বিশেষ প্রতিনিধি, দূরবীন নিউজ:
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বিএনপিতে বিভেদ -গ্রুপিং আছে । সরকার পতনের আন্দোলন শুরুর আগে অতিদ্রুত দলের মধ্যকার ‘বিভেদ-গ্রুপিং’ দূর করার আহবান জানিয়েছেন তিনি ।
আজ শনিবার (১২ জুন) দুপুরে টঙ্গিতে সালাহ উদ্দিন সরকারের বাসভবন মিলনায়তনে গাজীপুর জেলা ও মহানগর বিএনপির যৌথ উদ্যোগে উদ্যোগে দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ৪০ তম শাহাদাত বার্ষিকী উপলক্ষে নেতা-কর্মী-সমর্থকদের উপস্থিতিতে এই ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় াবএনপি মহাসচিব দলীয় নেতাদের প্রতি এই আহবান জানান।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘‘ আমি খুব পরিস্কারভাবে বলতে চাই, আওয়ামী লীগ কি করছে- বা করুক। জনগনের কাছে তাদের অন্যায় টিকে থাকতে পারবে না, তারা ভেসে যাবে। জনগনের উত্তাল আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ ভেসে যাবে এবং জনগনের সরকার প্রতিষ্ঠা হবে, ইনশাল্লাহ।”বিএনপি মহাসচিব বলেন,‘‘ আসুন অতি দ্রুত আমরা নিজেদেরকে পুরোপুরি সংগঠিত করে ফেলি, নিজেদের ভুল বুঝাবুঝি, বিভেদগুলো দূর করি। আসুন একত্রিত হই এবং ঐক্যবদ্ধ হয়ে, জনগনের ওপর চেপে বসা এই দানব সরকারকে সরানোর উদ্যোগ নেই।
তিনি বলেন, আসুন, সত্যিকার অর্থেই একটি নিরপেক্ষ সরকার ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের অধীনে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনে মধ্য দিয়ে জনগনের সরকার প্রতিষ্ঠা করি। দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার জন্য কাজ করি।”
বিএনপি মহাসচিব বলেন, দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া গত বছরে মার্চ মাস থেকে সরকারের নির্বাহী আদেশে শর্তসাপেক্ষে সাময়িকভাবে মুক্ত আছেন। তার স্থায়ী মুক্তির আন্দোলনও শুরু করতে হবে।
তিনি বলেন, ‘‘ দেশনেত্রীকে মুক্ত করা ছাড়া এখানে গণতান্ত্রিক আন্দোলন হবে না। দেশনেত্রীর মুক্তির আন্দোলনের মাধ্যমেই আমরা গণতন্ত্রের মুক্তির আন্দোলন চালিয়ে যাবো।” ‘‘ আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সাহেবকে দেশে ফিরিয়ে আনতে পারি, সেই লক্ষ্যে আমাদের অতিদ্রুত দলীয় ‘বিভেদ-গ্রুপিং’ দূর করতে হবে।”
মির্জা ফখরুল বর্তমান অবস্থাকে ‘সংকটময় অভিহিত করে বলেন, ‘‘ এই অবস্থার পরিবর্তন আমাদেরকেই করতে হবে। অন্য কেউ এসে আমাদেরকে করে দিয়ে যাবে না। আমাদেরকেই দায়িত্ব নিতে হবে। বিএনপি হচ্ছে সেই দল যারা জনগনের প্রতিনিধিত্ব করে, বিএনপি হচ্ছে সেই দল যার প্রতিষ্ঠাতা হচ্ছেন শহীদ জিয়াউর রহমান । যিনি স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে, জীবন বাজি রেখে যুদ্ধে অংশ নিয়ে ছিলেন। বিএনপি হচ্ছে ,সেই দল যার চেয়ারপারসন হচ্ছেন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া, যিনি গণতন্ত্রকে মুক্তি দিয়ে ছিলেন।”
তিনি বলেন, ‘‘ আজকে আবার যখন ক্রাইসিস, রাজনৈতিক সংকটে, আমাদের সব কিছু নিয়ে চলে যাচ্ছ। তখন আমাদেরকেই ঘুরে দাঁড়াতে হবে, আমাদেরকেই শক্ত হয়ে দাঁড়াতে হবে।”
গাজীপুরের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ অনেকে বলেছেন, গাজীপুর এক ফাইটার একটা জায়গা, জেলা ও মহানগরে। আপনাদেরকে অনেক বেশি সচেতন ও সোচ্চার হতে হবে। মনে রাখবেন,আমরা জিয়াউর রহমানের দল করি, বেগম খালেদা জিয়ার দল করি।
যখন সংগঠন নিজেরা তৈরি করতে যাই, তখন গ্রুপিং-গ্রপিং। আমরা সুযোগ পেলেই, আমার লোক কে- তাকে খুঁজি। এটা খোঁজা যাবে না। আপনাকে জিয়াউর রহমানের লোক খুঁজতে হবে, খালেদা জিয়ার লোক খুঁজতে হবে।”
তিনি বলেন,‘‘ এটা যদি না করতে পারেন, আমি নিশ্চয়তা দিয়ে বলতে পারি, আমাদের কোনো ভবিষ্যত নেই। ভবিষ্যত থাকবে তখনই, যখন আপনারা সবাইকে নিয়ে এক সাথে রাজপথে নামতে পারবেন। একসাথে সোচ্চার হবেন। অন্যায়ের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ হচ্ছে ন্যায় সঙ্গত । এটা আমাদের ধর্মের মধ্যেও বলা আছে।”
গয়েশ্বর চন্দ্র রায়:
ফাইল ছবি
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘‘ আমারা নেতার সংখ্যা বৃদ্ধি করতে পেরেছি। কিন্তু আমরা কর্মীর সংখ্যা সেই হারে বৃদ্ধি করতে পারি নাই। সেজন্য আজকে সবাইকে কর্মীর ভুমিকায় অবতীর্ণ হতে হবে।”
তিনি বলেন, ‘‘ আমাদের নেতা বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান সামনে আছেন। আর বাকীরা আমরা সবাই কর্মী,- এ্ই কথা যদি ভাবতে পারি ,তাহলেই দেশনেত্রী মুক্তি পাবেন।
তারেক রহমান দেশে ফেরত আসবেন এবং জাতির নেতৃত্বও দেবেন। তার নেতৃত্ব অত্যন্ত অনিবার্য। এই রাষ্ট্রের জন্য বিশেষ করে দেশপ্রেমিক গণতান্ত্রিক শক্তির জন্য জাতীয়তাবাদী শক্তির ঐক্য ও নেতৃত্ব রড়ই প্রয়োজন।”
আমান উল্লাহ আমান:
ফাইল ছবি
বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমান উল্লাহ আমান বলেন, ‘‘ আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান শ্লোগান দিয়েছেন- ‘যদি তুমি ভয় পাও, তবে তুমি শেষ, আর যদি তুমি রুখে দাঁড়াও, তবে তুমি বাংলাদেশ’।
তিনি বলেন, তারেক রহমানের সেই শ্লোগান বুকে ধারণ করে আমরা নব্বইয়ের চেতনায় আরেকটি গণঅভ্যুত্থান সৃষ্টি করতে পারবো। আসুন ,আমরা ছাত্র-যুবকদের সংগঠিত করে সকল রাজনৈতিক দল ও জনগনকে ঐক্যবদ্ধ করে রাজপথে নেমে চূড়ান্ত আন্দোলন শুরু করব ইনশাল্লাহ।”
তিনি বলেন, ‘‘ নব্বইয়ে যেমন বলে ছিলাম, ‘স্বৈরাচার এরশাদের পতন ছাড়া ঘরে ফিরবো না, আজকেও বলতে চাই’, যখন আমাদের জাতীয় নেতৃবৃন্দ আন্দোলনের কর্মসূচি দেবেন, সেদিন থেকে আমার নেতার ওই শ্লোগান বুকে ধারণ করে আবারো রাজপথে দাঁড়াব।
আমান উল্লাহ আমান বলেন, যতক্ষন শেখ হাসিনা সরকারের পতন না হবে, যতক্ষন এই সরকার পদত্যাগ না করবে এবং যতক্ষন শেখ হাসিনা তত্ত্বাবধায়ক সরকার না দেবে, ততক্ষন রাজপথ থেকে আমরা সরে দাঁড়াব না।”
জেলা সভাপতি কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলনের সভাপতিত্বে ও সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুল এবং নির্বাহী কমিটির ওমর ফারুক শাফিনের সঞ্চালনায় এই ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় আবদুস সালাম আজাদ, সালাহ উদ্দিন সরকার, কাজী ছাইয়েদুল আলম বাবুল, সোহরাব উদ্দিন, মজিবুর রহমান, হুমায়ুন কবির খান, মীর হালিমুজ্জামান ননি, খন্দকার আজিজুর রহমান পেয়ারা, হুমায়ুন কবীর মাস্টার, শওকত হোসেন সরকার, মাহবুব আলম শুক্কুর, ফিরোজ আহমেদ, শ্রীপুরের শাহজাহান ফকির, কাপাসিয়ার খলিলুর রহমান প্রমূখ বক্তব্য রাখেন।
/এডিজেড / কাশেম/ দূরবীন নিউজ।