দূরবীণ নিউজ প্রতিবেদক:
ঢাকার দুই সিটির মেয়র এবং কর্মকর্তারা নগরীর জলাবদ্দতা নিরসন এবং ঢাকা ওয়াসা থেকে প্রাপ্ত খালগুলো পরিস্কার ও অবৈধ স্থাপনা নিয়ে বেশি ব্যস্ততম সময় অতিবাহিত করছেন। আর এই সুযোগে মশা মারার কার্যক্রম অনেকটাই জিমিয়ে পড়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
বর্তমানে পুরো রাজধানীতেই অস্বাভাবিক বেড়েছে মশার উপদ্রব।এখন শুরু রাতে নয়, দিনের বেলাও ঝাঁকে ঝাঁকে মশা নগরবাসীর বাসা বাড়ি এবং অফিসে ঢুকে পড়ছে। কিন্তু ঢাকা দুই সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে মশা নিয়ন্ত্রণের কার্যক্রম অনেকটা জিমিয়ে পড়েছে।
রোববার (১৭ জানুয়ারি) দুপুরে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সেলিম রেজা এই প্রতিনিধির কারেছ নগরীতে মশার উপদ্রব বৃদ্ধির বিষয়টি স্বীকার করেছেন। তিনি বলেছেন, গত ১৫ দিন যাবৎ মশারি টানিয়ে ঘুমান। এরআগে মশারি টানাতে লাগতো না।
তিনি ডিএনসিসিতে মশক নিধনে জনবল সংকটের বিষয়ে বলেছেন, বেশ কিছু লোক নিয়োগের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। নতুন জনবল নিয়োগের পর আর জনবলের সংকট থাকবে না।
মশার ওষুধ প্রসঙ্গে ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, আগে নিম্মমানের ওষুধ সরবরাহের অভিযোগে ‘এসিআই কোম্পানিসহ’ বেশ কয়জন ঠিকাদারকে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।
বর্তমান মেয়রের নির্দেশে ভালমানের ওষুধ সরাসরি চীন থেকে আনা হচ্ছে। তিনি বলেন, শিগগিরই মশা নিয়ন্ত্রণের কার্যক্রম জোরদার করা হচ্ছে। কয়দিন আগেও মশা নিয়ন্ত্রণে ছিল।
এদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি মেয়রের মুখপাত্র ও জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আবু নাছের এই প্রতিনিধিকে বলেন, সম্প্রতি নগরীতে মশার উৎপাত বেড়েছে এটা সত্য। তবে মশা নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য মেয়র মহোদয়ের নির্দেশে স্বাস্থ্য বিভাগের মশক নিধন কর্মীরা কাজ করছেন। তিনি বলেন, মশার ওষুধের সংকট নেই।
তিনি বলেন, বর্তমান মেয়রের নির্দেশে এখন সরাসরি ভারত থেকে মশার ওষুধের কাাঁচামালা আমদানি করা হচ্ছে। আর এসিআই কোম্পানির ফরমূলায় মশার ওষুধ তৈরি করা হয়।
এদিকে আজ রোববার (১৭ জানুয়ারি) দুপুরে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেছেন, ‘এবার ঢাকায় কিউলেক্স মশা ও এডিস মশার প্রাদুর্ভাব কমেছে। ফলে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। দুই বছর আগে রাজধানীর ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া পরিস্থিতি চরমে পৌঁছালে নড়ে চড়ে বসে দুই সিটি করপোরেশন। সে সময় সিটি করপোরেশনের গাফলতি, মশার ওষুধের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন উঠে।’
অপরদিকে মশা গবেষক ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) কীটতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক কবিরুল বাশার গণমাধ্যমকে বলেছেন, সঠিকভাবে পুরো ঢাকায় কীটনাশক ছিটানো না গেলে আগামী বর্ষার আগেই কিউলেক্স মশা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে ।
তিনি বলেন,‘এখন কিউলেক্স মশার সিজন। এখন যা অবস্থা আছে যদি র্যাপিড অ্যাকশন না নেয়া হয়, তাহলে আগামী মার্চ মাস পর্যন্ত এটা বাড়তেই থাকবে। র্যাপিড অ্যাকশন বলতে আমরা যেটা বুঝি, সেটা হলো পরিবেশগত ব্যবস্থাপনায় নজর দিতে হবে। যেমন- ড্রেন, ডোবা, নর্দমা, খাল, বিল এগুলোতে যে কচুরিপানা বা ময়লা আছে, সেগুলো পরিষ্কার করে মশার লার্ভিসাইড প্রতি সাতদিন পরপর দিতে হবে।’
অধ্যাপক কবিরুল বাশার বলেন,‘কীটনাশকে কাজ হচ্ছে কিনা, টাইমলি ওষুধ ছিটানো হচ্ছে না। মশার জীনগত পরিবর্তন হিসাব করেই নতুন ইনসেক্টিসাইড সিলেকশন করে সেগুলো টেস্ট করেই প্রয়োগ করা প্রয়োজন। নিয়মতান্ত্রিকভাবে, বিজ্ঞানভিত্তিক উপায়ে, সঠিক ডোজ, সঠিক মাত্রায়, সঠিক সময়ে কীটনাশক প্রয়োগ করা প্রয়োজন।
তিনি বলেন, নগরীর প্রতিটা ওয়ার্ড বা এলাকায় ড্রেনগুলো মশা জন্ম নেয়। ওইসব এলাকায় মশা জন্মানোর স্থানে লার্ভিসাইড, পরিষ্কার করা ও অ্যাডাল্টি সাইড বা ফগ ইন একসঙ্গে দিতে হবে। এটাকে বলে ব্লাঙ্কেট অ্যাপ্রোচ। অন্যথায় মার্চে মশার উপদ্রব বাড়তে বাড়তে চরমে পৌঁছাবে।’#