দূরবীণ নিউজ প্রতিবেদক :
শরীয়তপুরের চাঞ্চল্যকর লিংকন হত্যা মামলায় বিচারিক আদালতের দেওয়া রায়ে ফাঁসির আসামী বাবলু ও সোহাগকে বেকসুর খালাস দিয়েছেন হাইকের্টের ডের্থ রেফারেন্স (অবকাশকালীন) বেঞ্চ।
গত ২৮ মার্চ (সোমবার) হাইকোর্টের বিচারপতি এস.এম.কুদ্দুস জামান ও বিচারপতি মোহাম্মদ অলীর সমন্বয়ে গঠিত অবকাশকালীন ডের্থ রেফারেন্স বেঞ্চ দ্রুক বিচার ট্রাইব্যুনালের দেওয়া রায়যারফলে হাইকোর্ট ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত এ দুই আসামীকে বেকসুর খালাসের রায় প্রদান করেছেন।
সুপ্রিম কোর্টের বিজ্ঞ আইনজীবী অ্যাডভোকেট হেলাল উদ্দিন মোল্লাহ জানান, উল্লেখিত ভিকটিম নিহত লিংকনকে বিষাক্ত ক্যামিকেল মিশ্রিত ,ড্রিংক্স পান করানো, হাতের নোখ ও রগ কাটায় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ এবং গলায় ফাঁস লাগিয়ে হত্যা সংক্রান্ত বিষয়ে ১৬৪ ধারায় আসামী বাবুল ও সোহাগের স্বীকারোক্তিমুলক বক্তব্যে সাথে পুলিশের সোরতহাল রিপোর্ট এবং ডাক্তরের ময়না তদন্ত রিপোর্টের কোন মিলা নেই। ডাক্তরের দেওয়া ময়না তদন্ত রিপোর্টে বিষাক্ত ক্যামিকেল পান করানো এবং নির্যাতনের কোন প্রমাণ নেই।
যারফলে গত হাইকোর্টের বিচারপতি এস.এম.কুদ্দুস জামান ও বিচারপতি মোহাম্মদ অলীর সমন্বয়ে গঠিত অবকাশকালীন ডের্থ রেফারেন্স বেঞ্চ দ্রুক বিচার ট্রাইব্যুনালের দেওয়া রায়ে ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত এ দুই আসামীকে বেকসুর খালাসের রায় প্রদান করেছেন।
হেলাল উদ্দিন মোল্লাহ জানান, হাইকোর্টের উক্ত ডের্থ রেফারেন্স বেঞ্চ দ্রুক বিচার ট্রাইব্যুনালের দেওয়া রায় এবং মামলার পুরো নথিপত্র পর্যালোচনা শেষে ফাঁসির এ দুই আসামীকে বেকসুর খালাসের রায় প্রদান করেন। এই আসামী দুই জন বর্তমানে কাশিপুর কারাগারে কনটেম সেলে আছেন।
তিনি জানান, এরআগে ঢাকায় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে মামলাটি শুনানি গ্রহণ করে আসামী বাবলু ও আসামী সোহাগকে ফাঁসির রায় প্রদান করেন। পরে এই মামলাটি হাইকোর্টে ডের্থ রেফারেন্স নম্বর ১২৪/২০১৬ দাখিল করা হয়। কিন্তু আসামীর গরীব হওয়ায় তারা আইনজীবী নিয়োগে দিতে পারেনি। পরে কাশিমপুর কারাকর্তৃপক্ষ আসামী বাবলুর জেল আপিল নম্বর বাবুল-৩২৭, সোহাগ জেল আপিল নম্বর-৩২৮ দায়ের করা দুইটি আবেদন হাইকোর্টে পাঠিয়ে দেন।
অ্যাডভোকেট হেলাল উদ্দিন মোল্লাহ আরও জানান, শরীয়তপুর জেলার,পালং থানার, বেড়া চিকন্দী গ্রামের জনৈক মোজাম্মেল খান তার ছেলে লিংকনকে মটর সাইকেল মেরামতের কথা বলে কৌশলে অপহরণের অভিযোগে শরীয়তপুর জেলার পাংশা থানায় ২৮ /৬/২০১৩ ইং তারিখে বাবুলসহ ৩ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা দাযের করেন। মামলা নম্বর ৩৩। আসামীদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি ৩২৮/৩৬৪/৩৭৯/৩৪ ধারা এবং প্যানাল কোড ১৮৬০ ধারায় মামলাটি রেকর্ড করা হয়। মামলায় অভিযোগ করেন, আসামী বাবলু এবং সোহাগ বাসা থেকে বাদীর থেকে মটর সাইকেল মেরামতের কথা বলে ডেকে নিযে যায়।
মামলায় আসামীদের নাম ও পূণাঙ্গ ঠিকানা; সোহাগ (২৫) পিতা- মুরাই হাং ঠিকানা- সাং বেড়া চিকন্দী, থানা- পালং, জেলা মরীয়তপুর। অপর আসামী মো. বাবলু (৩৫) পিতা- আ. রশিদ, সাং- অশিরা, থানা- গেীরীপুর, জেলা ময়মনসিংহ এবং বাবুল পিতা- ও ঠিকানা অজ্ঞাত। মামলার পর পুলিশ ২০১৩ সালের ২৮ জুন লাশ উদ্ধার করে সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করে এবং লাশের ময়না তদন্ত করা হয়।
পরে আসামী বাবুলকে রাজধানীর লালবাগ থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তাকে রিমান্ডে নিয়ে জ্ঞিাসাবাদ করে । পরে অপর আসামী সোহাগকেও পুলিশ গ্রেফতার করে।আসামী বাবলু ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকাররোক্তি দেয়। পরে অপর আসামী সোহাগকে গ্রেফতার করে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞসাবাদ করেন। সোহারও ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তি দেয়।
আসামী বাবুল স্বীকাররোক্তিতে বলেছে, ২০১৩ সালে ২৫ জুন বিকেল ৩ টায় আসামীরা বাদীর ছেলে লিংকনকে একটি মটর সাইকেল চুরির উদ্দেশ্যে তাকে প্রলোভন দিয়ে বাড়ি থেকে বের করে নিয়ে যায়। তাকে নেশা জাতীয় দ্রব্য পান করায়। তারা উক্ত মটর সাইকেলে বাদীর ছেলে লিংকনকে সঙ্গে অনেক দূর যেতে থাকে।
একপর্যয়ে লিংকন অচেতন হয়ে পরলে তাকে পাট ক্ষেতে নিয়ে যাওয়া হয়। ভিকটিম লিংকনের গায়ে সার্ট গলা পেচিয়ে তার হত্যা নিশ্চিত করা হয়। লিংকনকে বিষাক্ত ক্যামিকেল,ড্রিংক্স পান করানো, হাতের নোখ ও রগ কেটে এবং গলায় ফাঁস লাগিয়ে হত্যার ঘটনায় আসামীদের স্বীকারোক্তিমুলক বক্তব্য দিয়েছে।
আসামীরা মটর সাইকেলটি মুস্তাফাপুরে বিক্রির চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। স্থানীয় লোকজনের চ্যালেঞ্জের মুখে আসামীরা মটর সাইকেল ফেলে পালিয়ে যায়। পরে মটর সাইকেলটি পুলিশ উদ্ধার করে শরীয়তপুর থানায় নিয়ে যায়। #