দূরবীণ নিউজ ডেস্ক :
রাজধানী ঢাকার ৫২টি এলাকা এবং নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুর সম্পূর্ণ লকডাউন করা হয়েছে। এসব এলাকা থেকে কেউ বাইরে বের হতে পারবেন না এবং বাইরের কেউ
কেউ ঢুকতেও পারবেন না। ঢাকা মহানগর, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুরের পুলিশের পদস্থ কর্মকর্তারা গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
ঢাকা মহানগর পুলিশের উপকমিশনার মাসুদুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেছেন, যেসব এলাকায় রোগী পাওয়া যাচ্ছে, সেসব এলাকা লকডাউন করা হচ্ছে।
রাজধানীর মিরপুরের টোলারবাগে করোনা রোগী পাওয়ার পর ওই এলাকা আগেই লকডাউন করা হয়। এরপর পুরান ঢাকায় খাজে দেওয়ান লেনের ২০০ ভবন, মোহাম্মদপুর এবং আদাবরের ৬টি এলাকা, মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটের সামনে, তাজমহল রোড মিনার মসজিদ এলাকা, রাজিয়া সুলতানা রোড, বাবর রোডের একাংশ, বছিলা ও আদাবর এলাকার কয়েকটি বাড়ি ও রাস্তা। বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় এক নারী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর সেখানকার একটি রাস্তা লকডাউন করা হয়।
পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, গত মঙ্গলবার পর্যন্ত যেসব এলাকা লকডাউন করা হয় তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো মহাখালীর আরজত পাড়ার একটি ভবন, বসুন্ধরা এলাকার অ্যাপোলো হাসপাতালসংলগ্ন এলাকা, বসুন্ধরা ডি ব্লকের রোড-৫, বুয়েট এলাকার একাংশ, ইস্কাটনের দিলু রোডের একাংশ, মিরপুরের টোলারবাগ, উত্তরা ১৪ নম্বর সেক্টরের একটি সড়ক এলাকা, কাজীপাড়ার একটি অংশ, সেন্ট্রাল রোডের কিছু অংশ, সোয়ারীঘাটের কিছু অংশ, মিরপুর-১০-এর ৭ নম্বর রোড, পল্টনের কিছু অংশ, আশকোনার কিছু অংশ, নয়াটোলার একাংশ, সেনপাড়ার একটি অংশ, মীর হাজিরবাগের একাংশ, নন্দীপাড়ার ব্রিজের পাশের এলাকা, মিরপুর সেকশন ১১-এর একটি সড়ক, লালবাগের খাজে দেওয়ান রোডের একটি, ধানমন্ডি-৬-এর একটি অংশ, উত্তর টোলারবাগ, মিরপুর-১৩ ডেসকো কোয়ার্টার, দক্ষিণ যাত্রাবাড়ীর কুতুবখালী, পশ্চিম মানিকনগর, নারিন্দার কিছু এলাকা, গ্রিন লাইফ হাসপাতাল এলাকা, ইসলামপুরের একাংশ। এসব এলাকা পুলিশি পাহারায় থাকবে। দিনরাতে কাউকে চলাচল করতে দেয়া হবে না। এলাকায় সব ধরনের দোকানপাট বন্ধ রাখা হবে।
পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, লকডাউনের আগে কেউ বাসার বাইরে থাকলে তিনি ভেতরে যেতে পারবেন। কিন্তু কেউ বের হতে পারবেন না। কেউ বের হতে চাইলে তাকে অনুমতি নিয়ে বের হতে হবে।
ঢাকার পাশাপাশি গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জ জেলা লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। গাজীপুর মহানগরী (সিটি কর্পোরেশনের ৫৭টি ওয়ার্ড) এলাকায় প্রবেশ এবং গাজীপুর মহানগরী থেকে বাইরে যাওয়া বন্ধ করার উদ্যোগ নিয়েছে প্রশাসন।
মঙ্গলবার সকাল ১১টার দিকে গাজীপুর জেলা প্রশাসকের ভাওয়াল সম্মেলনকক্ষে অনুষ্ঠিত এক সভায় এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। দেশব্যাপী করোনা বিস্তারের ফলে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন গাজীপুরের জেলা প্রশাসক এস.এম তরিকুল ইসলাম।
তিনি জানান, গাজীপুর মহানগরী এলাকায় বিপুল সংখ্যক শিল্প, কল-কারখানা রয়েছে। এসব শিল্প প্রতিষ্ঠানে লাখ লাখ শ্রমিক কাজ করে থাকেন। এজন্য এখানে করোনাভাইরাসের বিস্তারের একটি বড় ঝুঁকি রয়েছে। এছাড়া রাজধানীর প্রবেশ ও বাইরে আসার ক্ষেত্রেও ইতিমধ্যে বিধি-নিষেধ আরোপ করা হয়েছে। তাই ঢাকায় প্রবেশের অন্যতম পথ গাজীপুরকে সম্পূর্ণ অবরুদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
তবে চিকিৎসা ও খাদ্যদ্রব্য সরবরাহসহ ইত্যাদি জরুরি সেবা এই লকডাউনের আওতার বাইরে থাকবে বলে জানান তিনি।
গাজীপুর মহানগর পুলিশর কমিশনার মো: আনোয়ার হোসেন জানান, আমরা গাজীপুর মহানগর এলাকায় কাউকে প্রবেশ করতে দেব না এবং কাউকে বের হতেও দেব না। করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে এর চেয়ে ভালো উপায় এ মুহুর্তে আর নেই। কষ্ট হলেও এ সিদ্ধান্ত সকল নাগরিককে মেনে চলতে অনুরোধ করছি।
তিনি আরও জানান, এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য গাজীপুর মহানগরীতে প্রবেশের ১০টি পয়েন্টে চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। ইতিমধ্যে ঢাকা-টাঙ্গাইল, ঢাকা-ময়মনসিংহ ও টঙ্গী-কালীগঞ্জ মহাসড়ক, কাশিমপুর, বাড়ীয়া ও টঙ্গীর কামারপাড়াসহ ১০টি পয়েন্টে পুলিশি তৎপর রয়েছে।
এদিকে বুধবার (৮ এপ্রিল) নারায়াণগঞ্জ জেলা লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত এ সিদ্ধান্ত বলবৎ থাকবে। তবে জরুরি সেবা এর আওতার বাইরে থাকবে। মঙ্গলবার রাতে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতরের (আইএসপিআর) এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়, চিকিৎসা ও খাদ্যদ্রব্য সরবরাহসহ ইত্যাদি জরুরি সেবা এর আওতার বাইরে থাকবে। প্রশাসন, সশস্ত্রবাহিনী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে সম্মিলিতভাবে এ দায়িত্ব পালন করবে বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। #