রবীণ নিউজ প্রতিনিধি:
হঠাৎ প্রায় ৩০ হাজার গ্রাহকের মূল্যবান নথি গায়েবের ঘটনায় রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) কাছে সন্তোষজনক ব্যাখ্যা চেয়েছেন হাইকোর্ট। উচ্চ আদালত একই সঙ্গে আগামী ৩০ দিনের মধ্যে রাজউক চেয়ারম্যানকে এ বিষয়ে হলফনামাসহ ব্যাখ্যা দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন। সোমবার (২ জানুয়ারি) দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা আবেদনের প্রেক্ষিতে হাইকোর্টের বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের সমন্বয়ে গঠিত দ্বৈত বে এই আদেশ জারি করেছেন। উচ্চ আদালতের আদেশের বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন দুদকের আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান।
অভিযোগ রয়েছে, ৩০ হাজার গ্রহকের ২০১৯ সালের মে থেকে ২০২২ সালের ৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত করা আবেদনের সাথে সংযুক্ত নকশাসহ আনুষঙ্গিক কাগজপত্র রাজউকের ওয়েবসাইটেই নথিপত্র খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। গ্রাহকরা ভবন নির্মাণের অনুমোদনের জন্য এসব আবেদন করে ছিলেন। কিন্তু রাজউকের সার্ভার থেকে কারা, কিভাবে, কেনো গ্রাহকের করা আবেদনের নথি গায়েব করেছে। এসব বিষয় নিয়ে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে জনমনে।
সোমবার হাইকোর্টের উক্ত বেে দুদকের আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান ‘৩০ হাজার গ্রহকের করা আবেদনের নথি রাজউকের ওয়েবসাইটে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না, মর্মে জাতীয় একটি দৈনিক প্রতিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন। পরে আদালত রাজউকের চেয়ারম্যানের কাছে এই বিষয়ে সন্তোষজনক ব্যাখ্যা চেয়েছেন।
আদালতে ওইসময় রাষ্ট্রপক্ষে উপস্থিত ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক। তিনি জানান, একটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনটিতে বলা হয়,রাজউকের সার্ভার থেকে প্রায় ৩০ হাজার গ্রাহকের নথি গায়েব হয়ে যাওয়ার ঘটনাটি তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। গত রোববার (১ জানুয়ারি) মন্ত্রণালয় থেকে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়।
সূত্র মতে, জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে রাজউকের আওতাধীন এলাকায় কোনো ভবন নির্মাণ করতে হলে এই সংস্থা থেকে ভূমি ব্যবহারের ছাড়পত্র ও নির্মাণের অনুমোদন নিতে হয়। এই কার্যক্রমের জন্য ব্যবহার করতে হয় রাজউকের ওয়েবসাইট। অনলাইনে নিবন্ধন করে ভবনের নকশাসহ আনুষঙ্গিক কাগজপত্র গ্রাহককে এই ওয়েবসাইটেই আপলোড করতে হয়। পরে যাচাই-বাছাইসহ প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া শেষে এই ওয়েবসাইটেই ভূমি ব্যবহারের ছাড়পত্র ও ভবনের নকশা আপলোড করে রাজউক। এগুলো ডাউনলোড করে ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করতে পারেন গ্রাহক।
২০১৯ সালের মে থেকে ২০২২ সালের ৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত ভবন নির্মাণের অনুমোদন পেতে আবেদনকারীদের নথিপত্র খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। কিন্তু বিষয়টি জানতে এখন পর্যন্ত তদন্ত কমিটি গঠন করেনি রাজউক। এতে সংস্থাটির সদিচ্ছা নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন।
এদিকে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন অনুবিভাগ-১) মো. অলিউল্লাহ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে রাজউককে একটি কমিটি গঠন করতে বলা হয়েছে। এই কমিটি ৭ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত শেষ করে মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন দেবে। নথি গায়েবের ঘটনায় সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে কি না, তদন্ত কমিটি তা বের করবে। একই সঙ্গে এ ঘটনায় কারা জড়িত কিংবা কোনও কারিগরি ত্রæটি ছিল কি না, সেটি অনুসন্ধান করবে কমিটি। পাশাপাশি কেউ ষড়যন্ত্র করে এ ঘটনা ঘটিয়েছে কি না, সেটিও দেখা হবে।
তবে গ্রাহকদের পক্ষ থেকে নানা অভিযোগ উঠেছে। তাদের মতে, ৬ ডিসেম্বর হঠাৎ রাজউকের ওয়েবসাইট অকার্যকর হয়ে যায়। কিন্তু এ ঘটনা নিছক কারিগরি ত্রæটি নাকি কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী জড়িত, সে বিষয়ে জানতে রাজউকের কোনো আগ্রহ নেই! অথচ এখন নতুন করে আবার আবেদন করতে গেলে দুর্নীতি, হয়রানির শিকার হতে হবে। রাজউকের এমন নীরব ভূমিকায়ই প্রশ্ন উঠেছে, তারা দুর্নীতি করতে ইচ্ছাকৃতভাবে নথিপত্র গায়েব করেছে।
বিপুল সংখ্যক আবেদন কীভাবে গায়েব হলো তা নিয়ে এখনো রাজউক অন্ধকারে রয়েছেন। গুরুত্বপূর্ণ এসব নথি পাওয়া না গেলে গ্রাহকরা নানা রকম ভোগান্তির শিকার হতে পারেন। তাই হারিয়ে যাওয়া সব নথি পুনরুদ্ধারে তারা চেষ্টা করে যাচ্ছেন। এ ঘটনায় থানায় জিডিও (সাধারণ ডায়েরি) করেছেন গ্রাহকরা। #