দূরবীণ নিউজ ডেস্ক:
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। বলেছেন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বৈঠক ফলপ্রসূ হয়েছে। শনিবার (২৭ মার্চ) রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফর বিষয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফকালে তিনি এ তথ্য জানান।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘১৭ থেকে ২৬ মার্চ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠানমালায় যোগ দিতে পাঁচজন বিদেশি রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান বাংলাদেশ সফর করেছেন।
বাংলাদেশ-ভারত কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে বাংলাদেশ সফরে এসেছেন ভারতের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। করোনা মহামারির মধ্যে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর এটিই প্রথম বিদেশ সফর।’
তিনি বলেন, ‘চিরায়ত সাংস্কৃতিক ও ভৌগোলিক নৈকট্য এবং ঐতিহাসিক মেলবন্ধনের প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ-ভারত বহুমুখী অংশীদারিত্ব বিগত অর্ধশতাব্দী ধরে বিবর্তিত, বিকশিত ও সমৃদ্ধ হয়েছে। দ্বিপাক্ষিক কূটনৈতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে মডেল হিসেবে বিবেচ্য আমাদের এই অকৃত্রিম বন্ধুত্বকে অনবদ্য দ্যোতনা দিয়েছে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর এ সফর।’
‘আজ বাংলাদেশ ও ভারতের প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে অত্যন্ত হৃদ্যতাপূর্ণ পরিবেশে আনুষ্ঠানিক বৈঠক হয়েছে। সফরটি যদিও কিছুটা সিরিমোনিয়াল, তারপরও দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের বহুমাত্রিক ও বিস্তৃত পরিসরে দুই পক্ষের মধ্যে অত্যন্ত অর্থবহ ও সাবসটেনটিভ আলোচনা হয়েছে।
ফলে, বিদ্যমান দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা আরও বেগবান ও জোরদার হবে বলে আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি। মানবসম্পদ ও ভৌত অবকাঠামোগত উন্নয়ন, দারিদ্র্য বিমোচন, সন্ত্রাসবাদ অবসান ও অর্থনৈতিক অগ্রগতির ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর প্রগতিশীল নেতৃত্বে বাংলাদেশের অর্জিত অভূতপূর্ব সাফল্যের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, বাংলাদেশ-ভারত কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি উৎসব যৌথভাবে উদযাপনের বিভিন্ন পরিকল্পনাও তাদের আলোচনায় স্থান পায়। প্রধানমন্ত্রীকে ২০২২ সালে ভারত সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি,’ বলেন তিনি।
তিনি বলেন, ঐতিহাসিক মুজিবনগর-নদীয়া সড়ককে স্বাধীনতা সড়ক নামকরণে বাংলাদেশের প্রস্তাবকে ভারত স্বাগত জানিয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচন-সংশ্লিষ্ট ব্যস্ততা ও সময়স্বল্পতার কারণে এখনই সড়কটি উদ্বোধন করা না গেলেও ভারতীয় পক্ষের প্রয়োজনীয় প্রস্তুতির পর জয়েন্ট সেলিব্রেশনের অংশ হিসেবে অচিরেই এটি উদ্বোধন করা হবে বলে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘ভারতের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যিক ভারসাম্য বাংলাদেশের অনুকূলে আনা এবং বাণিজ্য অবারিত করার উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে ট্রেড ফেসিলিটেশন মেজারস নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। উভয় পক্ষ ট্যারিফ এবং নন-ট্যারিফ অপসারণের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ থেকে পাটজাত পণ্য রপ্তানির ওপর ২০১৭ সাল থেকে ভারত কর্তৃক আরোপিত অ্যান্টি ডাম্পিং ডিউটিজ প্রত্যাহারের অনুরোধ জানানো হয়েছে। স্থলবন্দরগুলোর অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও সুযোগ-সুবিধা সম্প্রসারণের লক্ষ্যে একযোগে কাজ করার ওপরও দুই প্রধানমন্ত্রী জোর দেন। বিএসটিআই এবং ভারতের বিআইএসের মধ্যে নিবিড় সহযোগিতার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
‘বাণিজ্য সম্প্রসারণের লক্ষ্যে রোবাস্ট আঞ্চলিক কানেক্টিভিটির প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন দুই নেতা। সড়ক, রেল ও নৌপথে মাল্টিমোডাল কানেক্টিভিটির মাধ্যমে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির লক্ষ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শী উদ্যোগসমূহের প্রশংসা করেছেন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী।
‘ফেনী নদীর ওপর সম্প্রতি উদ্বোধন হওয়া মৈত্রী সেতুর কথা উল্লেখ করে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর সঙ্গে পরিবহন সংযোগ স্থাপনের বিষয়ে বাংলাদেশের উদার সহায়তার জন্য প্রধানমন্ত্রী মোদি আমাদের প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
কোভিশিল্ড ভ্যাক্সিনের ২ মিলিয়ন ডোজ উপহারের জন্য এবং ৫ মিলিয়ন ডোজের প্রথম ব্যাচের দ্রুত ডেলিভারির জন্য বাংলাদেশ বন্ধুরাষ্ট্র ভারতকে ধন্যবাদ জানিয়েছে। ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে কেনা অবশিষ্ট ভ্যাক্সিন নিয়মিত সরবরাহের অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশ,’ বলেন তিনি।
দুই প্রধানমন্ত্রী যৌথভাবে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছেন- রূপপুর পাওয়ার ইভাকুয়েশন প্রজেক্টের পাঁচটি প্যাকেজ ও মুক্তিযুদ্ধে আত্মোৎসর্গকারী ভারতীয় সৈনিকদের স্মরণে আশুগঞ্জে নির্মিতব্য স্মৃতিস্তম্ভ।
দুই প্রধানমন্ত্রী যৌথভাবে উদ্বোধন/উন্মোচন করেছেন: তিনটি বর্ডার হাট, শিলাইদহের কুঠিবাড়িতে রবীন্দ্র ভবন, ঢাকায় বঙ্গবন্ধু-বাপু ডিজিটাল এক্সিবিশন সেন্টার ও বাংলাদেশ-ভারত কূটনৈতিক সম্পর্কের সুবর্ণজয়ন্তীর স্মারক ডাকটিকিট।/