দূরবীণ নিউজ প্রতিবেদক:
বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক মো. লিয়াকত আলী লাকীর বিরুদ্ধে ঘুষ গ্রহণ, ক্ষমতার অপব্যবহার, বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতি, ভুয়া বিল ভাউচারের মাধ্যমে শত শত কোটি টাকা আত্মসাত,বিদেশে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার ও মানিলন্ডারিং অভিযোগ অনুসন্ধানের জন্য টিম গঠন করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
দুদকের পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেনের তত্ত্বাবধানে উপ পরিচালক মোহাম্মদ ইব্রাহিম ও সহকারী পরিচালক আফনান জান্নাত কেয়ার সমন্বয়ে একটি অনুসন্ধানকারী টিম গঠন করা হয়েছে। সোমবার (৩ জানুয়ারি) কমিশন এই টিম গঠন করেছেন। পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেনকে তদারককারী কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ প্রদান করা হয়েছে।
গনমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন,দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা ও উপ পরিচালক মুহাম্মদ আরিফ সাদেক। তিনি আরো জানান, অনুসন্ধানকারী টিমকে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক মো. লিয়াকত আলী লাকীর বিরুদ্ধে প্রাপ্ত অভিযোগ কমিশনের বিধিমালা ২০০৭ মোতাবেক অনুসন্ধান করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে।
সূত্র মতে, সম্প্রতি শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক মো. লিয়াকত আলী লাকীর বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম,ঘুষ কেলেঙ্কারি ও অর্থপাচারের বিষয় নিয়ে গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। প্রকাশিত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে ২২৭ কোটি ৭১ লাখ ১৭ হাজার ৪৫৯ টাকার অনিয়মের সন্ধান পেয়েছে হিসাব মহানিয়ন্ত্রকের কার্যালয়।
গত ২০১৬-১৭ অর্থবছর থেকে ২০২০-২১ অর্থবছর পর্যন্ত অনুসন্ধান করে এই অনিয়মের তথ্য পাওয়া যায়। মন্ত্রণালয়ের চিফ অ্যাকাউন্টস অ্যান্ড ফাইন্যান্স অফিসারের প্রতিবেদনে শিল্পকলা একাডেমিতে অনিয়মের ৭২টি ভয়াবহ চিত্র উঠে এসেছে। অডিট প্রতিবেদনে পিপিআর লঙ্ঘন করে সরাসরি ক্রয়ে নির্ধারিত ক্রয়সীমার অতিরিক্ত ১৪ লাখ ৩০ হাজার ১২৬ টাকার অনিয়ম হয়েছে। ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান পিমা অ্যাসোসিয়েটস লিমিটেডের আউটসোর্সিং বিল থেকে চুক্তি দাবি অপেক্ষা অতিরিক্ত ১ লাখ ৬৭ হাজার ৪০৬ টাকা পরিশোধ করা হয়েছে।
এশিয়ান বিয়েনাল সেলে কর্মরত ব্যক্তিদের ও বিভিন্ন অনুষ্ঠানের সম্মানী ভাতা থেকে ১২ লাখ ৫২ হাজার ৬৮০ টাকার আয়কর কর্তন করা হয়নি। ফলে এই অর্থ সরকারের রাজস্ব ক্ষতি হয়েছে। প্রবিধানমালা উপেক্ষা করে কালচারাল অফিসারদের উপ- পরিচালক পদে অতিরিক্ত দায়িত্ব প্রদান করে ২ লাখ ৪৫ হাজার ২৫৯ টাকার দায়িত্ব ভাতা প্রদান করা হয়েছে।
একাডেমির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অগ্রীম বাবদ ১৩ কোটি ৫৬ লাখ ৯৩ হাজার ৭৬৬ টাকা দেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে উল্লেøখযোগ্য, ড্যান্স অ্যাগেইনস্ট করোনার আওতায় খন্ডনৃত্য কোরিওগ্রাফি অনুষ্ঠানের জন্য বিভিন্ন ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানকে ৯৪ লাখ ৬ হাজার ২৪৪ টাকার চেক প্রদান করা হয়েছে। কিন্তু অনুষ্ঠানটি আর হয়নি।
চুক্তিমূল্যের ৫৯ শতাংশের ঊর্ধ্বে রিপিট অর্ডার না করে সরবরাহকারীকে বিল পরিশোধ করায় ৫ লাখ ৬৯ হাজার ১৫০ টাকার ক্ষতি হয়েছে। উন্মুক্ত দরপত্র বাদ দিয়ে বিধি বহির্ভূতভাবে খন্ড খন্ড ভাউচার ও আরএফকিউ’র মাধ্যমে মালামাল কিনে অনিয়মিত ব্যয় করা হয়েছে ৬৯ লাখ ৫১ হাজার ৪১৯ টাকা। উপজেলা শিল্পকলা একাডেমির বিপরীতে বরাদ্দকৃত অনুদান ১২ কোটি ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ের সত্যতাও পায়নি অডিট দল। আরো অনেক অনিয়ম এবং দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক মো. লিয়াকত আলী লাকীর বিরুদ্ধে। এবার অপেক্ষা দুদকের অনুসন্ধানী টিমের তদন্তের প্রতিবেদনে কি বেরিয়ে আসে।#