দূরবীণ নিউজ ডেস্ক :
চিকিৎসা সেবা দেবার নামে প্রতারণা রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান মো. সাহেদ ওরফে সাহেদ করিমের বিরুদ্ধে। রিজেন্ট হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে তিন ধরনের অভিযোগ ও অপরাধের প্রমাণ পাওয়া গেছেন। প্রথমত, তারা করোনার নমুনা পরীক্ষা না করে ভুয়া রিপোর্ট তৈরি করত। এ ধরনের ১৪টি অভিযোগ র্যাবের কাছে জমা পড়ে।
জানা যায়, সাহেদ করিম প্রভাবশালী ব্যক্তিদের ‘হাত’ করতে ব্যবহার করেছিলেন টক শো আর হাসপাতাল ব্যবসা। হাসপাতালে র্যাবের অভিযান শুরুর পর তিনি প্রভাবশালীদের কারও কারও কাছে ফোনও করেন।
ইতোমধ্যে র্যাবের কর্মকর্তারা রিজেন্ট গ্রুপ ও হাসপাতালের বেতনভোগী ৮ খুদে কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে গ্রেপ্তার করেছে। এরমধ্যে ৭ জনকে ৫ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান মো. সাহেদ এখনো গ্রেপ্তার হয়নি।
আরো অভিযোগ রয়েছে, গত সোমবার অভিযান চলার সময় র্যাবের ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলম সাংবাদিকদের বলেন, রিজেন্ট হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে তিন ধরনের অভিযোগ ও অপরাধের প্রমাণ তাঁরা পেয়েছেন।
হাসপাতালটির সঙ্গে সরকারের চুক্তি ছিল ভর্তি রোগীদের বিনা মূল্যে চিকিৎসা দেওয়ার। সরকার এই ব্যয় বহন করবে। কিন্তু তারা রোগীপ্রতি লক্ষাধিক টাকা বিল আদায় করেছে। পাশাপাশি রোগীদের বিনা মূল্যে চিকিৎসা দিয়েছে এই মর্মে সরকারের কাছে ১ কোটি ৯৬ লাখ টাকার বেশি বিল জমা দেয়।
এদিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘সাহেদ করিম বেশ কয়েকবার সচিবালয়ে গেছেন। একদিন বললেন, তিনি দুটো হাসপাতাল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের জন্য ছেড়ে দিয়েছেন। রোগী থাকলে যেন পাঠাই। আমি সেখানে রোগী পাঠিয়েছি।
একজন ইন্তেকাল করেছেন, বাকিরা সেরে উঠেছেন।’ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, করোনা মহামারির আগে তিনি সাহেদ করিমকে চিনতেন না। র্যাবের অভিযানের পর সাহেদ করিম তাঁকে ফোন করেছিলেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, তাঁর কিছু করার নেই।
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে ছবি আছে সাহেদের। কত দিন ধরে তিনি সাহেদকে চেনেন, এ বিষয়ে জানতে চেয়ে খুদে বার্তা দিলেও তিনি সাড়া দেননি।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল মোমেন গণমাধ্যমকে বলেন, তিনি সাহেদ করিমকে ব্যক্তিগতভাবে চেনেন না। কেউ কখনো ছবি তুলতে চাইলে তিনি না করেন না। এ ক্ষেত্রেও তাই ঘটেছে।
তবে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, সাবেক রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ জমির গণমাধ্যমকে বলেছেন, সাহেদ করিম মাঝে মাঝে আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপকমিটির বৈঠকে আসতেন। তিনি সাবেক একটি কমিটির সদস্য ছিলেন। তাঁর সঙ্গে কমিটির বৈঠকে দু–চারবার দেখা হয়েছে। আর দেখা হয়েছে টিভির টক শোতে। মোহাম্মদ জমির বলেন, ‘মোহনা টিভিতে আমি টক শোতে গিয়েছি কয়েকবার। সেখানে সাহেদ করিম সঞ্চালকের ভূমিকায় ছিলেন।’
সাহেদ আওয়ামী লীগে কীভাবে:
যুবদলের একজন কর্মী প্রথম আলোকে বলেন, গত বছরের জুনে তিনি উত্তরায় রিজেন্ট কার্যালয়ে গিয়েছিলেন। সে সময় সাহেদ করিম তাঁর সামনেই স্কাইপেতে তারেক রহমানের সঙ্গে কথা বলেন। তাঁর সঙ্গে গিয়াসউদ্দিন আল মামুনেরও ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল।
রিজেন্ট গ্রুপের ওয়েবসাইটে দেখা গেছে, সাহেদ আত্রাই নদ ড্রেজিং প্রকল্পের কাজ করেছেন। কক্সবাজারের শাহপরীর দ্বীপ ও কক্সবাজারে সাইক্লোন শেল্টার ও প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপনের কাজেও তিনি যুক্ত আছেন।
বিএনপির কয়েকজন নেতা জানান, দলের সঙ্গে সাহেদ করিমের যোগাযোগ ছিল না। তবে তাঁদের দলের কোনো কোনো নেতার সঙ্গে উঠবস ছিল বলে তাঁরা জানতে পেরেছেন। তাঁরা আরও বলেছেন, ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপি যখন ক্ষমতায় ছিল, তখন সুবিধাভোগী ও বিতর্কিত লোকজনের সঙ্গে সাহেদ যোগাযোগ করতেন।
আওয়ামী লীগ সূত্রগুলো বলছে, ২০১৫ সালের আগে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সাহেদ করিমের কোনো উপস্থিতি ছিল না। ২০১৬ সাল থেকে বিভিন্ন নেতার সঙ্গে যোগাযোগ করতে শুরু করেন তিনি। ওই বছরের অক্টোবরে আওয়ামী লীগের ২০তম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
এরপর ২০১৭ সালেআন্তর্জাতিক বিষয়ক উপকমিটির সদস্য হন। তবে গত ডিসেম্বরে ২১তম সম্মেলনের পর নতুন উপকমিটি এখনো চূড়ান্ত হয়নি। প্রস্তাবিত নতুন কমিটিতে তাঁকে রাখা হয়নি বলে নিশ্চিত করেন উপকমিটির দুই শীর্ষস্থানীয় নেতা।
দলের একাধিক নেতা জানান, আওয়ামী লীগের উপকমিটি নিয়ে নানা বিতর্ক আছে। এই কমিটির সদস্যদের সবার চিঠিও থাকে না। তাই কমিটির চেয়ারম্যান ও সদস্যসচিবের সম্মতি নিয়ে কেউ কেউ সদস্য হিসেবে কাজ করেন।
গ্রেপ্তার ৭জন রিমান্ডে:
করোনা পরীক্ষা না করেই সনদ দেওয়াসহ নানা অভিযোগে গ্রেপ্তার রিজেন্ট হাসপাতালের ৭ জনকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দিয়েছেন আদালত। রাজধানীর উত্তরা থানা পুলিশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালত গতকাল এই আদেশ দেন। এর আগে গ্রেপ্তার হওয়া ৮জনকে আদালতে হাজির করা হয়। একজন আসামি কিশোর হওয়ায় তাকে রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করা হয়নি।
রিমান্ডে নেওয়া সাত আসামি হলেন প্রশাসনিক কর্মকর্তা আহসান হাবীব, হেলথ টেকনিশিয়ান আহসান হাবীব হাসান, হেলথ টেকনোলজিস্ট হাতিম আলী, রিজেন্ট গ্রুপের প্রকল্প প্রশাসক রাকিবুল ইসলাম, মানবসম্পদ কর্মকর্তা অমিত বনিক, নির্বাহী কর্মকর্তা আবদুর রশীদ খান ও গাড়িচালক আবদুস সালাম।
রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান মো. সাহেদকে প্রধান আসামি করে ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে উত্তরা পশ্চিম থানায় এই মামলা করে র্যাব।
রিজেন্টের মিরপুর শাখাও সিলগালা:
সরকারের সঙ্গে চুক্তি ভঙ্গ করে করোনা রোগীদের কাছ থেকে বিল আদায় এবং করোনার ভুয়া প্রতিবেদন তৈরি করে মোটা অঙ্কের টাকা আদায়সহ বিভিন্ন অভিযোগে রিজেন্ট হাসপাতালের মিরপুর শাখা গত বুধবার সিলগালা করে দিয়েছেন র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত। এর আগে মঙ্গলবার একই অভিযোগে হাসপাতালটির উত্তরা শাখা ও চেয়ারম্যানের কার্যালয়ও বন্ধ করে দেয় র্যাব। # কাশেম