দূরবীন নিউজ প্রতিবেদক :
বায়তুল মোকাররমের ভারপ্রাপ্ত খতিব মুফতি মাওলানা মিজানুর রহমান জানিয়েছেন , কুরবানি না করে ওই অর্থ গরিবদের মধ্যে বিতরণ করে দেয়ার কোনো সুযোগ নেই। তিনি জানান,আসলে এখানে শরিয়ত কী বলেছে? ঈদুল আজহায় পশু কুরবানি করাটা একটি সুনির্দিষ্ট ওয়াজিব, এটা ইসলামের বিধান। এই বিধানটি পালন করতে হয় নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ১০ থেকে ১২ জিলহজের মধ্যে। এটা ওয়াজিব।
বায়তুল মোকাররমের ভারপ্রাপ্ত খতিব শুক্রবার (৩ জুলাই) জুমার খুতবায় এই প্রসঙ্গে বলেন, গত কিছুদিন থেকে আমরা শুনছি বিভিন্ন মিডিয়াতে কিছু আলোচনাও আসছে। কুরবানি করা এই পরিস্থিতিতে কতটুটা সম্ভব? করা যাবে কি, যাবে না? নাকি কোনো বিকল্প কিছু করা যাবে?
অনেকে এটাও বলছেন যে, কুরবানি না করে, ওই টাকা পয়সা গরিব মানুষকে দিয়ে দিলে তো আরো ভালো হয়। এরকম চিন্তা ভাব বা খেয়ালও কেউ কেউ পেশ করেছেন। আসলে এখানে শরিয়ত কী বলেছে? ঈদুল আজহায় পশু কুরবানি করাটা একটি সুনির্দিষ্ট ওয়াজিব বিধান। এই বিধানটি পালন করতে হয় নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে।।
তিনি হাদিসের উদ্বৃতি দিয়ে বলেন, রাসুলকে (স.) জিজ্ঞাসা করা হলো- ইয়া রাসুলাল্লাহ, কুরবানি জিনিসটা কী? জবাবে রাসুল (স.) বলেছিলেন, এটা হচ্ছে তোমাদের পিতা ইব্রাহিমের (আ.) গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাত। এই গুরুত্বপূর্ণ ওয়াজিব বিধানটি অবশ্যই আমরা পালন করবো। যার ওয়াজিব তাকে এটি পালন করতে হবে।
তিনি বলেন, জিলহজ মাসের ১০ থেকে ১২ তারিখ পর্যন্ত এই তিন দিন যে ব্যক্তি নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক (সাড়ে সাত ভতি স্বর্ণ বা সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপার যেকোনো একটির সমপরিমাণ সম্পত্তি) তার জন্য গরু মহিলা, উট এগুলোর একটা অংশ অথবা ছাগ, দুম্বা এসব পশুর একটি কুরবানি করা ওয়াজিব।
খতিব বলেন, অন্য সময়ে যারা অধিক পরিমাণে করতাম এমনটি যদি হয় তাহলে তারা তা না করে সেই অর্থটা বিলিয়ে দিতে পারেন। এটাও সাথে খেয়াল রাখতে হবে কুরবানির পশুর গোশত ও চামড়ায় গরিবের হক রয়েছে। এটা থেকে গরিবরা যেন বঞ্চিত হয়ে না যায়। সে কাজগুলো আঞ্জাম দিতে হবে। ফলে এটা গুরুত্বপূর্ণ বিধান এটা পালন করতে হবে।
খুতবায় বলা হয়, এখানে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, এখন করোনা চলছে। এসময়ে অন্য সময়ের চেয়ে বেশি সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে করতে হবে। সরকারিভাবে কুরবানির জন্য স্থান নির্ধারণ করে দেয়া হলে শৃঙ্খলার জন্য, পরিবেশ দূষণ মুক্ত রাখার জন্য নির্দেশ দিলে সেটাও মেনে চলা উচিত।
এদিকে করোনা পরিস্থিতিতে সাবধানতা অবলম্বন অব্যাহত রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করে খুতবায় মুফতি মিজান বলেন, এই যে বর্তমান কঠিন একটা সময় আমরা পার করছি, এটা বিশেষ পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে আমরা যাচ্ছি। চারিদেক মহামারি এসময়ে আমাদেরকে অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে অধিক সাবধানতা অবলম্বন করে চলতে হচ্ছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য বিভিন্ন দিক থেকে বিভিন্নভাবে বলা হচ্ছে।
আলেম উলামারা বলছেন, সরকারিভাবে স্বাস্থ্যবিষয়ক বিভিন্ন সংস্থা থেকে, মন্ত্রণালয় থেকে, সরকারের বিভিন্ন সংস্থা থেকে আমাদেরকে সতর্ক করা হচ্ছে। সাধনতার সাথে চলতে বলা হচ্ছে। এ বিষয়টা বারবার আমরা বলছি কেন? এটা আমাদের করণীয়। এটা আমাদের দ্বীন পালনেরই একটা অংশ।
স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ইসলাম ও মুহাম্মদ (স.) নিজেও স্বাস্থ্য সুরক্ষার ব্যাপারে আমাদেরকে নির্দেশনা দিয়েছেন। সাবধানতা অবলম্বন করতে বলেছেন। অসুস্থ হলে যেমন চিকিৎসনার কথা বলেছেন মানুষ যাতে রোগব্যাধিতে আক্রান্ত না হয় সেজন্য তিনি কিছু বিষয়ে সতর্কতার সাথে জীবন পরিচালনা করতে আমাদেরকে নির্দেশনা দিয়েছেন।
তিনি বলেন, হাদিসের কিভাবগুলোতে বিশাল একটা অধ্যায় চিকিৎসা বিষয়ক অধ্যায়, যেখানে (স.) নির্দেশনা দিয়েছেন কিভাবে চলবে। আমাদের স্বাস্থ্য কিভাবে ঠিক রাখবো। কী খাব, ব্যবহার করবো সব হাদিসে এসেছে। কারণ সুস্থতার সাথে সময় কাটানোর চেষ্টা করাটা জরুরি।
একদিকে দোয়া করা সুস্থতার জন্য আল্লাহর কাছে চাওয়া শিখিয়েছেন আরেক দিকে বাহ্যিক উপকরণ ব্যবহার করতে আমাদের নির্দেশনা দিয়েছেন। সবমিলিয়ে এটা ইসলামের একটা অংশ। আমরা বারবার বলছি। করোনা যে পরিস্থিতি তৈরী হয়েছে মাস্ক ব্যবহার করতে বলা হয়েছে। সাবান পানি দিয়ে হাত ধোয়া ও সুরক্ষা সামগ্রী ব্যবহারের ব্যাপারে বলা হচ্ছে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে মসজিদে, হাটে বাজারে চলাচল করতে বলা হচ্ছে কেন? কারণ এটা এই মুহূর্তে করণীয়।
তিনি বলেন, আমাকে চিন্তা করতে হবে যে, আমি একা সুস্থ থাকলে হবেনা। আামদের চারপাশের মানুষ, আমার সঙ্গী আমার প্রতিবেশী যারা সবাই ভালো থাকতে হবে। দেশ সমাজের সবাই ভালো থাকতে হবে। বিষয়গুলো সরকারের সংস্থা বলছেন, একজন আলেম খতিব বলছেন শুধু এজন্য করবো এটা নয়, এটা শরিয়তের বিধান হিসেবেও পালন করবো। সুন্নত হিসেবে পালন করবো। এখন এটা হচ্ছে শরিয়তের একটা অংশ।
আমি যদি শরিয়ত মনে করে সুন্নাত মনে করে ইসলামের শিক্ষা মনে করে এই কাজগুলো পালন করলে একদিকে যেমন ভালো থাকবো অন্য দিকে এর জন্য আল্লাহর কাছে এর জন্য জাযা ও সওয়াব পাব। বিষয়টাকে এভাবে দেখলে আমরা সবাই ভালো থাকতে পারবো। আমরা সতর্ক থাকলে আল্লাহর রহমত আসবে। আমরা এই অবস্থা থেকে উত্তরণ পাব। সাথে সাথে আল্লাহর কাছে তওবা করতে হবে, নিঃশর্ত আত্মসমর্পণও করতে হবে। # কাশেম