দূরবীণ নিউজ প্রতিবেদক :
ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেডের সাবেক চেয়ারম্যান মো. নজরুল ইসলামকে ৪ দিন রিমান্ড শেষে ঢাকা কেন্দ্রিয় কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত।
প্রায় ২ হাজার ৮০০ শত কোটি টাকা লুটপাটের অভিযোগে ফারইস্ট লাইফের পক্ষ থেকে ডিএমপির শাহবাগ থানায় দায়ের করা মামলায় এজাহার ভুক্ত ১৪ আসামীর মধ্যে অন্যতম তিনি। এপর্যন্ত ৩ দফায় ৭ দিনের রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) কর্মকর্তাগণ।
শুক্রবার (২৩ সেপ্টেম্বর) চার দিনের রিমান্ড শেষে তাকে আদালতে হাজির করেন মামলার তদন্তকারী পুলিশ কর্মকর্তা। আদালতে এই মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে মো. নজরুল ইসলামকে পুনরায় (চতুর্থ দফা) ৮ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। অপরদিকে আসামী পক্ষের আইনজীবী রিমান্ড বাতিল চেয়ে আবেদন করেন। পরে উভয় পক্ষের আবেদন শুনানি শেষে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট নুরুল হুদা তাদের রিমান্ড আবেদন নামঞ্জুর করে আসামীকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
উল্লেখ্য,গত ১৮ সেপ্টেম্বর ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শহিদুল ইসলাম এই আসামীর বিরুদ্ধে ৪দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এর আগে ১৬ সেপ্টেম্বর ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট রশিদুল আলম উক্ত আসামীর বিরুদ্ধে একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এছাড়া গত ১৩ সেপ্টেম্বর ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মাহবুব আহম্মেদ তদন্ত কর্মকর্তার ১৫ দিনের রিমান্ডের আবেদন শুনানি শেষে নজরুল ইসলামকে দুইদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
সূত্র মতে, ফারইস্ট লাইফে লুটপাটের মামলায় গ্রেফতার কোম্পানিটির সাবেক পরিচালক ও অডিট কমিটির সাবেক চেয়ারম্যান এমএ খালেক এবং তার ছেলে কোম্পানীর পরিচালক রুবায়াত খালেক বর্তমানে ৫দিনের রিমান্ডে আছেন। গত ১৯ সেপ্টেম্বর ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মামুনুর রশীদের আদালতে তাদের হাজির করে মামলার তদন্তের স্বার্থে ১৫ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা। পরে আবেদন শুনানি শেষে বিচারক পিতা ও পুত্রের বিরুদ্ধে ৫ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এরআগে গত ১৩ সেপ্টেম্বর এই দুই জনকেও আদালতে হাজির করে মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে তাদের ১৫ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা। অপরদিকে, আসামীর পক্ষের আইনজীবীরা রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন আবেদন করেন। পরে উভয়পক্ষের শুনানি শেষে বিচারক তাদের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে জেলগেটে দুই দিনের জিজ্ঞাসাবাদের নির্দেশ দেন।
সূত্র মতে, গত ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে ফারইস্ট লাইফে লুটপাটের মামলায় সাবেক চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার মো. হেমায়েত উল্লাহ ও কোম্পানির সাবেক সচিব ডিএমডি সৈয়দ আবদুল আজিজ এবং সাবেক সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট শেখ আব্দুর রাজ্জাককে জিজ্ঞাসবাদের জন্য ডিবি কার্যালয়ে তলব করা হয়। এরপরও তাদের একাধিকবার জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করা হয়। সৈয়দ আজিজ এনআরবি লাইফে কোম্পানি সেক্রেটারী হিসেবে বর্তমানে কর্মরত রয়েছেন।
ফারইস্ট লাইফের বিরুদ্ধে নজিরবিহীন লুটপাটের তথ্য বেরিয়ে এলে ২০২১ সালে ১ সেপ্টেম্বর কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দেয় পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। পর্ষদ ভেঙে দেওয়ার পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটিতে ১০ জন স্বতন্ত্র পরিচালকও নিয়োগ দেওয়া হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের ডিন ড. মুহাম্মদ রহমত উল্লাহকে চেয়ারম্যান করে নতুন পর্ষদে পরিচালক হিসেবে রাখা হয় মোহাম্মদ সানাউল্লাহ অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটসের সিইও মোহাম্মদ সানাউল্লাহ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকিং ও বিমা বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. রফিকুল ইসলাম, অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত সচিব মো. মোফাজ্জল হোসেন, অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল গাজী মো. খালিদ হোসেন, স্নেহাশীষ অ্যান্ড কোম্পানির পার্টনার স্নেহাশীষ বড়ুয়া, একাত্তর মিডিয়ার প্রধান সম্পাদক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মোজাম্মেল হক, জি সেভেন সিকিউরিটিজের চেয়ারম্যান সাজেদুর রহমান, জনতা ব্যাংকের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. জিকরুল হক এবং নর্দান ইসলামী ইন্স্যুরেন্সের সাবেক চেয়ারম্যান জহিরুল ইসলাম চৌধুরীকে।
বিএসইসি থেকে এমন পদক্ষেপ নেওয়ার ১৫ দিনের মাথায় কোম্পানিটির সিইও পদ থেকে হেমায়েত উল্লাহকে বহিষ্কার করে বিমা খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ। আইডিআরএ’র এ সংক্রান্ত চিঠিতে বলা হয়, কোম্পানি পরিচালনার ক্ষেত্রে হেমায়েত উল্লাহর বিভিন্ন অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা, আর্থিক অনিয়ম, বিমা পলিসি গ্রাহক ও বিমাকারীর স্বার্থের জন্য ক্ষতিকর এবং নিয়ম পরিপন্থি কর্মকাণ্ডের তথ্য বিভিন্ন মাধ্যমে আইডিআরএ’র নজরে এসেছে। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে বিমা গ্রাহকদের অভিযোগসহ অনিয়মের তথ্য-প্রমাণ রয়েছে।#