দূরবীণ নিউজ ডেস্ক:
বাংলাদেশ বার কাউন্সিলে আইনজীবীদের তালিকাভুক্তির লিখিত পরীক্ষা নিয়ে কয়েকটি কেন্দ্রে হট্টগোল, ভাংচুর এবং পরীক্ষার খাতা ছিড়ে ফেলারঘটনা ঘটেছে।
শনিবার(১৯ডিসেম্বর) সকাল ৯টা থেকে ঢাকার ০৯টি কেন্দ্রে প্রায় ১৩ হাজার পরীক্ষার্থী অংশ নেন। কিন্তু প্রশ্নপত্র হাতে পাওয়ার পর ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন পরীক্ষার্থীরা। অনেকে পরীক্ষা বর্জন করে কেন্দ্র থেকে বের হয়ে যান। শিক্ষার্থীদের দাবি, এবারের প্রশ্নপত্র অনেক ‘কঠিন’ হয়েছে। পাশাপাশি পরীক্ষায় সিলেবাসের বাইর থেকে প্রশ্ন এসেছে। এতে ১০ শতাংশ পরীক্ষার্থীও পাস করবে না।
পরীক্ষার্থীদের অভিযোগ, করোনার প্রকোপের কারণে লিখিত পরীক্ষা না নিয়ে শুধু ভাইভার মাধ্যমে আইনজীবী সনদ দেয়ার দাবিতে আন্দোলন করায় প্রশ্ন অস্বাভাবিক কঠিন করা হয়েছে। কেউ কেউ অভিযোগ করেন, নির্ধারিত বইয়ের ভেতর থেকে প্রশ্ন করা হয়নি।
সকাল সোয়া ৯টার দিকে পুরান ঢাকার মহানগর মহিলা কলেজ কেন্দ্রে দেখা গেছে, সব রুমের পরীক্ষার্থীরা শুরুতে হৈ-হুল্লোড় শুরু করেন। এক পর্যায়ে রুম থেকে বের হয়ে যান। এতে কেন্দ্রজুড়ে আতঙ্ক দেখা দেয়। একই ধরনের ঘটনা ঘটেছে মোহাম্মদপুর সরকারি স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রেও। সেখানে পরীক্ষাকেন্দ্রে ভাঙচুরও করা হয়েছে।
বিক্ষুব্ধ পরীক্ষার্থীরা অন্যদের পরীক্ষার খাতা ছিড়ে ফেলে। এ সময় তাদের বিভিন্ন স্লোগান দিতে দেখা যায়। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে একটি সূত্র। মোহাম্মদপুর সরকারি স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে বার কাউন্সিলের অনেক লিখিত পরীক্ষার খাতা ছিড়ে পড়ে থাকতে দেখা গেছে।
নাম না প্রকাশের শর্তে পটুয়াখালী থেকে আসা এক পরীক্ষার্থী জানিয়েছে, পরীক্ষার প্রশ্ন কঠিন এসেছে এমন অভিযোগ তুলে বেশ কিছু শিক্ষার্থী তারসহ অন্যদের পরীক্ষার খাতা ছিনিয়ে নেয়। পরে ময়লা থেকে সেই খাতাটি তুলে তিনি ম্যাজিস্ট্রেটের হাতে দেন। খাতায় তিনি ১ ঘণ্টায় দুটি প্রশ্নের উত্তর লিখতে পেরেছেন। তিনি ভবিষ্যত নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন।
বিসিএসআইআর হাইস্কুলে একই অবস্থা দেখা গেছে। সেখানে পরীক্ষার দুই ঘণ্টা যেতেই গোলোযোগের সৃষ্টি হয়। এছাড়া মোহাম্মদপুর কেন্দ্রীয় কলেজেও ভাংচুর করা হয়েছে।সেখানেও পরীক্ষার খাতা পড়ে থাকতে দেখা গেছে।
লক্ষ্মীবাজারে ঢাকা মহানগর মহিলা কলেজে পরীক্ষা শুরু হলে প্রথমেই কিছু শিক্ষার্থী ‘প্রশ্ন ঠিক হয়নি’ বলে অভিযোগ করেন। এরপর তাদের সঙ্গে অনেকেই যুক্ত হন। এক পর্যায়ে তারা সিট থেকে উঠে পড়েন। এ নিয়ে পরীক্ষা হলে হট্টগোল শুরু হয়। এ সময় কিছু পরীক্ষার্থী পরীক্ষা দেয়ার চেষ্টা করলেও বাকিরা তাদের অনুৎসাহিত করে। তারা পরীক্ষার্থীদের খাতা টেনে নিয়ে বাইরে চলে যান।
সাধারণ শিক্ষার্থীরদের অভিযোগ, বার কাউন্সিলের লিখিত পরীক্ষা বাতিল করে শুধু মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে সনদের দাবিতে আগে থেকেই একদল পরীক্ষার্থী আন্দোলন করছিল। তারাই এই হামলা করেছে বলে পরীক্ষায় অংশ নেয়া শিক্ষার্থীরা জানান।তবে তাদের সঙ্গে কিছু পরীক্ষার্থীও যোগ দিয়েছেন।
যথেষ্ট পরিমাণ নিরাপত্তার ব্যবস্থা না করে এভাবে পরীক্ষা নেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন তারা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন পরীক্ষার্থী বলেন, ‘বার কাউন্সিল যে প্রশ্ন করেছে তা কোনো প্রশ্নের মাপকাঠিতেই পড়ে না। এটা কোনো প্রশ্নই হয়নি। জুডিশিয়ারির পরীক্ষায় এমন প্রশ্ন হতেই পারে না। এ কারণে আমরা পরীক্ষা না দিয়ে বের হয়ে গেছি। কিছু শিক্ষার্থী পরীক্ষা দিতে চাইলেও তাদেরকে বাকিরা ধরে বের করে দিয়েছে। এখন শিক্ষার্থীরা হলের বাইরে অবস্থান করছে।’
সূত্র জানায়, পরীক্ষার যাদের খাতা ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে, তাদের থানায় জিডি করতে বলা হয়েছে। তাদের বিষয়ে পরবর্তীতে ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলা হয়েছে।
মোহাম্মাপুর মহিলা কলেজ (বায়ে), মোহাম্মদপুর কেন্দ্রীয় কলেজ (মাঝে) ও সর্বশেষ মোহাম্মাদপুর মডেল স্কুল এন্ড কলেজে পরীক্ষার খাতা ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে থাকতে দেখা যায় ,মোহাম্মাপুর মহিলা কলেজ (বায়ে), মোহাম্মদপুর কেন্দ্রীয় কলেজ (মাঝে) ও সর্বশেষ মোহাম্মাদপুর মডেল স্কুল এন্ড কলেজে পরীক্ষার খাতা ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে থাকতে দেখা যায়
বাংলাদেশ বার কাউন্সিলে আইনজীবীদের সনদ পেতে নৈর্ব্যক্তিক, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হয়। আবার ওই তিন ধাপের যেকোনো একটি পরীক্ষায় শিক্ষার্থীরা একবার উত্তীর্ণ হলে পরবর্তী পরীক্ষায় তারা দ্বিতীয় ও শেষবারের মতো অংশগ্রহণের সুযোগ পান। তবে দ্বিতীয়বারেও অনুত্তীর্ণ হলে তাদের পুনরায় শুরু থেকেই পরীক্ষায় অংশ নিতে হয়।
সে অনুসারে ২০১৭ সালের ৩৪ হাজার শিক্ষার্থীর মধ্যে থেকে লিখিত পরীক্ষায় দ্বিতীয় ও শেষবারের মতো বাদ পড়া তিন হাজার ৫৯০ জন শিক্ষার্থী এবং ২০২০ সালে প্রায় ৭০ হাজার শিক্ষানবিশ আইনজীবীর মধ্যে নৈর্ব্যক্তিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ আট হাজার ৭৬৪ শিক্ষার্থী মোট ১২ হাজার ৮৫৮ জন সনদপ্রত্যাশী এবার লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করছেন।#