দূরবীণ নিউজ প্রতিবেদক :
পরিবেশকে টেকসই রাখতে প্রাকৃতিক বাস্তুসংস্থান এবং জীববৈচিত্র্যকে গুরুত্ব দিয়ে শহর, গ্রাম, হাওর ও বনাঞ্চলের স্থায়িত্বশীল পরিকল্পনা প্রয়োজন। একইসাথে সমগ্র দেশের জন্য জাতীয় ভৌত পরিকল্পনার মাধ্যমে দেশের কৃষিজমি, সংরক্ষিত বনাঞ্চল সংরক্ষণের পাশাপাশি অর্থনৈতিক অঞ্চল ও শিল্প অঞ্চল সুনির্দিষ্ট করার মাধ্যমে টেকসই পরিবেশ নিশ্চিত করার সাথে সাথে উন্নত বাংলাদেশ বিনির্মাণ সম্ভব।
বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বিআইপি)আয়োজিত ‘পরিবেশ ও পরিকল্পনা’ শীর্ষক পরিকল্পনা সংলাপে পরিকল্পনাবিদ, পরিবেশ বিশেষজ্ঞ সহ অন্যান্যের এই অভিমত প্রদান করেন। বিআইপি’র সাধারণ সম্পাদক পরিকল্পনাবিদ ডঃ আদিল মুহাম্মদ খান এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত পরিকল্পনা সংলাপে বৈশ্বিক করোনা মহামারীর প্রেক্ষিতে উন্নয়নের বস্তুগত ধারণাকে প্রাধান্য না দিয়ে প্রকৃতিগত বিষয়সমূহকে ভৌত পরিকল্পনায় অধিক গুরুত্ব দেয়া উচিত বলে বক্তারা মতামত দেন।
পরিবেশ অধিদপ্তর এর পরিকল্পনা শাখার উপ-পরিচালক হাসান হাসিবুর রহমান বলেন, বাংলাদেশের মত অধিক জনসংখ্যার দেশে পরিবেশ সংক্রান্ত বিভিন্ত মাত্রার সমস্যার তদারকি করা সীমিত জনবল নিয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর এর জন্য অত্যন্ত দুরূহ হলেও এ ব্যাপারে প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
তদুপরি সমাজ ও প্রতিষ্ঠানের সকল ক্ষেত্রে নৈতিকতার চর্চা প্রতিষ্ঠিত হলে টেকসই পরিবেশ নিশ্চিত করতে পরিবেশ অধিদপ্তর এর জন্য কাজ করা আর ও সহজ হত।
পরিকল্পনা সংলাপে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবি সমিতি (বেলা)’র নির্বাহী পরিচালক এডভোকেট সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন বাংলাদেশে বিদ্যমান পরিবেশ দূষনের পেছনে প্রয়োজনীয় আইনি কাঠামো, আইনের বাস্তবায়ন ও সঠিক পরিকল্পনার অভাব – সবগুলো অনুষঙ্গের দায় আছে।
একইসাথে প্রকৃত অর্থে গণতন্ত্রের অনুপস্থিতি,প্রাতিষ্ঠানিক জবাবদিহিতার অভাব এবং জনমতের গুরুত্বকে প্রাধান্য না দিয়ে ভৌত পরিকল্পনা প্রণয়ন এর কারণে আমাদের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য অরক্ষিত হয়ে পড়েছে। প্রাকৃতিক দূর্যোগ মোকাবেলায় সুন্দরবন রক্ষার অপরিহার্যতার কথা তুলে ধরে কয়লাভিত্তিক রামপাল প্রকল্পের পরিবেশগত প্রভাব বিবেচনায় নিয়ে এই প্রকল্প নিয়ে সরকারের নতুন করে ভাবনার প্রয়োজন রয়েছে বলে মত দেন বেলার নির্বাহী পরিচালক।
ইউএস-এইড এর পরিবেশ সংক্রান্ত প্রকল্প ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ পরিকল্পনাবিদ শাহাদাত হোসেন শাকিল বলেন পরিবেশকে স্থায়িত্বশীল করতে শহর, গ্রাম ও বনাঞ্চল পরিকল্পনায় জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে গুরুত্ব প্রদান করা প্রয়োজন। একইসাথে শহরের ভৌত পরিকল্পনায় প্রকৃতি ও বাস্তুসংস্থানকে গুরুত্ব দেবার সাথে সাথে সঠিক পরিকল্পনা প্রণয়নে পরিকল্পনাবিদদের জ্ঞান কাজে লাগানোর জন্য সরকার ও নীতিনির্ধারকদের প্রয়োজনীয় প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো গড়ে তোলা দরকার।
অষ্ট্রেলিয়ার ভিক্টোরিয়া রাজ্যের পরিবেশ ও পরিকল্পনা বিভাগের সিনিয়র পরিকল্পনা কর্মকর্তা এস কে এজাজ বলেন, যে কোন ভৌত পরিকল্পনার পরিবেশগত প্রভাব বিবেচনায় নিয়েই অষ্ট্রেলিয়াতে পরিকল্পনা অনুমোদন ও বাস্তবায়ন করা হয়।
বাংলাদেশের ক্ষেত্রে পরিবেশগত প্রভাব মূল্যায়ন প্রক্রিয়া স্বচ্ছ ও পরিকল্পনা প্রণয়নে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার আহবান জানান এই পরিকল্পনা কর্মকর্তা। একইসাথে পরিকল্পনা কমিশনে ও বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের প্রকল্প সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় পরিবেশ বিশেষজ্ঞ ও পরিকল্পনাবিদদের অন্তর্ভূক্তির দাবী জানান তিনি।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বিআইপি)’র সভাপতি পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক আকতার মাহমুদ বলেন দেশের উপজেলা ও স্থানীয় পর্যায়ে ভৌত উন্নয়নকে পরিকল্পনার মধ্যে না আনতে পারলে পরিবেশগত বিপর্যয় আরও বাড়বে। একইসাথে সারাদেশের জন্য জাতীয় ভৌত পরিকল্পনা জরুরী ভিত্তিতে প্রণয়নের তাগিদ দেন বিআইপি’র সভাপতি।
সংলাপে উপস্থিত পরিকল্পনাবিদ ও বিশেষজ্ঞগণ দেশের সকল ভৌত পরিকল্পনা সংক্রান্ত পরিবেশগত প্রভাব মূল্যায়ন সমীক্ষা (ইআইএ রিপোর্ট) জনসমক্ষে প্রকাশ করা, বাজেট প্রণয়নে পরিবেশ সুরক্ষার বিষয় বিবেচনা, শহর পরিকল্পনায় প্রকৃতি ভিত্তিক সমাধানকে অগ্রাধিকার দেবার বিষয়ে গুরুত্ব আরোপ করেন। # কাশেম
—–