দূরবীণ নিউজ প্রতিবেদক:
বিদেশে এদেশ থেকে মোটা অংকের অর্থ পাচার করে বিদেশে পালিয়ে থাকা প্রশান্ত কুমার (পি কে) হালদারকে গ্রেফতার করে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য বাংলাদেশ পুলিশের পক্ষ থেকে ইন্টারপোলকে চিঠি পাঠানোর বিষয়টি হাইকোর্টকে নিশ্চিত করেছ অ্যাটর্নি জেনারেলের অফিস।
দুদকের মামলার এই আসামির বিরুদ্ধে প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ বিদেশে পাচারের অভিযোগ রয়েছে। পিকে হালদার বর্তমানে কানাডায় অবস্থান করছেন।
মঙ্গলবার (৫ ডিসেম্বর) হাইকোর্টের বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের সমন্বয়ে গঠিত ভার্চুয়াল বেঞ্চে শুনানিকালে এ তথ্য জানিয়েছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দিন মানিক।
ওইসময় আদালতে তার সঙ্গে ছিলেন সঙ্গে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মেহেজাবীন রাব্বানি দিপা ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল আন্না খানম কলি। অপরদিকে দুদকের পক্ষে ছিলেন মো. খুরশীদ আলম খান। এছাড়া রয়েছেন আইনজীবী মো. মোশাররফ হোসেন।সব কথা বলেন।
আজ মঙ্গলবার পি কে হালদারের বিরুদ্ধে রেড অ্যালার্ট জারির বিষয়ে শুনানিকালে হাইকোর্ট প্রশ্ন তোলেছেন,এদেশে থেকে বিদেশে অর্থপাচার রোধে বা পাচার হয়ে যাওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনতে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের ভূমিকা কি ছিল। একই সঙ্গে সরকারের অন্যান্য মন্ত্রণালয় ও দপ্তরের কর্মকর্তাদের ভুমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন হাইকোর্ট।
শুনানিকালে হাইকোর্ট বলেন, ‘বিদেশে শত শত কোটি টাকা পাচার হচ্ছে, বাংলাদেশ ব্যাংক কী করছে। এতো কিছু হচ্ছে তারা (বাংলাদেশ ব্যাংক) কিছু করছে না কেন? তারা শুধু ওখানে (অফিসে) এসে বসে থাকবেন, কিছু করবেন না তা তো হয় না। বাংলাদেশ ব্যাংক অর্থপাচারের দায় এড়াতে পারে না।’
জানা যায়, এর আগে ৩ ডিসেম্বর প্রায় সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করে বিদেশে পালিয়ে থাকা পিকে হালদারের কানাডার হোল্ডিংয়ের ঠিকানা বাংলাদেশ সরকারকে জানিয়েছে কানাডা সরকার। এরপর সেদিন জানানো হয়, যেকোনো দিন পি কে হালদারের বিরুদ্ধে রেড অ্যালার্ট জারি করতে পারে ইন্টারপোল। সেটা দু-একদিনের মধ্যেই হতে পারে।
চাইলে আজও রেড এলার্ট জারি করতে পারে বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন দুদকের আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দিন মানিক সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, রেড অ্যালার্ট জারি করলে পৃথিবীর ১৯৪টি দেশের যেকোনো দেশেই পি কে হালদার থাকুক না কেন, তা জানা যাবে। তবে কানাডায় তার একটি ঠিকানা পাওয়া গেছে।
ওই দিন (৩ ডিসেম্বর) হাইকোর্টের ভার্চুয়াল বেঞ্চের কাছে দুর্নীতি দমন কমিশন এসব তথ্য জানায়।
এদিকে পি কে হালদারের প্রতারণার শিকার সাবেক প্রধান বিচারপতি মোস্তফা কামালের পরিবারসহ ভুক্তভোগী বিনিয়োগকারীদের এ মামলায় পক্ষভুক্ত করে আদেশ দেন আদালত। এ সময় তাদের আত্মসাৎকৃত টাকা ফিরিয়ে দিতে আদালতের কাছে আকুতি জানিয়েছেন তারা।
দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলমকে বলেছেন তাদের (ওই চারজনের) বক্তব্য এফিডেভিট আকারে আদালতে জমা দেয়ার জন্য। আজ সেটি জমা দেয়া হবে বলে জানা গেছে।
ওই দিন আদালতে ভার্চুয়াল শুনানিতে অংশ নেন পিকে হালদারের পিপলস লিজিংয়ে ক্ষতিগ্রস্ত চার বিনিয়োগকারী। যাদের মধ্যে সাবেক প্রধান বিচারপতি মোস্তফা কামালের বড় মেয়ে ড. নাশিদ কামাল, খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা শওকত-উর রহমান ও ক্যান্সারে আক্রান্ত সামিয়া বিনতে মাহবুব। তারা জীবনের শেষ সম্বলটুকু ফিরিয়ে দিতে আদালতের কাছে আবেদন জানান। এ সময় তারা পিকে হালদারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ও অর্থপাচারের ঘটনায় অসহযোগিতার অভিযোগ তোলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের বিরুদ্ধেও।
এর আগে গত ৯ ডিসেম্বর সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা পাচার করার অভিযোগ নিয়ে বিদেশে পালিয়ে থাকা প্রশান্ত কুমার হালদারের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা ইন্টারপোলের কাছে পাঠানো এবং তার বিরুদ্ধে করা মামলা তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চান হাইকোর্ট। ৩ জানুয়ারির মধ্যে জানাতে বলা হয়।/