চলতি বছরের অগাস্টে মেসি ও রোনালদোকে হারিয়ে উয়েফা বর্ষসেরা ফুটবলারের পুরস্কারটি জিতে নেন লিভারপুলের ডাচ তারকা ফন ডাইক। তবে একমাস পরেই ফন ডাইক ও রোনালদোকে পেছনে ফেলে প্রথমবারের মতো ‘দ্য বেস্ট ফিফা মেনস প্লেয়ার’ পুরস্কারটি ঘরে তোলেন বার্সেলোনা তারকা। যে কারণে এবারের ব্যালন ডি’অরও মেসির হাতেই উঠছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
যদিও ব্যালন ডি’অরের লড়াইয়ে এই তিন জনের সম্ভাবনাই বেশি। গত সোমবার (২১ অক্টোবর) ব্যালন ডি’অর-২০১৯ এর জন্য ছয় ভাগে সংক্ষিপ্ত তালিকা প্রকাশ করে ফ্রান্স ফুটবল ম্যাগাজিন। এদিন বাংলাদেশ সময় রাত ১০টার পর থেকেই এসব তালিকা প্রকাশ করা শুরু করে ফ্রান্সের ম্যাগাজিনটি।
যে তালিকায় প্রত্যাশিতভাবে আছেন ক্রিস্তিয়ানো রোনালদো, লিওনেল মেসি ও ভার্জিল ফন ডাইক। তবে ৩০ জনের এ তালিকায় জায়গা হয়নি সময়ের অন্যতম সেরা ফুটবলার হিসেবে বিবেচিত পিএসজি ফরোয়ার্ড নেইমারের। নেই গতবারের সেরা লুকা মদ্রিচও। আগামী ২ ডিসেম্বর প্যারিসে বিজয়ীর হাতে তুলে দেওয়া হবে এবারের ব্যালন ডি’অর পুরস্কার।
এদিকে, এবারের ব্যালন ডি’অর মেসির হাতে ওঠার কারণ হিসেবে মেসির গত মৌসুমের পারফরম্যান্স ও দ্য বেস্ট ফিফা মেনস প্লেয়ার পুরস্কার পাওয়াকেই উল্লেখ করছেন সবাই। কেননা, বরাবরের মতো গত মৌসুমটা যে দারুণ কেটেছে মেসির। এ মৌসুমে বার্সেলোনাকে লা লিগা জেতাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন মেসি। একইসঙ্গে কাতালান ক্লাবটিকে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমি-ফাইনালে ও কোপা দেল রের ফাইনালে ওঠাতেও বড় অবদান ছিল আর্জেন্টাইন তারকার।
দলীয় থেকেও ক্লাব পর্যায়ে ব্যক্তিগত নৈপুণ্যে আরও বেশি উজ্জ্বল ছিলেন বার্সা অধিনায়ক। লা লিগায় সর্বোচ্চ ৩৬ গোল করে জিতে নেন পিচিচি ট্রফি ও ইউরোপিয়ান গোল্ডেন শু। চ্যাম্পিয়ন্স লিগেও করেন সর্বোচ্চ ১২ গোল। ক্যারিয়ারে রেকর্ড ষষ্ঠবারের মতো নির্বাচিত হন বর্ষসেরা ফুটবলার হিসেবে।
যদিও জাতীয় দলের হয়ে মৌসুমটা অবশ্য ভালো কাটেনি তার। কোপা আমেরিকার সেমি-ফাইনালে ব্রাজিলের কাছে হেরে যায় তার দেশ আর্জেন্টিনা। তবে ক্লাব ও জাতীয় দলের হয়ে গত মৌসুমে সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ৫৮ ম্যাচ খেলে ৫৪ গোল করেন মেসি। তাইতো নিজের পঞ্চম ব্যালন ডি’অর ঘরে তুলতে যাচ্ছেন মেসিই।
অন্যদিকে, যুভেন্টাসের হয়ে প্রথম মৌসুমটা বেশ ভালো কাটে রোনালদোর। দলের টানা অষ্টম সেরি আ শিরোপা জয়ে রাখেন বড় অবদান। ২০১৮-১৯ মৌসুমে সেরি আয় ২১টিসহ সব প্রতিযোগিতা মিলে ক্লাবের পক্ষে সর্বোচ্চ ২৮ গোল করেন পাঁচবারের বর্ষসেরা এই ফুটবলার। গত মৌসুমে সেরি আর সবচেয়ে মূল্যবান খেলোয়াড়ও নির্বাচিত হন পর্তুগিজ তারকা।
জাতীয় দলের হয়েও মৌসুমটা দারুণ কাটে রোনালদোর। গত জুনে তার নেতৃত্বে উয়েফা নেশন্স লিগ জিতে পর্তুগাল। সেমি-ফাইনালে দুর্দান্ত এক হ্যাটট্রিক করেন ৩৪ বছর বয়সী তারকা।
২০১৮ সালের জানুয়ারিতে সাউথ্যাম্পটন থেকে লিভারপুলে যোগ দেওয়া ফন ডাইকের গত মৌসুমটা এককথায় কেটেছে অভাবনীয়। লিভারপুলের চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয়ে তার ভূমিকা ছিল ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ।
ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের গত আসরে সবচেয়ে কম ২২ গোল হজম করে লিভারপুল। এমন জমাট রক্ষণের মূল কারিগর ছিলেন ফন ডাইক। আক্রমণেও ভূমিকা ছিল তার; ক্লাব ও জাতীয় দলের হয়ে এসময়ে ৯টি গোল করার পাশাপাশি চারটিতে অবদান রাখেন তিনি।
ইউরোপা নেশন্স লিগের অভিষেক আসরে নেদারল্যান্ডসের ফাইনালে ওঠাতেও বড় অবদান ছিল ফন ডাইকের। শিরোপা লড়াইয়ে পর্তুগালের কাছে হেরে যায় তারা।
গত মৌসুমে শেষ দিকের গুরুত্বপূর্ণ সময়ে চোটের কারণে দুই মাসের বেশি চোটের কারণে বাইরে ছিলেন নেইমার। আরেক দফা চোটের কারণে ব্রাজিলের কোপা আমেরিকা জয়ের মিশনেও ছিলেন না তিনি।
১৯৫৬ সাল থেকে ইউরোপের সেরা খেলোয়াড়কে ব্যালন ডি’অর পুরস্কার দেওয়া চালু হয়। ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত পুরস্কারটি শুধু ইউরোপের খেলোয়াড়দেরই দেওয়া হতো। এর পর থেকে ইউরোপে খেলা বিশ্বের যে কোনো খেলোয়াড়ের জন্য পুরস্কারটি উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। আর ২০০৭ সাল থেকে ইউরোপের সেরা নয়, পুরস্কারটি দেয়া হতে থাকে বিশ্বের সেরা ফুটবলারকে।
ফিফার বর্ষসেরা পুরস্কার আর ফ্রান্স ফুটবলের ব্যালন ডি’অর একীভূত হয়েছিল ২০১০ সালে। ফিফার সঙ্গে চুক্তি শেষ হয়ে যাওয়ায় ২০১৬ সাল থেকে আবার একাই ব্যালন ডি’অর দেওয়া শুরু করে ফ্রান্স ফুটবল। ব্যালন ডি’অর জয়ী নির্ধারণ করা হয় সাংবাদিকদের ভোটে।
২০১৯ ব্যালন ডি’অরের ৩০ জনের সংক্ষিপ্ত তালিকা:
সাদিও মানে (লিভারপুল/সেনেগাল), সার্জিও আগুয়েরো (ম্যানচেস্টার সিটি/আর্জেন্টিনা), ফ্রেংকি ডি ইয়ং (বার্সেলোনা/নেদারল্যান্ডস), উগো লরিস (টটেনহ্যাম হটস্পার/ফ্রান্স), দুসান তাদিচ (আয়াক্স/সার্বিয়া), কিলিয়ান এমবাপে (পিএসজি/ফ্রান্স), ট্রেন্ট অ্যালেকজান্ডার-আর্নল্ড (লিভারপুল/ইংল্যান্ড), ডনি ফন ডি বিক (আয়াক্স/নেদারল্যান্ডস), পিয়েরে-এমেরিক আউবামেয়াং (আর্সেনাল/গ্যাবন), মার্ক-আন্দ্রে টের স্টেগেন (বার্সেলোনা/জার্মানি), ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো (জুভেন্টাস/পর্তুগাল), আলিসন (লিভারপুল/ব্রাজিল), মাটাইস ডি লিখট (জুভেন্টাস/নেদারল্যান্ডস), করিম বেনজেমা (রিয়াল মাদ্রিদ/ফ্রান্স), জর্জিনিয়ো ভিনালডাম (লিভারপুল/নেদারল্যান্ডস), ভার্জিল ফন ডাইক (লিভারপুল/নেদারল্যান্ডস), বের্নার্দো সিলভা (ম্যানচেস্টার সিটি/পর্তুগাল), সন হিউং-মিন (টটেনহ্যাম হটস্পার/দক্ষিণ কোরিয়া), রবের্ত লেভানদভস্কি (বায়ার্ন মিউনিখ/পোল্যান্ড), রবের্তো ফিরমিনো (লিভারপুল/ব্রাজিল), রিয়াদ মাহরেজ (ম্যানচেস্টার সিটি/আলজেরিয়া), লিওনেল মেসি (বার্সেলোনা/আর্জেন্টিনা) কেভিন ডি ব্রুইনে (ম্যানচেস্টার সিটি/বেলজিয়াম), কালিদু কলিবালি (নাপোলি/সেনেগাল), অঁতোয়ান গ্রিজমান (বার্সেলোনা/ফ্রান্স), মোহামেদ সালাহ (লিভারপুল/মিশর), এদেন আজার (রিয়াল মাদ্রিদ/বেলজিয়াম), মার্কিনিয়োস (পিএসজি/ব্রাজিল), রাহিম স্টার্লিং (ম্যানচেস্টার সিটি/ইংল্যান্ড) ও জোয়াও ফেলিক্স (আটলেটিকো মাদ্রিদ/পর্তুগাল)।
শেষ ১০ বারের বর্ষসেরা ফুটবলার:
একীভূত ফিফা ব্যালন ডি’অর
২০১০ লিওনেল মেসি
২০১১ লিওনেল মেসি
২০১২ লিওনেল মেসি
২০১৩ ক্রিস্তিয়ানো রোনালদো
২০১৪ ক্রিস্তিয়ানো রোনালদো
২০১৫ লিওনেল মেসি
দ্য বেস্ট ফিফা মেনস প্লেয়ার ব্যালন ডি’অর
২০১৬ ক্রিস্তিয়ানো রোনালদো ক্রিস্তিয়ানো রোনালদো
২০১৭ ক্রিস্তিয়ানো রোনালদো ক্রিস্তিয়ানো রোনালদো
২০১৮ লুকা মদ্রিচ লুকা মদ্রিচ
২০১৯ লিওনেল মেসি