দূরবীণ নিউজ ডেস্ক :
বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ডপ্রোডাকশন কোম্পানি লিমিটেডের (বাপেক্স) সাবেক উপ মহাব্যবস্থাপক (ভূতত্ত্ব) নাজমা বেগমের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম, দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার এবং বিপুল পরিমান অবৈধ সম্পদ অর্জনের অনেক চা ল্যকর তথ্য বেরিয়ে এসেছে দুদকের অনুসন্ধান ও তদন্তে।
শুধু নাজমা বেগমের বিরুদ্ধেই বেরিয়ে এসেছে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত প্রায় ৮৪ লাখ ও তথ্য গোপন ৪১ লাখ টাকার সম্পদের তথ্য।একই সঙ্গে তার স্বামী আহসানুল বাশারের বিরুদ্ধে ৫০ লাখ ৬৫ হাজার ১৯৭ টাকার জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের আরো তথ্য পেয়েছে দুদক। আরও অনেক তথ্য উপাত্ত্ব বেরিয়ে আসছে । দুদকের সহকারী পরিচালক মো. আতাউর রহমান সরকার দীর্ঘদিন যাবৎ নাজমা বেগম এবং তার স্বামীর বিরুদ্ধে অনুসন্ধান ও তদন্ত কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন।
এদিকে বাপেক্সের সাবেক উপ মহাব্যবস্থাপক নাজমা বেগম এবং তার স্বামীর বিরুদ্ধে গত ১৪ ফেব্রুয়ারি দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে (ঢাকা-১) এই মামলা দু’টি দায়ের করেন দুদকের সহকারী পরিচালক মো. আতাউর রহমান সরকার।
জানা যায়,নাজমা বেগমের বিরুদ্ধে করা মামলার অভিযোগে উল্লেখ রয়েছে তিনি জ্ঞাত আয়বহির্ভূত ৮৩ লাখ ৮৬ হাজার ৫০৯ টাকার সম্পদ অর্জন করেছেন। আন এসব সম্পদ ভোগদখলে রেখেছেন এবং তিনি ৪০ লাখ ৬১ হাজার ১৯৩ টাকা মূল্যের স্থাবর সম্পদের তথ্য গোপন করে মিথ্যা তথ্য সংবলিত সম্পদ বিবরণী দুদকে দাখিল করেছেন। এসব অপরাধে তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন ২০০৪ এর ২৬(২) ও ২৭(১) ধারায় মামলাটি রেকর্ড করা হয়েছে।
তার সম্পদের মধ্যে রয়েছে, ১৭/এ আজিমপুর রোড, লালবাগে ১ কোটি ৩ লাখ ৬১ হাজার ১৯৩ টাকা মূল্যের ১ টি বাড়ি, রাজউকের পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে ৮ লাখ ৬৪ হাজার ৬০০ টাকা মূল্যের ৫ কাঠার ১ টি প্লটসহ মোট ১ কোটি ১২ লাখ ২৫ হাজার ৭৯৩ টাকা মূল্যের স্থাবর সম্পদ এবং আসবাবপত্র, ইলেকট্রনিক্স পন্য, স্বর্নালংকার, হাতে নগদ ও ব্যাংক জমা বাবদ মোট ১৫ লাখ ৯১ হাজার ২৬০ টাকা মূল্যের অস্থাবর সম্পদসহ মোট ১ কোটি ২৮ লাখ ১৭ হাজার ৫৩ টাকা মূল্যের স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের তথ্য পেয়েছে দুদক।
এছাড়াও দুদকের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে আসামী নাজমা বেগমের বৈধ আয় ১ কোটি ১৩ লাখ ৩৯ হাজার ২২৫ টাকা এবং তিনি স্বামী আহসানুল বাশারকে দান ও পারিবারিক ব্যয়সহ মোট ব্যয় করেছেন ৬৯ লাখ ৮ হাজার ৬৮১ টাকা। ফলে তারা স্বামীকে দান ও পারিবারিক ব্যয়সহ তার অর্জিত সম্পদের মোট ব্যয় ১ কোটি ৯৭ লাখ ২৫ হাজার ৭৩৪ টাকা। অপরদিকে তার গ্রহণযোগ্য আয় রয়েছে মাত্র; ১ কোটি ১৩ লাখ ৩৯ হাজার ২২৫ টাকা। এক্ষেত্রে তার অবৈধ আয়/ সম্পদ ৮৩ লাখ ৮৬ হাজার ৫০৯ টাকা।
দুদকের মামলার অভিযোগে আরও উল্লেখ রয়েছে, আসামী নাজমা বেগম দুদকে দাখিলকৃত সম্পদ বিবরণীতে তার নামে ৭১ লাখ ৬৪ হাজার ৬০০ টাকার স্থাবর সম্পদ অর্জনের তথ্য উপস্থাপন রেছেন। কিন্তু তার দাখিল করা সম্পদ বিবরণী যাচাইকালে তার নামে ১ কোটি ১২ লাখ ২৫ হাজার ৭৯৩ টাকা মূল্যের স্থাবর সম্পদ অর্জনের তথ্য পাওয়া যায়। অর্থাৎ তিনি ৪০ লাখ ৬১ হাজার ১৯৩ টাকা মূল্যের স্থাবর সম্পদ অর্জনের তথ্য গোপন পূর্বক মিথ্যা তথ্য সম্পদ বিবরণী দুদকে দাখিল করেন। কাজেই নাজমা বেগম নিজ নামে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত ৮৩ লাখ ৮৬ হাজার ৫০৯ টাকার সম্পদ অর্জনপূর্বক ভোগ দখলে রেখেছেন।
দুদকের দ্বিতীয় মামলার আসামী নাজমার বেগমের স্বামী আহসানুল বাশারের নামে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত ৫০ লাখ ৬৫ হাজার ১৯৭ টাকার সম্পদ অর্জনপূর্বক ভোগদখলে রাখার অপরাধে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন’২০০৪ এর ২৭(১) ধারায় তার বিরুদ্ধে পৃথক আরেকটি মামলা দায়ের করা হয়।
মামলায় উল্লেখ করা হয়; তিনি মায়ের নিকট থেকে হেবা মূলে প্রাপ্ত রাজধানীর গোপিবাগ ১ম লেন, মতিঝিল প্লট নং -১৩ এ ৪.৭০ কাঠা জমির ১/৬ অংশ এবং অস্থাবর সম্পদ হিসেবে এস,এম কার্টুন এন্ড এক্সেসরিজ লি: এ ১ লাখ ৫০ হাজার টাকার শেয়ার, এস,এম আবাসন লি: এ ৩ লাখ টাকার শেয়ার, শ্যামল বাংলা মিডিয়ার বাংলা ভিশনে ২১ লাখ ১০ হাজার টাকার শেয়ার, ডায়নামিক স্টিল কোং লি: এ ৫০ লাখ টাকার শেয়ার, ব্যবস্যার মূলধন ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা,০১ টি ব্যক্তিগত গাড়ি ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা ও হাতে নগদ ও ব্যাংক জমা ৫০ লাখ ৫৫ হাজার ২১০ টাকাসহ মোট ১ কোটি ৩১ লাখ ৫ হাজার ২১০ টাকা মূল্যের সম্পদের তথ্য পেয়েছে দুদক।
সম্পদ বিবরণী যাচাইকালে আসামী আহসানুল বাশারের ব্যয়ের রেকর্ডপত্র পর্যালোচনায় পাওয়া যায় ১ কোটি ১১ লাখ ৭৭ হাজার ৬০২ টাকা এবং তার পারিবারিক ব্যয় ৩১ লাখ ৩৭ হাজার ৫৮৯ টাকা। অর্থাৎ তার অর্জিত ৫০ লাখ ৬৫ হাজার ১৯৭ টাকা মূল্যের সম্পদ অর্জনের স্বপক্ষে বৈধ কোন রেকর্ডপত্র দেখাতে পারেননি। এই অপরাধে তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন ২০০৪ এর ২৭(১) ধারায় মামলাটি দায়ের করা হয়েছে। #