দূরবীণ নিউজ প্রতিবেদক:
এবার দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) বিদেশে নাগরিকত্ব পাওয়া বাংলাদেশিদের তালিকা চেয়েছে। অভিযোগ রয়েছে ওইসব নাগরিকদের মধ্যে অনেকে অর্থপাচারের সাথে জড়িত।
সম্প্রতি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এই বিষয়ে চিঠি দিয়েছেন দুদকের মহাপরিচালক (মানিলন্ডারিং ) আ ন ম আল ফিরোজ। ‘বিভিন্ন দেশে পাচার হওয়া অর্থ বিনিয়োগের মাধ্যমে নাগরিকত্ব থাকা বাংলাদেশিদের তালিকা প্রসঙ্গে’ শিরোনামের এই চিঠিতে অর্থপাচার রোধের ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে।
জানা যায়, বিভিন্ন ব্যক্তির অর্থপাচারের তথ্য চেয়ে এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়াসহ ৫০টি দেশে মিউচুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিস্ট্যান্স রিকোয়েস্ট-(এমএলএআর) পাঠিয়েছে দুদক। যার মধ্যে ২২ দেশ সাড়া দিয়েছে।
দুদক সচিব মোহাম্মদ দিলোয়ার বখত্ চিঠির বিষয় স্বীকার করে বলেন, ‘অর্থপাচারের তথ্য জানতে চেয়ে বাংলাদেশেও এ ধরনের এমএলএআর এসে থাকে। কমিশন এখন পর্যন্ত যুক্তরাজ্য, কানাডা, ইতালি ও সেন্ট লুসিয়া থেকে পাওয়া সাতটি এমএলএআরের জবাব দিয়েছে।’
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটির (জিএফআই) এক প্রতিবেদন অনুযায়ী—২০১৫ সালে বাংলাদেশ থেকে পাচার হয়েছে প্রায় এক হাজার ১৫১ কোটি ডলার। যা দেশি মুদ্রায় ৯৮ হাজার কোটি টাকা।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মাসুদ বিন মোমেনকে লেখা দুদকের চিঠিতে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের গবেষণা ও পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে মিস-ইনভয়েসিং, হুন্ডি, বাংক ক্যাশ ট্রান্সফারের মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার হয়ে যাচ্ছে। এর ফলে দেশের কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
চিঠিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের নাগরিকদের একাংশ অর্থপাচার করে বিনিয়োগের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশের নাগরিকত্ব গ্রহণ করেছে। বহুল আলোচিত পানামা পেপার্স, প্যারাডাইস পেপার্স ইত্যাদি কেলেঙ্কারিতে বিভিন্ন বাংলাদেশি নাগরিকের নামও উঠে এসেছে। এই ধারা বন্ধ না হলে অর্থনৈতিক গতি ভবিষ্যতে থমকে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
এতে আরও বলা হয়েছে, অর্থপাচারের মাধ্যমে বিদেশে নাগরিকত্ব গ্রহণ রোধের লক্ষ্যে আইনি পদক্ষেপের মাধ্যমে সম্পদ দেশে ফিরিয়ে আনা জরুরি। এর ফলে একদিকে অপরাধীদের সাজা নিশ্চিত হবে, অন্যদিকে দেশের সম্পদ ফেরত আনার পাশাপাশি অন্যদের জন্য উদাহরণ হয়ে থাকবে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার পাশাপাশি রাষ্ট্রের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সক্রিয় অংশগ্রহণ ছাড়া এত কঠিন কাজ সম্পন্ন সম্ভব নয় বলেও চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
দুদকের চিঠিতে বলা হয়েছে, দুর্নীতি দমন বিষয়ক আন্তর্জাতিক সহায়তা নেওয়ার ক্ষেত্রে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রাথমিক পর্যায়ে এই ধরনের বাংলাদেশিদের তথ্য কূটনৈতিক চ্যানেলে সংগ্রহ করবে। এরপর দুদকে সরবরাহ করবে। এতে দুদক দ্রুত আইনি পদক্ষেপ নিতে পারবে। এ লক্ষ্যে যে সব বাংলাদেশি বিভিন্ন দেশের নাগরিকত্ব গ্রহণ করেছেন, তাদের সম্পর্কে তথ্য দূতাবাস বা অন্য কোনো মাধ্যমে উপায়ে পাওয়া যাবে কি না, তা জানানোর জন্য মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করেছে দুদক।
এর আগে, সম্প্রতি সেকেন্ড হোম বা দ্বিতীয় আবাস গড়তে মালয়েশিয়ায় বিনিয়োগ করেছেন এমন ২৩ বাংলাদেশিকে চিহ্নিত করতে সক্ষম হয় দুদক। বিদেশে বিনিয়োগ করা অর্থের উৎস জানতে ওই ভিআইপিদের কয়েকজনের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা করে সংস্থাটি।
অন্যদিকে, ২০১৬ সালের প্রথম দিকে ওয়াশিংটনভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম অব ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্টস (আইসিআইজে) ‘পানামা পেপারস’ নামে নথি প্রকাশ করে। যেখানে ১ কোটি ১০ লাখ নথি ফাঁস করা হয়।
ওই তালিকায় বিশ্বের কয়েকজন রাষ্ট্রপ্রধানসহ শতাধিক ক্ষমতাধর ব্যক্তি ও তাদের আত্মীয়-স্বজনের কর ফাঁকি দিয়ে সম্পদের পাহাড় গড়ার প্রমাণ রয়েছে। তালিকায় ৩৪ বাংলাদেশি ব্যক্তি ও এক প্রতিষ্ঠানের নামও উঠে এসেছে।
ওই বছরের ১৭ নভেম্বর বেনামি প্রতিষ্ঠান খুলে বিদেশে বিনিয়োগ করার ২৫ হাজার নথি ফাঁস করে প্যারাডাইস পেপারস। যেখানে নতুন করে ব্যবসায়ী আবদুল আউয়াল মিন্টু, তার স্ত্রী নাসরিন ফাতেমা আউয়াল, ছেলে তাফসির আউয়াল ও তাবিথ আউয়ালসহ মোট ১০ জন বাংলাদেশির নাম আসে।
সর্বশেষ ২০১৮ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি ট্যাক্স ফাঁকি দেওয়ার উদ্দেশ্যে মাল্টায় বিভিন্ন কোম্পানিতে অর্থ বিনিয়োগকারীদের নতুন তালিকা প্রকাশিত হয়। তালিকায় রয়েছে আরও ২০ বাংলাদেশির নাম।
পানামা পেপারস-সংক্রান্ত তথ্য নিয়ে দুদকের উপপরিচালক এস এম এম আখতার হামিদ ভূঁঞার নেতৃত্বে তিন সদস্যের অনুসন্ধান টিম কাজ করছে। এছাড়া, প্যারাডাইস পেপারস সংক্রান্ত তথ্য নিয়েও অনুসন্ধান চালিয়ে যাচ্ছে ওই টিম। #