নিজস্ব প্রতিনিধি:
চলমান বিশ্বকাপ ক্রিকেটকে কেন্দ্র করে অনলাইনে অবৈধভাবে রমরমা জুয়ার টাকা মোবাইল ব্যাংকিংয়ে লেনদেন এবং হুন্ডির মাধ্যমে ভারতে অর্থ পাচারের অভিযোগে চারজনকে গ্রেফতার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) কর্মকর্তারা। গ্রেফতার হওয়া চারজন হলেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের তড়িৎ প্রকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী নিশাত মুন্না (২০), তার সহযোগী কামরুল ইসলাম শুভ (২৭), মো. সুমন (৩৫) ও নাজমুল হোসেন বাবু (৩১)।
মঙ্গলবার (২৪ অক্টোবর) দুপুরে রাজধানীর কাওরান বাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য প্রকাশ করেছেন লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইং পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। তিনি গণমাধ্যমকে আরও বলেন, বিশ্বকাপ ক্রিকেটকে কেন্দ্র করে অনলাইনে অবৈধভাবে জুয়ার টাকা লেনদেন করতেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নিশাত মুন্না আর তার সহযোগতায় রয়েছেন কামরুল ইসলাম শুভ মো. সুমন ও নাজমুল হোসেন বাবু। তারা জুয়ার টাকা হুন্ডির মাধ্যমে ভারতে এদেরেশ থেকে প্রতিনিয়িত অর্থ পাচার করতেন। এ চারজনের সমন্বয়ে গড়ে উঠা চক্রের মুঠোফোন ব্যাংকিং কার্যক্রমে সম্পৃক্ত আছেন আরও এক ব্যবসায়ী। ওই ব্যবসায়ীর মাধ্যমে জুয়ার টাকা লেনদেন করতেন।
র্যাব কর্মকর্তা বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদকালেই গ্রেফতারকৃতরা অনলাইন জুয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ততার বিষয়টি স্বীকার করেছে। বর্তমানে দেশি- বিদেশি অনলাইন জুয়ার সাইট ও অ্যাপস বিটিআরসি বন্ধ করলেও ডোমেইন পরিবর্তন করে কৌশলে পুনরায় অনলাইন চালু করেছে তারা। এ চক্রর সদস্যরা অপরের তথ্যে ও বেনামি একাধিক সিমে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে গ্রাহকদের সঙ্গে লেনদেন করেন। জুয়ার লেনদেনের লভ্যাংশের একটি নিদিষ্ট অংশ নিজেরা রেখে অবশিষ্ট টাকা হুন্ডির মাধ্যমে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে পাঠাতেন।
র্যাবের কর্মকর্তা কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গত ২৩ অক্টোবর দিবাগত রাতে গাজীপুরের শ্রীপুর ও ঢাকার মালিবাগ থেকেএ চক্রের মূল হোতা নিশাত মুন্নাসহ তার ৩ সহযোগিকে গ্রেফতার করা হয়। ওইসময় তাদের কাছ থেকে ১৬টি মোবাইল ফোন, ১৮টি সিম কার্ড, ১টি সিপিইউ, ১টি মনিটর জব্দ করা হয়। তারা অনলাইন জুয়ার মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে অর্ধকোটি টাকার বেশি অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে।
র্যাক কর্মকর্তা বলেন, এ অপরাধীরা বিদেশ থেকে পরিচালিত বিভিন্ন অনলাইন জুয়ার সাইটের মাধ্যমে বাংলাদেশে কার্যক্রম চালাতেন। নিশাত মুন্নার একটি ইউটিউব চ্যানেল এবং সাইলেন্ট কিলার নামে একটি ফেইসবুক আইডি খুলে বিভিন্ন রোস্টিং/বিতর্কিত ভিডিও তৈরি করে প্রচার করত। বিগত দেড় বছর পূর্বে সে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি গ্রæপের বিভিন্ন অনলাইন জুয়ার বিজ্ঞাপন দেখে অনলাইন জুয়ার প্রতি আসক্ত হয়। তার অনলাইনের জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে বেটিং সাইটের প্রসারের জন্য ভিডিও বানাতে তাকে দেশের বাইরে থেকে বিভিন্ন অনলাইন জুয়ার প্ল্যাটফর্ম থেকে প্রস্তাব দেওয়া হয়। তিনি তার প্রতিটি ভিডিওতে বেটিং সাইটের বিজ্ঞাপন প্রচারের জন্য ১০ হাজার টাকা করে গ্রহণ করতেন।
তিনি বলেন, নিশাত মুন্না অনলাইনে বিভিন্ন জুয়ার সাইটে অ্যাকাউন্ট খুলে দেওয়ার জন্য তার সহযোগী কামরুলের কাছে পাঠাতেন। কামরুল একটি মোবাইল কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধি ছিলেন। বেশি লাভের প্রলোভন দেখিয়ে বিভিন্ন ব্যক্তিকে তিনি অনলাইন জুয়ার সাইটে অ্যাকাউন্ট খুলে দিতেন। একটি অ্যাকাউন্ট খোলার বিনিময়ে তিনি ৩০০ টাকা নিতেন। রাজধানীর মালিবাগে মুঠোফোনে ব্যাংকিং কার্যক্রমের ব্যবসা করেন। ব্যবসায়িক কার্যক্রম চালানোর সূত্র ধরে কামরুলের সঙ্গে নিশাত মুন্নার পরিচয় হয়।
র্যাব কর্মকর্তা সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন,জুয়ারি কামরুলের সঙ্গে মিলে নিশাত মুন্না নামে–বেনামে বিভিন্ন সিম নিতেন। মুঠোফোন ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে অনলাইনে জুয়ার অর্থ লেনদেন করতেন। এ টাকা নিশাত এবং কামরুল হুন্ডির মাধ্যমে ভারতে জুয়া খেলার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তির কাছে পাঠাতেন। অবৈধ এধরনের অপকমের সাথে যুক্ত নাজমুলও মুঠোফোনে ব্যাংকিং কার্যক্রমের ব্যবসার সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। নাজমুলের বাড়ি নোয়াখালীতে, তিনি সেখানে বসেই এ চক্রের হয়ে জুয়ার টাকার ভাগ পেতেন।#