দূরবীণ নিউজ প্রতিনিধি :
উচ্চ আদালতের নির্দেশনার আলোকে রাজধানীর বাড্ডায় অবৈধ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়েছেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। রাজধানীতে পাঁচটি বেসরকারি হাসপাতালে এ অভিযান পরিচালানাকালে ৩টি হাসপাতালে অনিয়ম পাওয়ায় ১ লাখ ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। রোববার (২৯ মে) দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত এ অভিযান পরিচালনা করে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক ফাহমিনা আক্তার।
তিনি গণমাধ্যমকে জানান, নানা অনিয়ম, জালিয়াতি,প্রতারণা, মেয়াদোত্তীর্ণ কিট- ওষুধ বিক্রি এবং জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতির ওষুধ ও উপকরণ ব্যবহারের সুনিদিষ্ট অভিযোগে ‘উত্তর বাড্ডার ডগমা হাসপাতাল লিমিটেড’কে ৫০ হাজার টাকা, ‘বাড্ডা জেনারেল হাসপাতাল’কে ২০ হাজার টাকা ও মধ্য বাড্ডার ‘আদর্শনগরে মেডিলিংক হাসপাতাল’কে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, অভিযানে দেখা যায়, মধ্য বাড্ডার মেডিলিংক হাসপাতালটি একটি আবাসিক ভবন নিয়ে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিল। নামে হাসপাতাল হলেও একটি হাসপাতালে যা যা থাকা দরকার এর অনেক কিছুই নেই হাসপাতালটিতে।
অভিযানে মেডিলিংক হাসপাতালের ল্যাবে গিয়ে সব থেকে বড় অনিয়মটির খোঁজ পান ভোক্তা অধিকারের অভিযানিক দল। ল্যাবে দেখা যায় ২০২০ সালে মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়া কিট দিয়ে এখানে জন্ডিস ও টাইফয়েডের পরীক্ষা করা হচ্ছে। এ বিষয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া হলে তারা কিছুই বলতে পারেননি। পরে ভোক্তা অধিকারের সহকারী পরিচালক ফাহমিনা আক্তার হাসপালটিকে জাতীয় ভোক্তা অধিকার আইন-২০০৯ এর ৫১ ধারায় ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেন।
এরপর উত্তর বাড্ডা জেনারেল হাসপাতালে অভিযান পরিচালনা করেন ফাহমিনা আক্তার। অভিযানে সেখানে ২০২০ সালে মেয়াদোত্তীর্ণ সার্জিক্যাল সুতা, বেøড ও মেডিকেল সামগ্রী পাওয়া যায়। এছাড়া হাসপাতালের ফার্মেসিতে এমন ওষুধ পাওয়া গেছে, যেগুলোর মূল্য তালিকা নেই। এসব অনিয়মের কারণে ভোক্তা অধিকার আইন-২০০৯ এর ৫১ ধারায় হাসপাতালটিকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
সহকারী পরিচালক ফাহমিনা আক্তার জানান,বাড্ডা জেনারেল হাসপাতাল ও মেডিলিংক হাসপাতালের লাইসেন্স ছিল। এ দুটি হাসপাতালের আগে উত্তর বাড্ডার ডগমা হাসপাতাল লিমিটেডকে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ ও কিট রাখার দায়ে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
অভিযানে দেখা যায়, হাসপাতালটির ল্যাবে পুরোনো কিট পাওয়া যায়। যেগুলো দিয়ে রোগীদের ইউরিন টেস্ট করা হতো। এছাড়া হাসপাতালটির নিজস্ব ফার্মেসিতে কয়েক ধরনের ওষুধের মেয়াদোত্তীর্ণ ছিল। পরে ভোক্তা-অধিকারের আইনে হাসপাতালটিকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক ফাহমিনা আক্তার হাসপাতাল মালিকদের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনাদের সচেতন হতে হবে। কয়েক বছর আগে মেয়াদ শেষ হয়েছে এমন কিট প্রত্যাশিত না। এ কিট দিয়ে পরীক্ষার সঠিক তথ্য আসবে না। এতে মানুষ প্রতারিত হবে।
চট্টগ্রামে ৩ ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিক বন্ধের নির্দেশ:
এদিকে হাসপাতালের লাইসেন্সসহ সঠিক কাগজপত্র না পাওয়া, নিয়ম না মেনে হাসপাতাল পরিচালনা করা, অপরিষ্কার-অপরিচ্ছন্ন পরিবেশসহ বিভিন্ন অভিযোগে চট্টগ্রাম শহরের ৩টি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধ করে দিয়েছে চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন অফিস।
রোববার (২৯ মে) চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াস চৌধুরীর নেতৃত্বে অভিযান পরিচালনা করে ওই ৩টি হাসপাতাল বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াস চৌধুরী। তিনি বলেন, পাঠানটুলীর মিড পয়েন্ট হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে অভিযান পরিচালনা করে সঠিক কাগজপত্র পাওয়া যায়নি। তাই হাসপাতালটির সব কার্যক্রম বন্ধ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, বড়পোল মোড়ের কোয়েস্ট মেডিকেল সার্ভিস অ্যান্ড ডায়াগনেস্টিক সেন্টারেও অভিযান চালিয়ে অনিয়ম পাওয়া গেছে।
এ প্রতিষ্ঠানটিকেও বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। এছাড়া হালিশহরের হাই- টেক প্যাথলজি সেন্টারে অভিযান চালিয়ে কাগজপত্র ঠিক না পাওয়ায় প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। এই ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও জানিয়েছেন সিভিল সার্জন।