দূরবীণ নিউজ প্রতিবেদক :
সারাদেশ এখন করোনা ভাইরাস সংক্রমণে মহামারিতে বিপর্যস্ত অর্থনীতি পুনর্গঠনের লক্ষ্যে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দাম কমানোর প্রস্তাব করেছেন কনজুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) ।
মঙ্গলবার (৯ জনু ) বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরী কমিশনের (বিইআরসি) চেয়ারম্যনের কাছে এই প্রস্তাব সম্বলিত আবেদনটি পাঠিয়েছেন ক্যাবের জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক এম শামসুল আলম ।
আবেদনটি হুবহু প্রকাশ করা হলো: দেশবাসী গৃহবন্দী। ব্যবসা-বাণিজ্য, কল-কারখানা, অফিস-আদালত, স্কুল-কলেজ বন্ধ। অর্থনৈতিক সকল কর্মকান্ড স্তব্ধ। বেসরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতাদি বন্ধ। জনবল ছাটাই চলছে। এ অবস্থায় সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতন-ভাতা সরকারের পক্ষে কতদিন দেয়া সম্ভব হবে তাও ভাবার বিষয়। টাকা ছাপিয়ে কেবলমাত্র সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতন দেয়া কোন সমাধান নয়।
চলতি অর্থবছরের বাজেটে প্রাক্কলিত রাজস্ব আহরণ অসম্ভব। রেমিটেন্স ও রপ্তানি আয় চরমভাবে হ্রাস পাচ্ছে। অর্থাৎ ধ্বস নামবে। উন্নয়ন খাত কোন অর্থ পাবে না। এমন অবস্থায় রাজস্ব ঘাটতি মোকাবেলায় সরকারি-বেসরকারি সকল প্রতিষ্ঠানের রাজস্ব চাহিদা ব্যাপক হারে কমানো ছাড়া আর কোন বিকল্প নেই।
তাছাড়া করোনা মহামারি মোকাবেলায় সরকার প্রায় ৮০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ ঘোষণা করেছে। কৃষি ও শিল্পসহ উৎপাদন খাত আর্থিক প্রণোদনা পাবে। করোনা ভাইরাস সংক্রমণকালে এবং পরবর্তী সময়ে অর্থনীতি সচল রাখার লক্ষ্যে সরকারের উন্নয়ন পলিসিতে ব্যাপক রদবদলের প্রয়োজন হবে।
বিদ্যমান উন্নয়ন নীতি ও কৌশল নিয়ে সরকারের পক্ষে এখন আর আগানো সম্ভব নয়, তা আর বলার বা ভাবার অপেক্ষায় নেই। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় তথা ১৯৭১ সালে এবং পরবর্তী সময়ে যুদ্ধ বিধ্বস্ত বাংলাদেশের অর্থনীতি অপেক্ষা করোনা বিধ্বস্ত বাংলাদেশের অর্থনীতি হবে আরও অনেক বেশি বিপর্যস্ত। এমন আশঙ্কায় আমরা ভোক্তারা উদ্বিগ্ন। তবে কৃষি এবং কুটির ও ক্ষুদ্র শিল্পে উৎপাদন ব্যহত হবে না। সেজন্য বিপণন ব্যবস্থায় নিবিড় পরিচর্যা দরকার।
বাস্তবে দেখা যায়, এ পরিস্থিতিতে রাজস্ব ঘাটতি মোকাবেলায় প্রতিটি প্রতিষ্ঠান সরকারের নিকট আর্থিক ঋণ বা অনুদান চাচ্ছে। রাজস্ব ব্যয় বা চাহিদা কমানোর কোন পরিকল্পনা নিচ্ছে না। সরকার যেসব খাত থেকে রাজস্ব আহরণ করে, সেসব খাত এখন অব্যাহত রাজস্ব ঘাটতির শিকার। সে ঘাটতি মোকাবেলায় তাঁরা এখন সরকারেরই মুখাপেক্ষী।
ফলে সরকার ক্রমাগত আর্থিক চাপ বৃদ্ধির শিকার। উল্লেখ্য যে, ধারনা করা হচ্ছে বিদ্যুৎ খাত করোনা মহামারিতে চলতি বছরে যে রাজস্ব ঘাটতির শিকার হবে, তার পরিমাণ ১০ হাজার কোটি টাকার কম হবে না।
অনুরূপ ক্ষয়-ক্ষতি গ্যাস খাতেও হবে। উভয় ঘাটতি বিদ্যমান অযৌক্তিক ব্যয় হ্রাস ও ব্যয় বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করা হলে বিদ্যমান ও করোনাজনিত রাজস্ব ঘাটতি একদিকে যেমন মোকাবেলা করা সম্ভব হবে, অন্যদিকে উভয়খাতে তেমন ভর্তুকির পরিমাণও কমবে। আবার আন্তর্জাতিক বাজারে অস্বাভাবিক দরপতনের কারণে তরল জ্বালানির আমদানি ব্যয় ব্যাপক হারে হ্রাস পেয়েছে। ফলে সে দরপতন সমন্বয় করে তরল জ্বালানির মূল্যহার যেমন কমানো যায়, তেমন জ্বালানি খাতে করোনাজনিত রাজস্ব ঘাটতিও সমন্বয় করা সম্ভব।
অতএব আলোচ্য প্রেক্ষাপটে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহে অযৌক্তিক ব্যয় হ্রাস এবং ব্যয়বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করে বিদ্যুৎ, গ্যাস, কয়লা ও তরল জ্বালানির দাম কমানো এখন জরুরি। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে ভোক্তাদের ক্রয়ক্ষমতা অস্বাভাবিক হারে হ্রাস পেয়েছে। ভোক্তার ভোগ ব্যয় এখন খুবই সীমিত। ফলে সরকারের রাজস্ব আসছে না। উৎপাদিত পণ্য ও সেবার মূল্যহার যদি না কমে, তাহলে ভোক্তার ভোগ ব্যয়বৃদ্ধি পাবেনা। ফলে ট্যাক্স, ভ্যাট, ডিউটি- এসব প্রবাহ বৃদ্ধি না হওয়ায় সরকারের রাজস্ব বাড়বে না। তাই সর্বাগ্রে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দাম কমিয়ে উৎপাদন ব্যয় হ্রাস করে পণ্য ও সেবার দাম কমাতে হবে।
বিদ্যমান বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মূল্যহার পর্যালোচনায় দেখা যায়:
২০১৯-২০ অর্থবছরে বিদ্যুতে ভর্তুকি প্রায় ৩ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। কিন্তু করোনাজনিত কারণে রাজস্ব আহরণ বিঘিœত হওয়ায় রাজস্ব ঘাটতি বৃদ্ধি পাওয়া ভর্তুকি বৃদ্ধি পাবে।
এ যাবৎ গ্যাসে কোন রাজস্ব ঘাটতি ছিল না। এ খাতে মজুদ অর্থের পরিমাণ ছিল প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকা। এলএনজি গ্রিডে যোগ হওয়ায় চলতি অর্থবছরে সরকারকে ৭ হাজার কোটি টাকারও বেশী ভর্তুকি দিতে হবে। করোনাজনিত কারণে গ্যাস খাতে রাজ্স্ব ঘাটতি আরোও বাড়বে। ফলে ভর্তুকিও বাড়বে।
জ্বালানি তেল বরাবরই লোকসানে ছিল। বিগত বছরগুলিতে দরপতনের কারণে জ্বালানি তেলের আমদানি ব্যয় বিপুল পরিমাণে হ্রাস পায়। কিন্তু তা মূল্যহারে যৌক্তিক সমন্বয় না হওয়ায় বিপিসি’র বিপুল পরিমাণে লাভ হয়। করোনাজনিত কারণে আমদানি বাজারে জ্বালানি তেলের অস্বাভাবিক দরপতন হয়েছে। মূল্যহারে তা সমন্বয় না হওয়ায় বিপিসি’র লাভের পরিমাণ আরো বৃদ্ধি পাচ্ছে। সে-লাভে করোনা জনিত রাজস্ব ঘাটতি সমন্বয় হবে এবং তেলের মূল্যহারও কমানো যাবে।
তেলের দাম বেড়েছে, দামের সমতা রক্ষায় গ্যাসের দাম বেড়েছে। ফলে ব্যবসায়ীরা এলপিজি’র দাম বাড়িয়েছে। তেল ও এলপিজি’র দরপতন হওয়ায় আমদানি ব্যয় কমলেও তেলের দাম কমেনি। এলপিজি’র দাম বেড়েই চলেছে।
বড়পুকুরিয়া খনি থেকে উৎপাদিত শতভাগ কয়লা যে ওজন ও আদ্রতায় বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি কোম্পানির নিকট থেকে ক্রয় করে, সেই ওজন ও আদ্রতায় খনি কোম্পানি চীনা কোম্পানিকে ৮৫ ডলার মূল্যহারে বিল দেয়। তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের নিকট সে কয়লা বিক্রি করে ভ্যাটসহ প্রায় ১৫০ ডলার মূল্যহারে। কয়লা উৎপাদনে খনিকোম্পানির কোন উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নেই। চীনা কোম্পানির নিকট থেকে বিদ্যুৎকেন্দ্র সরাসরি কয়লা নেয় বলা চলে। অতএব বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহৃত কয়লার মূল্যহার ন্যায্য ও যৌক্তিক নয়। যৌক্তিক হলে এ বিদ্যুতের উৎপাদন ব্যয় কম হতো।
মূল্যহার বেড়েছে বিদ্যুতে ০.৩৫ টাকা এবং গ্যাসে ৫ টাকা। গ্যাসে বছরে সবাসাকুল্যে ভর্তুকি প্রায় ৯ হাজার কোটি টাকা। এ- ভর্তুকি বাড়বে। গণশুনানিতে প্রমান পাওয়া যায়, মোট গ্যাসের প্রায় ৫৬ শতাংশ তিতাসে ব্যবহার হয়। মুনাফাসহ তার বিতরণ মার্জিন ইউনিট প্রতি দরকার ৫ পয়সা। অথচ দেয়া হয়েছে ২৫ পয়সা। এমন অসংগতি স ালন, অন্যান্য বিতরণ ও গ্যাস উৎপাদন কোম্পানিতেও বিদ্যমান। বিদ্যুৎ খাতেও তা বিদ্যমান। বিদ্যুৎ খাত এর বাইরে নয়।
আইওসি’র গ্যাস কেনা হয় ২.৫৫ টাকা মূল্যহারে। অথচ বাপেক্সের গ্যাস কেনা হয় ৩.০৪ টাকা মূল্যহারে। গ্যাস উন্নয়ন তহবিল গঠনের শর্ত লংঘন করে এ তহবিলের অর্থ অনুদান হিসেবে গ্যাস অনুসন্ধান ও উৎপাদনে নিয়োজিত দেশীয় কোম্পানি সক্ষমতা উন্নয়নে বিনিয়োগ না করে সুদের বিনিময়ে ঋণ দেয়া হয়। তাতে গ্যাসের মূল্যহার কমার পরিবর্তে বৃদ্ধি পায়।
বিনিয়োগকৃত মুলধনের ওপর তিতাস সুদ পায় ১৮ শতাংশ। স ালন ও অন্যান্য বিতরণ ও উৎপাদন কোম্পানি পায় ১২%। অথচ বিদ্যুৎ খাতভূক্ত সব কোম্পানি পায় ১০%। ব্যাংক আমনতের ওপর সুদ ৬%-এ নামানো হলেও ওইসব সুদ কমিয়ে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির মূল্যহার কমানো হয়নি। তাছাড়া তিতাসে গ্যাস চুরির প্রতিকার করা হয়নি। বরং মিটারবিহীন চুলায় ব্যবহৃত গ্যাসের পরিমাণ হিসাবে বেশী দেখানোর সুযোগ রেখে গ্যাস চুরির সুযোগ বহাল রাখা হয়েছে। সিস্টেমলস সুবিধা অন্য সব কোম্পানিকে দেয়া না হলেও তিতাসকে দেয়া হয়েছে ২%। এসব অসংগতি গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির নিয়ামক।
গ্যাসের উৎস নিশ্চিত না করেই পশ্চিমা ালে বিতরণ লাইন বসানো হয়েছে ৭ জেলায়। সেসব লাইনে গ্যাস নেই। এমন অনেক স ালন ও বিতরণ লাইন স্বল্প ব্যবহৃত। ক্ষেত্র বিশেষে অব্যবহৃত। বিদ্যুৎ উৎপাদনক্ষমতা, এমনি কি সঞ্চালন ও বিতরণ ক্ষমতা ব্যবহারের ক্ষেত্রেও এমন অবস্থা দেখা যায়। করোণার কারণে গ্যাস ও বিদ্যুতের চাহিদা হ্রাস পাওযায় এ পরিস্থিতি এখন ভয়াবহ।
বিদ্যুৎ বা জ্বালানি সরবরাহে সম্পদ যে অনুপাতে ব্যবহার হবে সে অনুপাতে সম্পদের অবচয় ব্যয় ধরে মূল্যহার নির্ধারণ হয় না। সমূদয় সম্পদ মূল্য ধরে ব্যয় নির্ধারণ করা হয়। ফলে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির সরবরাহ ব্যয়হার বৃদ্ধি পায়। সম্পদের ব্যবহার হ্রাস পাওয়ায়এখন আরো বৃদ্ধি পাবে।
করোণার কারণে রাজ্স্ব ঘাটতি বাড়বে। ফলে ভর্তুকিও বাড়বে।
হিসাবে দেখা যায়, বিদ্যুৎ উৎপাদনক্ষমতা প্রায ২২ হাজার মেগাওয়াট। সর্বোচ্চ চাহিদা প্রায় ৯ হাজার মেগাওয়াট। বিপুল পরিমাণ উৎপাদনক্ষমতা উৎপাদনে নেই। স্বাভাবিক অবস্থায়ও চাহিদার তুলনায় উৎপাদনক্ষমতা উদ্বৃত্ত ছিল। সরকারের পক্ষ থেকে বিদ্যুৎ রপ্তানির কথাও বলা হচ্ছে।
গণশুনানীতে প্রমাণিত হয়, চাহিদা না থাকা সত্বেও ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকন্দ্রের চুক্তির মেয়াদ বৃদ্ধি করে অন্যায় ও অযৌক্তিকভাবে বছরে প্রায় ২ হাজার ২০০ কোটি টাকা ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধ করা হয়। বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয়বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে ভোক্তাদের অর্থে বিদ্যুৎ রক্ষণাবেক্ষণ ও উন্নয়ন তহবিল গঠিত হয়। এ তহবিলের অর্থ অনুদান হিসাবে বিনিয়োগ করা বিধান ছিল।
সে বিধান পরিবর্তণ করে অনুদানের পরিবর্তে সুদে বিনিয়োগ করার বিধান করা হয়। তাতে উৎপাদনে অযৌক্তিকভাবে ব্যয়বৃদ্ধি পায় প্রায় ১ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। মেয়াদ উত্তীর্ণ অর্থাৎ ২০ বছরের উর্দ্ধে প্রায় ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট উৎপাদনক্ষমতা সম্পন্ন বিদ্যুৎপ্ল্যান্ট উৎপাদনে রেখে অযৌক্তিক ব্যয়বৃদ্ধি করা হয়েছে কমপক্ষে ১ হাজার কোটি টাকা ।
গণশুনানিতে প্রমাণ পাওয়া যায়, বিদ্যুৎ ও গ্যাস উৎপাদন, স ালন ও বিতরণে চিহ্নিত অযৌক্তিক ব্যয়সমূহ হ্রাস করা হলে বছরে যথাক্রমে প্রায় ১০ ও ১২ হাজার কোটি সাশ্রয় হতে পারে।
অর্থনীতি স্বাভাবিক না হওয়া অবধি বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে সরকারি মালিকানাধীন কোম্পানিসমূহ কস্ট প্লাস নয় শুধু কস্টভিত্তিতে পরিচালিত হলে প্রাক্কলিত রাজস্ব চাহিদা প্রায় ১০% গ্যাস ও তেলে, কয়লায় ৪০% এবং বিদ্যুতে ৫% হ্রাস পেতো। বিদ্যমান অবস্থায় রাজস্ব চাহিদা হ্রাসের পরিমান হতে পারে ১০ হাজার কোটি টাকা। সেই সাথে ট্যাক্স, ভ্যাট, ডিউটি এসব গ্রহণযোগ্য পর্যায়ে কমিয়ে আনা হলে বিদুৎ ও জ্বালানীর সরবরাহ ব্যয় অনেক কমে আসবে। ঘাটতি হ্রাস পাবে। মূল্যহার কমানো যাবে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে মজুদ অর্থের পরিমাণ কম-বেশী প্রায় ৭০ হাজার কোটি টাকা। ভোক্তার জমানতের অর্থের পরিমাণ কমপক্ষে ১০ হাজার কোটি টাকা। এসব অর্থ বিদ্যুৎ ও জ্বালানী খাত উন্নয়নে বিনিয়োগ হলে ব্যাংক ঋণ নির্ভরতা কমবে এবং সুদ বাবদ ব্যয় হ্রাস পাবে। ফলে বিদ্যুৎ ও জ্বালানী সরবরাহ ব্যয় হ্রাস পাওয়ায় মূল্যহার কমানো যাবে।
গণশুনানিতে পেট্রোবাংলা, তিতাস, জিটিসিএল, এনএলডিসি, বড়পুকুরিয়া খনির দুর্নীতিসহ বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের দুর্নীতি ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের তথ্য-প্রমাণ তুলে ধরা হয়। সেসব দুর্নীতি ও অপরাধ মুক্ত হলে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহ ব্যয় যৌক্তিক হবে এবং মূল্যহার বৃদ্ধির প্রবণতা হ্রাস পাবে। মূল্যহার কমানো যাবে।
তাছাড়া বিগত গণশুনানিসমূহে প্রমাণ পাওয়া যায়, সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করা হলে বিদ্যুৎ/গ্যাসের সরবরাহ ব্যয়হার হ্রাস পাবে এবং মূল্যহার কমানো যাবে। সে লক্ষ্যে বিগত একাধিক গণশুনানিতে অংশীজন প্রতিনিধি সমন্বয়ে গঠিত তদন্ত কমিটি দ্বারা গ্যাস অনুসন্ধান এবং বিদ্যুৎ/গ্যাস উৎপাদন, সঞ্চালন ও বিতরণ সামর্থ বৃদ্ধির যথার্থতা নিরূপন করে একটি কৌশলগত পরিকল্পনা প্রনয়নের প্রস্তাব করা হয়। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত দূর্নীতি মুক্ত করার লক্ষ্যে অপর একটি কৌশলগত পরিকল্পনা প্রণয়নের দায়িত্ব অনুরূপ কমিটিকে দেয়ারও প্রস্তাব করা হয়।
বিদ্যুতে ও জ্বালানির দাম কমানোর জন্য ক্যাবের পক্ষ থেকে নিম্মরূপ প্রস্তাব করা হলো :
সকল ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ক্যাপাসিটি চার্জ বাদ দিয়ে এবং ২০ বছরের বেশী বয়সী সরকারি বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলিকে উৎপাদনের বাইরে রেখে উৎপাদন ব্যয় নির্ধারণক্রমে বিদ্যুতের মূল্যহার কমানো প্রস্তাব করা হলো,বিদ্যুৎ উন্নয়ন ও গ্যাস উন্নয়ন উভয় তহবিলের অর্থ সুদে বিনিয়োগের পরিবর্তে যথাক্রমে পিডিবি কর্তৃক বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং বাপেক্স কর্তৃক গ্যাস অনুসন্ধানে অনুদান হিসাবে বিনিয়োগক্রমে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্যহার কমানোর প্রস্তাব করা হলো,বিদ্যুৎ/গ্যাস সরবরাহে সম্পদ অর্জন অযৌক্তিকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
তা রোধ করা হলে সরবরাহ ব্যয় হ্রাস পায় এবং মূল্যহার কমানো যায়।
ফলে সম্পদ যে অনুপাতে বিদ্যুৎ কিংবা জ্বালানি সরবরাহে ব্যবহার হয়, অবচয় ব্যয় সেই অনুপাতে ধরে বিদ্যুৎ/গ্যাসের সরবরাহ ব্যয় নির্ধারণক্রমে মূল্যহার কমানোর প্রস্তাব করা হলো, বিদ্যুৎ উপাদনে ব্যবহৃত কয়লার মূল্যহার কমিয়ে যৌক্তিক করে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় হ্রাস করে বিদ্যুতের মূল্যহার কমানোর প্রস্তাব করা হলো,ব্যক্তি খাত বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে তেলভিত্তিক বিদ্যুৎ ক্রয় রহিত করে। সরকারি খাতের বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহৃত জ্বালানি তেলের মূল্যহারে তেলের আমদানি ব্যয় হ্রাস সমন্বয় করে বিদ্যুতের মূল্যহার কমানোর প্রস্তাব করা হলো। মূল্যহার ন্যায্য ও যৌক্তিক করার লক্ষ্যে বিইআরসি আইন মতে বিইআরসি কর্তৃক এলপিজি ও জ্বালানী তেলের মূল্যহার নির্ধারণ করার প্রস্তাব করা হলো।
বিগত গণশুনানীতে বিদ্যুৎ/গ্যাস উৎপাদন, সঞ্চালন ও বিতরণে চিহ্নিত অযৌক্তিক ব্যয়সমূহ যৌক্তিক করে মূল্যহার কমানোর প্রস্তাব করা হলো,
অর্থনীতি স্বাভাবিক না হওয়া অবধি বিদ্যুৎ ও জ্বালানির সরবরাহ ব্যয় হ্রাস করে মূল্যহার কমানোর লক্ষ্যে :
(ক) বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে সরকারি কোম্পানিসমূহ কস্ট প্লাস নয় শুধু কস্টভিত্তিতে পরিচালিত করা এবং (খ) সেই সাথে ট্যাক্স, ভ্যাট, ডিউটি ইত্যাদি গ্রহণযোগ্য পর্যায়ে কমিয়ে আনার প্রস্তাব সরকারের নিকট পেশ করার প্রস্তাব করা হলো।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে মজুদ অর্থ ও ভোক্তার জামানতের অর্র্থ বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত উন্নয়নে বিনিয়োগ করে ব্যাংক ঋণ নির্ভরতা কমিয়ে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহ ব্যয় হ্রাস করে মূল্যহার কমানোর প্রস্তাব করা হলো।
বিদ্যুৎ ও গ্যাস খাতে অর্জিত সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে অংশীজন প্রতিনিধি নিয়ে গঠিত তদন্ত কমিটি দ্বারা গ্যাস অনুসন্ধান এবং বিদ্যুৎ/গ্যাস উৎপাদন, সঞ্চালন ও বিতরণ সামর্থ বৃদ্ধির যথার্থতা নিরূপন করে একটি কৌশলগত পরিকল্পনা প্রনয়নের প্রস্তাব করা হলো।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানী খাত দুর্নীতি মুক্ত করার লক্ষ্যে অপর একটি কৌশলগত পরিকল্পনা প্রনয়নের দায়িত্ব অনুরূপ কমিটিকে দেয়ার প্রস্তাব করা হলো।
ওইসব কমিটি কর্তৃক প্রণীত কৌশলগত পরিকল্পনা বিইআরসির অনুমোদনক্রমে বিদ্যুৎ ও জ্বালানিখাতভূক্ত সকল ইউটিলিটি ও সংস্থাকে দুর্নীতিমুক্ত এবং বিদ্যুৎ ও জ্বালানির সরবরাহ ব্যয় ন্যায্য ও যৌক্তিককরণের লক্ষ্যে বাস্তবায়নের প্রস্তাব করা হলো। বিগত অর্থমন্ত্রীর প্রস্তাব মতে ডিপিএম-এর পরিবর্তে ওটিএম-এর মাধ্যমে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে সকল ক্রয় নিশ্চিত করার প্রস্তাব করা হলো। # প্রেস বিজ্ঞপ্তি ।