দূরবীণ নিউজ প্রতিবেদক:
করোনা পরিস্থিতিতে কঠোর লকডাউনকালে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে হাসেম ফুড অ্যান্ড বেভারেজের (সেজান জুস) কারখানায় অগ্নিকাণ্ডে হতাহতের ঘটনায় ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে তাদের প্রতি চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন হাইকোর্ট।
আদালত বলেন, ‘এতজন শ্রমিক নির্মমভাবে মারা গেলেন, এফবিসিসিআইসহ দেশের বড় বড় ব্যবসায়ী সংগঠনগুলো কোনো শোকবার্তা পর্যন্ত জানাল না। গণমাধ্যমে শোক জানিয়ে ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর কোনো বিবৃতিও চোখে পড়লে না। তাদের ন্যূনতম দায়বদ্ধতাও নাই।’
আজ বুধবার (১৪ জুলাই) রূপগঞ্জ ট্রাজেডির পরে শ্রমিকদের বেতন বকেয়ার বিষয়টি আদালতের নজরে আনেন আইনজীবী ব্যারিস্টার সারা হোসেন। এ সময় হাইকোর্টের বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিমের ভার্চুয়াল বেঞ্চ এসব মন্তব্য করেন।
হাইকোর্ট এ সময় আরও বলেন, ‘তারা (ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও মালিক) আছেন শুধু সরকারের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায় আর ব্যাংকের ঋণ লোন কীভাবে মওকুফ পাওয়া যায় সেই চেষ্টায়।’
এ সময় আদালতে ব্যারিস্টার সারা হোসেন ও অনিক আর হক ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন। আদালতের এসব মন্তব্যের বিষয় জাগো নিউজকে নিশ্চিত করেন ব্যারিস্টার সারা হোসেন।
তিনি বলেন, ‘রিটকারী সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আগুনে পুড়ে যাওয়া কারখানার শ্রমিকরা তাদের বকেয়া বেতন-ভাতা ও বোনাস কিছুই পায়নি। আমরা বিষয়টি আজ আদালতে উপস্থাপন করেছিলাম। তখন আদালত বলেছেন সরকার থেকে নির্দেশনা রয়েছে শুক্রবারের (১৬ জুলাই) মধ্যে শ্রমিকদের পাওনা বুঝিয়ে দেবে। ওইদিন পাওনার বিষয়ে ব্যবস্থা না হলে আমরা দেখব।’
ব্যারিস্টার সারা হোসেন আরও বলেন, ‘এর মধ্যে আহত শ্রমিকদের চিকিৎসায় সঠিক পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে কি-না খোঁজ নিয়ে জানানোর জন্য বলেছেন আদালত। এসব বিষয় খোঁজ নিয়ে রিটকারী চার সংগঠনের পক্ষ থেকে জানাতে হবে। তবে কোনো সময় বেধে দেয়া হয়নি।’
আগুনে পুড়ে শ্রমিক নিহত হওয়ার ভয়াবহ ঘটনার পর কোনো ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান কারখানা পরিদর্শনে গেল না, এমনকি তারা কোনো ধরনের শোক পর্যন্ত জানাল না, ভয়াবহ ঘটনায় ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের এমন আচরণে হাইকোর্ট উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এবং ব্যবসায়ীদের আচরণে বিচলিত হয়েছেন।
এ বিষয়ে আদালত বলেন, ‘এতজন শ্রমিক মারা গেলেন। ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে লোনো শোক পর্যন্ত জানিয়ে কোনো বিবৃতি দেখি নাই। এফবিসিসিআই শ্রমিকদের মৃত্যুর বিষয়ে শোক জানাল না। তাদের কোনো প্রতিনিধি দল সেখানে গেল না। আমার মনে হয় এফবিসিসিআইসহ ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর রোল প্লে করার প্রয়োজন এসব ক্ষেত্রে। ঠিকমত ফ্যাক্টরিগুলো রান করছে কি-না। কোথায় কী দুর্বলতা এগুলো তাদের দেখা উচিত।’
পোশাক কারখানা ও ব্যবসায়ীদের প্রসঙ্গে আদালত বলেন, ‘গার্মেন্টেসের ব্যাপারে বিদেশিরা চাপ দিয়েছে বলে সেখানে এখন অনেক পরিবর্তন হয়েছে। কারণ আমাদের দেশে যতক্ষণ চাপ না দিচ্ছেন ততক্ষণ কাজ হয় না। এটা বোঝা উচিত।’
বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম বলেন, ‘ব্যক্তিগতভাবে আমি পত্রপত্রিকা ফলো করার চেষ্টা করি। তাদের কোনো পজিটিভ ভূমিকা দেখি না। আমার মনে হয় যে আমাদের এই জায়গাগুলোতে কাজ করার সুযোগ আছে। ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর কোনো দায়বদ্ধতা নেই। তারা শুধু সরকারের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায়ের চেষ্টা করে আর ব্যাংকের ঋণ মওকুফ কীভাবে পাওয়া যাবে সেই চেষ্টায় থাকে। আর কারখানা পরিদর্শকরা পরিদর্শনে গিয়ে খাম নিয়ে আসেন।’
আইনজীবীদের উদ্দেশে আদালত বলেন, ‘শ্রমিকদের স্বার্থ দেখার জন্য ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর যে দায়বদ্ধতা আমার মনে হয় এসব জায়গায় আপনাদের কাজ করার সুযোগ আছে।’
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে সজীব গ্রুপের হাসেম ফুড অ্যান্ড বেভারেজ লিমিটেডের সেজান জুসের কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড কেড়ে নিয়েছে ৫২টি প্রাণ। বৃহস্পতিবার (৮ জুলাই) বিকেলে অগ্নিকাণ্ডের পর রাতে তিনজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেলেও প্রায় ২০ ঘণ্টা পর শুক্রবার (৯ জুলাই) দুপুরে ওই ধ্বংসস্তূপ থেকে আরও ৪৯ জনের মরদেহ উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিস।
এসব মরদেহ ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে। ডিএনএন পরীক্ষার মাধ্যমে শনাক্ত করে মরদেহগুলো স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হবে।#