দূরবীণ নিউজ প্রতিবেদক:
ভারতের প্রধানমন্ত্রীর আগমনকে কেন্দ্র করে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীদের কঠোর হস্তে দমন করা হবে বলে কড়া হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিব শতবর্ষে বাংলাদেশের সাথে একাত্মতা জানাতে এদেশে এসেছেন ভারতের প্রশানমন্ত্রী। খবর বাসস।
শনিবার (২৭ মার্চ ) দুপুরে রাজধানীতে জাতীয় প্রেসক্লাবে সত্যম রায় চৌধুরী সম্পাদিত ‘বঙ্গবন্ধু ফর ইউ’ গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘আপনারা দেখেছেন, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর দিন ২৬ মার্চ, যে দিন বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করা হয়েছিল, সেদিন তারা স্বাধীনতা দিবস পালন না করে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আগমনকে কেন্দ্র করে দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অপচেষ্টা করেছে, বিশৃঙ্খলা করেছে।’
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ভারতের প্রধানমন্ত্রীর আগমনের সাথে রেলস্টেশন, ভূমি অফিস জ্বালিয়ে দেয়ার কি সম্পর্ক, থানায় কেনো আক্রমণ করা হলো’ প্রশ্ন রেখে তথ্যমন্ত্রী আরো বলেন, ‘এরা দুষ্কৃতকারী। এরা আমাদের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, শান্তি, স্থিতিশীলতা ও সম্প্রীতির শত্রু। আমরা যদি এদের খবরাখবর নিই, দেখা যাবে এদের অনেকেরই বাপ-দাদা রাজাকার ছিল।
তিনি বলেন, যারা আজকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বড় গলায় কথা বলে, তাদের বাপ-দাদাদের ভূমিকার খবর নিন, দেখা যাবে তারা অনেকেই একাত্তরে যুদ্ধের সময় পাকিস্তানের পক্ষ নিয়েছিল, আমাদের দেশে নারী-নির্যাতন, গণহত্যার সাথে যুক্ত ছিল।’
দ্ব্যর্থহীন ভাষায় ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘সরকারের নমনীয়তাকে কেউ দুর্বলতা ভাববেন না। এ ধরণের অপচেষ্টা সরকার কঠোরহস্তে দমন করতে বদ্ধপরিকর। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গরম বক্তৃতা দিয়ে দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করবেন, সেটি আর বরদাশত করা হবে না। যারা স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন না করে এ ধরণের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করবে, তাদের মূলোৎপাটন করতে আমরা বদ্ধপরিকর।’
মন্ত্রী বলেন, ‘যে ভারত ১৯৭১ সালে আমাদের এক কোটি মানুষকে আশ্রয় দিয়েছে, যে ভারতের মানুষ আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে তাদের রক্তও ঝরিয়েছে, যে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী বাংলাদেশের মানুষের স্বাধীনতা আর বঙ্গবন্ধুর মুক্তির জন্য বিশ্ব জনমত গড়তে সমগ্র পৃথিবী চষে বেড়িয়েছেন, সেই ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নরেন্দ্র মোদি এসেছেন।
কোনো দলের নেতা হিসেবে তাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি বা তিনি কোনো দলের নেতা হিসেবে আসেনওনি। অথচ, এ নিয়ে ঢাকা, চট্টগ্রাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা হয়েছে।’
অতীতের দিকে নির্দেশ করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আজকে যারা এই বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে, সেই একই গোষ্ঠী ২০১৩-১৪-১৫ সালে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছিল এবং তাদের সাথে ছিল বিএনপি। সেই বিশৃঙ্খলা আমরা মোকাবিলা করেছি, আমাদের অভিজ্ঞতা আছে। সুতরাং আবার বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অপচেষ্টা চালাবেন না।’
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘আমরা জানি আপনারা কারা, আপনারা বায়তুল মোকাররমে আগুন দিয়েছিলেন, পবিত্র কোরআান শরীফ পুড়িয়েছিলেন, গাছপালা কেটেছিলেন, নিরীহ গরুর ওপর, মুরগীবাহী গাড়ির ওপর বোমা ছুঁড়েছিলেন, পশুপাখিও আপনাদের হাত থেকে রেহাই পায়নি। আবার এমন করার চেষ্টা করলে, আমরা কঠোরহস্তে তা দমন করতে বদ্ধপরিকর।’
অনুষ্ঠানের আয়োজক সংগঠন ‘ফ্রেন্ডস অভ বাংলাদেশ’-এর প্রধান সমন্বয়ক এ এস এম শামছুল আরেফিনের সভাপতিত্বে সংগঠনের সদস্য পংকজ দেবনাথ এমপি, সংগঠনের কার্যকরী সভাপতি ড. রাধা তমাল গোস্বামী, দৈনিক ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত, গ্রন্থটির সম্পাদক সত্যম রায়চৌধুরী, প্রকাশক দীপ প্রকাশনের শংকর মন্ডল ও কলামিস্ট সুভাষ সিংহ রায় গ্রন্থটির নানা দিক তুলে ধরেন।
ইংরেজি ভাষায় প্রণীত ৬১৬ পৃষ্ঠার ১২ অধ্যায়ের ‘বঙ্গবন্ধু ফর ইউ’ গ্রন্থে বঙ্গবন্ধুর কারাগারের রোজনামচা এবং বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার লেখা ভূমিকা সন্নিবেশিত রয়েছে। তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বইটির সম্পাদক, প্রকাশক ও অনুষ্ঠান আয়োজকদের আন্তরিক অভিনন্দন জানান এবং বঙ্গবন্ধুকে জানার ক্ষেত্রে সহায়ক এই বইটি ব্যাপক পাঠকপ্রিয়তা পাবে বলে আশা প্রকাশ করেন। / সূত্র : বাসস