ধব নগরী গড়ে তোলার লক্ষ্যে বিভিন্ন সেমিনার, গোল টেবিল বৈঠক এবং সংলাপের আয়োজন করেছে। জাতীয় নীতিতে শিশুদের বিভিন্ন সমস্যার যে অনুপস্থিতি রয়েছে এবং শিশু অধিকার গুলোকে কিভাবে জাতীয় নীতিতে অন্তর্ভুক্ত করা ও কি ধরনের উদ্যোগ প্রয়োজন সেই লক্ষ্যে বি.আই.পি. এবং সেইভ দ্য চলড্রেন একত্রে কাজ করবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
এছাড়াও বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব প্ল্যানার্স (বি.আই.পি.)-র সিটি কর্পোরেশন, রাজউক সহ বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারদের সাথে শক্তিশালী নেটওয়ার্ক শিশুবান্ধব নগরী গড়ে তুলতে সহায়ক হবে বলেও অভিমত প্রকাশ করেন।
# প্রেস বিজ্ঞপ্তি ।