দূরবীণ নিউজ ডেস্ক :
টি-টোয়েন্টিতে পাকিস্তানের বিপক্ষে জিততে পারেনি বাংলাদেশ। শুরুটা ভাল করলেও পরে সেটা ধরে রাখতে পারেনি বাংলাদেশ।
আজ শুক্রবার (১৯ নভেম্বর) মিরপুরে প্রথম টি-টোয়েন্টিতে পাকিস্তান ৪ উইকেটে জিতেছে। আগে ব্যাট করতে নেমে ৭ উইকেটে ১২৭ রান করে বাংলাদেশ। জবাবে ৪ বল হাতে রেখে ৬ উইকেটে জয়ের বন্দরে পৌঁছায় পাকিস্তান। তিন ম্যাচ সিরিজে ১-০-তে লিড পাকিস্তানের। আগামীকাল শনিবার মিরপুরে দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি।
ব্যাট হাতে ১২৭ রানের স্কোরটা খুব বেশি খারাপ ছিল না টাইগারদের। বল হাতেও শুরুটা ভালো বাংলাদেশের। ২৪ রানে পাকিস্তানের চার উইকেট পতন হয়েছিল। কিন্তু সেখান থেকে ম্যাচ ধীরে ধীরে বের করে আনেন ফখর জামান ও খুশদিল শাহ। এক পর্যায়ে এই দুজনের বিদায়ের পর জয়ের স্বপ্ন দেখছিল বাংলাদেশ। কিন্তু শেষের দিকে মোস্তাফিজ ও শরিফুলকে বেধড়ক পিটিয়ে জয় ছিনিয়ে নেন শাদাব খান ও মোহাম্মদ নওয়াজ।
সহজ লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা সাববীল ছিল পাকিস্তানের। ফর্মে থাকা মোহাম্মদ রিজওয়ান ও বাবর আজমের ব্যাটে প্রথম দুই ওভারে বিনা উইকেটে পাকিস্তান করে ১৩। এরপরই বল হাতে টাইগারদের ঝলক। টানা চার ওভারে পাকিস্তানের নেই চার উইকেট। দলীয় রান তখন ২৪।
তৃতীয় ওভারে ঝলকের শুরুটা করেন মোস্তাফিজুর রহমান। দারুণ এক ডেলিভারিতে বোল্ড করে দেন রিজওয়ানকে। আউট সুইং করবে ভেবে খেলেছিলেন ডানহাতি এই ওপেনার। কিন্তু বল একটু ভেতরে ঢুকে উপড়ে ফেলে তার অফ স্টাম্প। ১১ বলে এক চারে ১১ রান করেন রিজওয়ান।
পরের ওভারে তাসকিন ঝলক। চতুর্থ ওভারের শেষ বলে তিনি বোল্ড করেন এই মুহূর্তে ক্রিকেট বিশ্বের সবচেয়ে ফর্মে থাকা প্লেয়ার বাবর আজমকে। ১০ বলে ৭ রান করে পাক অধিনায়ক হন ইনসাইড এজ বোল্ড। হতভম্ব চোখে সাজঘরে ফেরেন বাবর।
পঞ্চম ওভারে ঘূর্ণি বলে চমক মেহেদী হাসানের। এলবির শিকার বানিয়ে শূন্য রানেই হায়দার আলীকে সাজঘরে ফেরান তিনি। রিভিউ নিয়েও কাজ হয়নি। পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে, অর্থাৎ ষষ্ঠ ওভারে রান আউট শোয়েব মালিক। মোস্তাফিজুর রহমানের বল ব্যাটে খেলতে পারেননি মালিক। এগিয়ে যান কিছুটা। সুযোগ দেখে দ্রুত গ্লাভস খুলে থ্রো করেন নুরুল হাসান সোহান।
ক্রিজে একটু দেরিতে ফেরায় সোহানের থ্রোয়ে ভাঙে স্টাম্প। কয়েকবার পরীক্ষা করে আম্পায়ার সিদ্ধান্ত নেন আউটের। ৩ বলে শূন্য রানে ফিরেন মালিক। ৬ ওভারে পাকিস্তানের স্কোর ৪ উইকেটে ২৪। বাংলাদেশের রান ছিল ৩ উইকেটে ২৫।
দলের এমন কঠিন অবস্থায় হাল ধরেন পঞ্চম উইকেটে অভিজ্ঞ ফখর জামান। তার সাথে খুশদিল শাহ। দেখেশুনে ধীর স্থির মাথায় দলকে এগিয়ে নিতে থাকেন দুজন। এই জুটিতে পাকিস্তান পায় স্বস্তি। তবে এই জুটি ভেঙে বাংলাদেশকে আবার উজ্জীবিত করেন পেসার তাসকিন আহমেদ। অফ স্টাম্পের বাইরের বলে খোঁচা দিতে গিয়ে উইকেটের পেছনে সোহানের গ্লাভসবন্দী ফখর জামান। ৩৬ বলে চারটি চারে ৩৪ রানে থামেন পাকিস্তানের এই টপ অর্ডার। ভাঙে ৫০ বলে ৫৬ রানের জুটি।
খুশদিলের সাথে তখন নতুন পার্টনার শাদাব খান। ধীরে ধীরে এ দুজন এগিয়ে নিতে থাকেন দলকে। তবে বলের চেয়ে রানের সমীকরণ তখনো বেশ। ২৪ বলে দরকার যখন ৩৮ রান, বল হাতে চমক দেখান বাংলাদেশের পেসার শরিফুল। ১৭তম ওভারের পঞ্চম বলে তিনি আউট করেন ক্রিজে জমে যাওয়া খুশদিলকে। এক চার হজম করে তিনি এই ওভারে দেন মাত্র ৬ রান, পান এক উইকেট। ৩৫ বলে তিন চার ও একটি ছক্কায় ৩৪ রান করে খুশদিল ক্যাচ দেন উইকেটের পেছনে সোহানের হাতে।
১৮ বলে দরকার পাকিস্তানের তখন ৩২ রান। বল হাতে ১৮তম ওভারে আসেন মোস্তাফিজ। এই ওভারটি খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল বাংলাদেশের। কিন্তু বল হাতে সেই কারিকুরি দেখাতে পারেননি ফিজ। শাদাব হাঁকান একটি করে চার ও ছক্কা। নওয়াজ শেষ বলে হাঁকান ছক্কা। সব মিলিয়ে এই ওভারে মোস্তাফিজ দেন ১৫ রান।
১২ বলে দরকার তখন ১৭ রান। ১৯তম ওভারে বল করতে আসেন শরিফুল ইসলাম। প্রথম বলে দেন এক রান। দ্বিতীয় বল ডট। তৃতীয় বলে নওয়াজ হাঁকান ছক্কা। পরের বলে দুই। পঞ্চম বলে আবার ছক্কা। মোস্তাফিজের মতো শরিফুলও দেন এই ওভারে ১৫ রান। ম্যাচ তখন পাকিস্তানের মুঠোয়।
৬ বলে দরকার দুই রান। শেষ ওভারের দ্বিতীয় বলে আমিনুলকে ছক্কা হাঁকিয়ে পাকিস্তানকে জয় উপহার দেন শাদাব খান। ১০ বলে এক চার ও দুই ছক্কায় ২১ রানে শাদাব থাকেন অপরাজিত। ৮ বলে এক চার ও দুই ছক্কায় ১৮ রানে অপরাজিত থাকেন মোহাম্মদ নওয়াজ। বল হাতে বাংলাদেশের হয়ে তাসকিন দুটি, মেহেদী, মোস্তাফিজ ও শরিফুল নেন একটি করে উইকেট।
এর আগে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা মোটেই ভালো ছিল না টাইগারদের। পাক বোলিং তোপে শুরু থেকেই কম্পমান ছিল বাংলাদেশের দুই ওপেনার। দলীয় তিন রানে প্রথম উইকেটের পতন। হাসান আলীর বলে মোহাম্মদ রিজওয়ানের হাতে ক্যাচ দেন নাঈম শেখ। তিন বলে তার রান ১।
অনেকটা হুট করে টি-টোয়েন্টি দলে জায়গা পাওয়া সাইফ হাসানের ছিল অভিষেক ম্যাচ। কিন্তু রাঙাতে পারেননি উপলক্ষ। তৃতীয় ওভারে ওযাসিমের বলে স্লিপে ফকর জামানের হাতে ক্যাচ দেন সাইফ। ৮ বলে খেলেও থিতু হতে পারেননি। করতে পারেন মাত্র এক রান।
তিন নম্বরে নামা নাজমুল হোসেন শান্তও পারেননি নিজেকে প্রমাণ করতে। পঞ্চম ওভারে ওয়াসিমের বলে তার হাতেই ক্যাচ দেন ১৪ বলে সাত রান করা শান্ত। ১৫ রানে তিন উইকেটে হারিয়ে ধুঁকতে থাকা বাংলাদেশকে কিছুটা স্বস্তি এনে দেন আফিফ-মাহমুদউল্লাহ জুটি। ষষ্ঠ ওভারে আসে ইনিংসের প্রথম বাউন্ডারি হাঁকান আফিফ।
দলীয় ৪০ রানে চতুর্থ উইকেটের পতন। নওয়াজের বলে বিস্ময়কর আউট মাহমুদউল্লাহ। স্টাম্প না নড়লেও পড়ে যায় বেল। বোকার মতো দাঁড়িয়ে থাকেন বাংলাদেশ ক্যাপ্টেন। রিপ্লেতে আউট নিশ্চিত হওয়ার পর মাঠ ছাড়েন ১১ বলে ৬ রান করা রিয়াদ।
এরপর আফিফ-নুরুল হাসান জুটি দলকে নিয়ে যান ৬১ রান পর্যন্ত। ভালো খেলতে থাকা আফিফ হঠাৎই স্টাম্পিংয়ের শিকার। নওয়াজের বলে বেড়িয়ে এসে মারতে গিয়ে আউট তিনি। ৩৪ বলে দুটি করে সমান চার ও ছক্কায় ইনিংস সর্বোচ্চ ৩৬ রান করেন আফিফ।
এরপর অবশ্য পাক বোলারদের বেশ ভালোমতো মোকাবিলা করে দলকে সম্মানজনক স্কোরে নিয়ে যান নুরুল হাসান সোহান ও মেহেদী হাসান। ২২ বলে দুই ছক্কায় ২৮ রান করেন সোহান। ২০ বলে এক চার ও দুটি ছক্কায় ৩০ রানের দারুণ ইনিংস খেলে অপরাজিত থাকেন মেহেদী হাসান।
৫ বলে দুই রান করে হাসান আলীর বলে বোল্ড হন আমিনুল ইসলাম বিপ্লব। ৩ বলে এক ছক্কায় ৮ রানে অপরাজিত থাকেন তাসকিন আহমেদ। বল হাতে পাকিস্তানের হয়ে হাসান আলী তিনটি, ওয়াসিম দুটি, নওয়াজ ও শাদাব খান নেন একটি করে উইকেট।
বাংলাদেশ একাদশ :
মোহাম্মদ নাঈম শেখ, সাইফ হাসান, নাজমুল হোসেন শান্ত, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ (অধিনায়ক), আফিফ হোসেন, নুরুল হাসান সোহান (উইকেটরক্ষক), শরিফুল ইসলাম, তাসকিন আহমেদ, আমিনুল ইসলাম, মেহেদী হাসান ও মোস্তাফিজুর রহমান। #