দূরবীণ নিউজ প্রতিবেদক :
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেছেন, আমাদের মহান ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ এগুলো অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ শেখায় । মহান ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধ আমাদের সর্বশ্রেষ্ঠ অর্জন।
শুক্রবার (২১ ফেব্রুয়ারি) দুদকের প্রধান কার্যলয়ে ভাষা শহীদদের স্মরণে আয়োজিত আলোচনা সভায় দুদক চেয়ারম্যান এসব কথা বলেন।
ইকবাল মাহমুদ বলেন, ভাষা আন্দোলনে যারা শহীদ হয়েছে এবং যারা এ আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছেন তাদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানান। একই সময় হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি তিনি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন্ করেন।
দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ভাষার জন্য বা স্বাধীনতার জন্য কেন এতো প্রাণ বিসর্জন হলো ? আসলে এটা ছিল প্রতিবাদ। প্রতিবাদকে হত্যার মাধ্যমে দমন করার চেষ্টার কারণেই এতো প্রাণ বিসর্জন। এই বিষয়টি আমাদের অনুধাবন করতে হবে। এসব আত্মত্যাগের অর্ন্তনিহিত তাৎপর্য হচ্ছে অন্যায়ের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ।
তিনি বলেন, নিগৃহীত হয়ে রাস্তায় পড়ে আছেন এমন মানুষকে দেখেও না দেখার ভান করে চলে যাওয়ার ঘটনা যখন শুনি, তখন কেন যেন মনে হয় অন্যায়ের প্রতিবাদ করাটা কি আমরা ভুলে যাচ্ছি।
তিনি বলেন, জাতিগঠনে সবচেয়ে বড় প্রয়োজন শৃঙ্খলা, সততা, নিষ্ঠা, মানুষের প্রতি দৃঢ় অঙ্গীকার। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য আমার মনে হয় – এগুলোতেও আমাদের কিছুটা ঘাটতি এখনও রয়ে গেছে।
তিনি বলেন, পত্রিকায় যখন কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের অবমাননার সংবাদ দেখি। তখন এক অব্যক্ত মানসিক যন্ত্রণা অনুভব করি। সারা বছর শহীদ মিনার দেখতে দেশি-বিদেশি অনেক মানুষ আসেন। তাই , সারা বছর এর পবিত্রতা রক্ষার জন্য সার্বক্ষণিক ব্যবস্থাপনা থাকার আশাবাদ ব্যক্ত করেন দুদক চেয়ারম্যান।
তিনি বলেন, এ বছর মুজিব শতবর্ষ। স্বাভাবিকভাবেই ইতিহাসের মহানায়ক জাতির পিতাকে নিয়ে অনেক আলোচনা হবে ।
তিনি দুদক কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে বলেন, জাতির পিতা দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ বিনির্মাণে দুর্নীতিবিরোধী সামাজিক আন্দোলনের ডাক দিয়েছিলেন। আসুন, বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে লালন করে-নিজেকে দুর্নীতিমুক্ত রেখে, দুর্নীতি দমনে আত্মনিয়োগ করি।
দুদক চেয়ারম্যান বলেন, শহীদদের রক্তদান আমাদের অন্যায়ের প্িরতবাদ করার শিক্ষা দেয়। আপনাদের দায়িত্ব হবে নিজ নিজ দপ্তরের অন্যায়কে প্রতিহত করা। আপনার সম্পূর্ণ নির্মোহভাবে জ্ঞান-বুদ্ধি বিবেচনা করে তদন্ত প্রতিবেদন দিবেন। মনে রাখবেন অপরাধ দমনে বস্তুÍনিষ্ঠ তদন্ত প্রতিবেদন প্রণয়ন করা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ।
এ দায়িত্বপালনে আপনারা হবেন নির্মোহ। নিজের বিবেক , আইনি যুক্তি-প্রতিযুক্তির মাধ্যমে তদন্তে প্রকৃত সত্য উদঘাটন করবেন । তাহলেই সকলের প্রতি ন্যায় বিচার নিশ্চিত হবে।
তিনি বলেন, দুর্নীতি দমন কমিশন রাষ্ট্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান । মানুষ তখনই এই প্রতিষ্ঠনটিকে গুরুত্ব দিবে, যখন আপনাদের কাজের মাধ্যম মানুষ অনুধাবন করবে -দায়িত্ব পালনে আপনাদের অঙ্গীকার রয়েছে। আপনারা সততা, নিষ্ঠা ও সুচারুরূপে দায়িত্ব পালন করেন। মানুষের কল্যাণে আপনাদের অবদান আছে, তবেই এই গুরুত্ব টেকসই হবে।
আলোচনাসভায় দুদক কমিশনার ড. মো ঃ মোজামোমল হক খান বলেন, ২১ শে ফেব্রুয়ারি একসময় ছিল শুধু বাংলাদেশের গর্বের বিষয়, এখন বিশ^বাসীর গর্বের বিষয়। জাতি হিসেবে এটা আমাদের সত্যিই গর্বের ।
তিনি বলেন, আমাদের দুর্ভাগ্য যখন শুনি কোনো কোনা বাঙালি পিতা-মাতা গর্ব করে বলেন, ‘আদের সন্তান ইংরেজিতেই কথা বলে, ভালো বংলা বলতে জানে না।’ আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি এটা দুঃখজনক ও দূর্ভাগ্যজনক। ভুলে ভরা অনেকের ইংরেজি কথা শুনি, অনেকের এমন ইংরেজি লেখাও দেখি। এগুলো নিয়ে মন্তব্যও করতে চাই না।
দুদক চেয়ারম্যান বলেন , আমাদের দেশের সম্মানিত চিকিৎসকগণ যদি অনুগ্রহ করে ব্যবস্থাপত্রটি বাংলায় লেখেন, তাহলে আমাদের দেশের সামান্য অক্ষরজ্ঞান সম্পন্ন মানুষকে ব্যবস্থাপত্র বুঝতে অন্যের দ্বারস্থ হতে হয় না।
তিনি বলেন, আমরা বার বার অঙ্গীকার করি আবার তা ভঙ্গ করি । তাই আসুন, শুদ্ধ বাংলা চর্চায় অঙ্গীকারাবদ্ধ হই। নিজেরা শুদ্ধ বাংলা জানার চেষ্টা করি। অঙ্গীকার রক্ষা করি।
দুদক কমিশনার এ এফ এম আমিনুল ইসলাম বলেন, কথন, নাটক, চলচ্চিত্রসহ বিভিন্ন মাধ্যমে বাংলা ভাষার বিকৃতি দেখে আমরা বিস্মিত হই । ভাষার এই কদর্য বিকৃতি ভাষার প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনের নিদর্শন হতে পারে না। আঞ্চলিক ভাষা বা বিকৃত ভাষা থাকবে কিন্তু তা মুখ্য ভাষা হতে পারে না।
তিনি বলেন, দুঃখজনক হলেও সত্য আমরা এই কঠিন সময় পার করছি। এর অবসান হওয়া উচিত। ভাষা শহীদদের শুধু একদিনের জন্য স্মরণ না করে, ৩৬৫ দিনই তাদের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধাবোধ থাকা উচিত।
দুদক সচিব মুহাম্মদ দিলোয়ার বখ্ত ভাষা শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, তাদের এই মহান আত্মত্যাগের তাৎপর্য আমাদের হৃদয়ে ধারণ করতে হবে। তাহলেই তাদের প্রতি প্রকৃত শ্রদ্ধা প্রদর্শন করা হবে।
সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন দুদকের তদন্ত অনুবিভাগের মহাপরিচালক মোঃ জাকির হোসেন, দুদকের সম্পদ ব্যবস্থাপনা শাখার পরিচালক মোঃ মনিরুজ্জামান খান, ঢাকা বিভাগী কার্যালয়ের পরিচালক মোঃ আকতার হোসেন, উপপরিচালক এএসএম সাজ্জাদ হোসেন, মোঃ রফিকুল ইসলাম প্রমুখ। # কাশেম