দূরবীণ নিউজ প্রতিনিধি :
চীনের তাইশান মেডিকেলের এমবিবিএস পাসের ভুয়া সনদ ব্যবহার করে ডাক্তার হিসেবে রেজিস্ট্রেশ নেওয়া ৭ চিকিৎসককে গ্রেফতার করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গ্রেফতার হওয়া ভুয়া চিকিৎসকরা হলেন, ইমান আলী, সুদেব সেন, তন্ময় আহমেদ, মোক্তার হোসেন, কাওছার, রহমত আলী ও মাসুদ পারভেজ।তারা দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত।
বুধবার (১৯ জানুয়ারি) দুপুরে সেগুনবাগিচা এলাকা থেকে দুদকের উপ-পরিচালক সেলিনা আখতার মনির নেতৃত্বে একটি টিম ভুয়া সনদধারী ৭ চিকিৎসককে গ্রেফতার করেছে।
দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা ও উপপরিচালক মুহাম্মদ আরিফ সাদেক গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি আরো জানান, ২০২০ সালের ২ ডিসেম্বর ভুয়া ১২ চিকিৎসক, বিএমডিসির ২ কর্মকর্তাসহ ১৪ জনকে আসামী করে একটি মামলা করে দুদক। ওই মামলায় আজ ভুয়া সনদধারী ৭ চিকিৎসককে গ্রেফতার করেছে দুদক।
দুদকের আসামিরা হলেন- বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের রেজিস্ট্রার মো. জাহিদুল হক বসুনিয়া ও প্রশাসনিক কর্মকর্তা মোহাম্মদ বোরহান উদ্দিন। এছাড়া অপর ১২ জন বাংলাদেশি ছাত্র চীনের তাইশান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিবিএস পাসের ভুয়া সনদ দেখিয়েছেন তাদেরও আসামি করা হয়। তারা হলেন- কুমিল্লা জেলার মো. ইমান আলী ও মোহাম্মদ মাসুদ পারভেজ, সাতক্ষীরার সুদেব সেন, টাঙ্গাইলের তন্ময় আহমেদ, ভোলার মো. মাহমুদুল হাসান, চাঁদপুরের মো. মোক্তার হোসাইন, ঢাকার মো. আসাদ উল্লাহ, গাজীপুরের মো. কাউসার, নারায়ণগঞ্জের রহমত আলী, বাগেরহাটের শেখ আতিয়ার রহমান, ফেনীর মো. সাইফুল ইসলাম ও সিরাজগঞ্জের মো. আসলাম হোসেন।
আসামীরা টুরিস্ট ভিসায় চীনে ঘুরতে গিয়ে স্কুল অব ইডুকেশন তাইশান মেডিকেলে না পড়েই ভুয়া সনদ তৈরি করে।পরে মেডিকেল কর্তৃপক্ষ খোঁজ নিয়ে জানান, সনদে করা স্বাক্ষর জাল এবং নিখুতভাবে যাচাই করে সনদগুলো মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। বর্তমানে তারা বিএমডিসির অনুমোদন নিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত রয়েছে। গত ৩রা জানুয়ারি আসামীদের মধ্যে মাহমুদুল হক নামের একজন হাইকোর্টে আগাম জামিন চাইতে গেলে, তার জামিন আবেদন গ্রহণ না, তাকে গ্রেফতার করে জেলহাজতে পাঠানো আদেশ দেন আদালত। একইসাথে বাকি আসামীদের দ্রæত গ্রেফতারের নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট।
এ বিষয়ে দুদক সচিব মো. মাহবুব হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, রেকর্ডপত্র যাচাইকালে দেখা যায়, তাদের এমবিবিএস সার্টিফিকেটগুলো ভুয়া। ১২ জন এমবিবিএস ডিগ্রিধারীর সনদ ভুয়া। এমবিবিএস সনদধারী ওই ব্যক্তিরা কখনও চীনের তাইশান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করেননি। ভুয়া ডাক্তারের সনদ থাকার অভিযোগে তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে। আজকে সাতজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর সঙ্গে সরকারি যে সব কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সম্পৃক্ততা পাওয়া যাবে, তাদের বিষয়ে তদন্ত পর্যায়ে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মামলার এজাহারে বলা হয়, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে জালজালিয়াতি ও মিথ্যা তথ্য দিয়ে ভুয়া এমবিবিএস সনদ ব্যবহারের মাধ্যমে চিকিৎসক হিসেবে রেজিস্ট্রেশন সনদ গ্রহণ করে। যা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। ওই ১২ জন বাংলাদেশি ছাত্র চীনের তাইশান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিবিএস পাস করে বলে জানায়।
তারা ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভুয়া এমবিবিএস সনদ ব্যবহার করে বিভিন্ন তারিখে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল কর্তৃক গৃহীত রেজিস্ট্রেশন যোগ্যতার পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করে। উত্তীর্ণ হয়েছেন এই বলে চিকিৎসক হিসেবে নিবন্ধন নম্বর গ্রহণ করে দেশের বিভিন্ন মেডিকেল কলেজে ইন্টার্ন অনুশীলন এবং বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত আছেন। রেকর্ডপত্র যাচাইকালে দেখা যায়, তাদের এমবিবিএস সার্টিফিকেটগুলো ভুয়া।
এজাহারে আরও বলা হয়, এমবিবিএস সনদের সঠিকতা যাচাই করার জন্য সনদপত্রগুলোর অনুলিপি বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে তাইশান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠায় দুদক। এর পরিপ্রেক্ষিতে চীনের বেইজিংয়ে বাংলাদেশ দূতাবাসের মাধ্যমে ওই সনদপত্রগুলো যাচাইপূর্বক বাংলাদেশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, ইস্ট এশিয়া অ্যান্ড প্যাসিফিক সেকশনে বিগত ২০১৯ সালের ২১ জানুয়ারি দুদকে রেকর্ডপত্র পাঠায়। প্রাপ্ত রেকর্ডপত্র পর্যালোচনায় দেখা যায় যে, স্কুল অফ ইন্টারন্যাশনাল এডুকেশন তাইশান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের মতে উল্লিখিত ১২ জন এমবিবিএস ডিগ্রিধারীর এমবিবিএস সনদ ভুয়া।
#