ডেস্ক নিউজ
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম। আক্ষেপ করে বলেছেন, ‘ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের আন্দোলনের নায়কদের সরিয়ে কর্তৃত্ব ছিনিয়ে নেয়া হচ্ছে রাজনীতিকদের কাছে ’। স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) প্রথম সহ-সভাপতি (ভিপি)। ছাত্রজীবন শেষ করেই রাজনৈতিক জীবন বেছে নিয়ে গ্রামে গ্রামে ঘুরে ক্ষেতমজুরদের সংগঠিত করেন। ছিলেন বাংলাদেশ ক্ষেতমজুর সমিতির প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক ও পরে সভাপতি।
রাজনৈতিক নানান পটভূমিতে ভূমিকা পালন করেছেন এই নেতা। প্রায় আট বছর কারাবরণ ও আত্মগোপনেও ছিলেন। ‘রাজনীতির নানান প্রসঙ্গ’, ‘মার্কসবাদ একটি চিরায়ত দর্শন’, ‘বিকল্পের কোনো বিকল্প নেই’সহ বিভিন্ন গ্রন্থের লেখক মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম এখনো দেশের গতিবিধির ওপর নজর রাখেন। সম্প্রতি জুলাই গণঅভ্যুত্থানের অর্জন নিয়ে তার সঙ্গে কথা হয় । সাক্ষাৎকার নিয়েছেন জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক সালাহ উদ্দিন জসিম।
সাক্ষাৎকারে মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানের প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। আন্দোলনের আসল নায়কদের একপাশে সরিয়ে নানান রাজনৈতিক ধারার লোকদের কাছে চলে গেছে কর্তৃত্ব।’ তবে হতাশ নন বর্ষীয়ান এই নেতা। তিনি চান, দেশের মানুষের ঐক্য। পাশাপাশি গণতান্ত্রিক ধারা বা রাজনৈতিক নেতৃত্বের হাতে দেশের নিয়ন্ত্রণ তুলে দেওয়া হোক। তবে নির্বাচন যাতে অবাধ নিরপেক্ষ হয়, সেজন্য আগেভাগেই প্রয়োজনীয় সংস্কারগুলো করে নিতে হবে।
আমরা আশাবাদী। আমি তো মনে করি, জনগণ ভুল করেনি। জনগণকে সরিয়ে ফেলা হয়েছে। জনগণের শক্তিকে যদি কেউ আবির্ভাব ঘটাতে সক্ষম হয়, তাহলে কেউ আমাদের বিজয় ঠেকাতে পারবে না। সেটাই কাজ
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের রাজনৈতিক অর্জন কী?
মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম: জুলাই গণঅভ্যুত্থানের এক বছর হয়ে গেলো। যে প্রত্যাশা ও স্বপ্ন নিয়ে ছাত্র-জনতা এ অভ্যুত্থানকে সংগঠিত করেছিল, সেগুলো (প্রত্যাশা) এখনো পূরণ হয়নি। এমনকি সেই আকাঙ্ক্ষার বিপরীত দিকে ঘটনাগুলো পরিচালিত করার আশঙ্কা নানাভাবে সৃষ্টি করা হচ্ছে। এর প্রধান কারণ, এই গণঅভ্যুত্থান কোনো মাস্টার মাইন্ড কিংবা মেটিকুলাস প্ল্যানিং কিংবা কয়েকজন তরুণ-যুব চিন্তাবিদ, একশ বা হাজারখানেক সমন্বয়ক এই গণঅভ্যুত্থানের আসল নায়ক ছিলেন না। আসল নায়ক দেশের ছাত্র-জনতা।
সেই প্রকৃত নায়কদের রাষ্ট্র পরিচালনায় নিয়োজিত না করার কারণে তাদের আশা আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটার বদলে বিভিন্ন দর্শন, নীতি, রাজনৈতিক ধারা অনুসারীদের হাতে কর্তৃত্ব অনেক পরিমাণে চলে গেছে।
তাহলে আপনি কি হতাশ? মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম: আমরা আশাবাদী। আমি তো মনে করি, জনগণ ভুল করেনি। জনগণকে সরিয়ে ফেলা হয়েছে। জনগণের শক্তিকে যদি কেউ আবির্ভাব ঘটাতে সক্ষম হয়, তাহলে কেউ আমাদের বিজয় ঠেকাতে পারবে না। সেটাই কাজ।
এখন তাহলে করণীয় কী? মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম: যারা নিজেদের অরাজনৈতিক বলে দাবি করছে, সেটি গ্রহণযোগ্য নয়। কেননা, রাষ্ট্র ও সরকার পরিচালনার মতো বড় রাজনীতি আর কী আছে? এ কাজের কর্তৃত্ব যে শক্তির হাতে, তারা নিজেদের অরাজনৈতিক বললে এটি অযৌক্তিক বা হাস্যকরই নয়, তা এক ধরনের প্রতারণাও।
এই বিপদ যাতে আমাদের বিজয়ের সম্ভাবনাগুলো বিনষ্ট না করে, সেজন্য প্রথমত আপামর জনগণ, বিশেষ করে মেহনতি জনগণকে সক্রিয় হওয়া প্রয়োজন। দ্বিতীয়ত, গণতান্ত্রিক পরিবেশ রচনা করে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে জনগণের মতামত ও অংশগ্রহণের ব্যবস্থা করে দেশে স্বাভাবিক গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক প্রক্রিয়া চলমান রাখা।
কীভাবে সেটি হবে? মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম: যত তড়াতাড়ি সম্ভব রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় যাওয়া উচিত। অনির্বাচিত সরকার থাকার কারণেই জনগণ বিদ্রোহ করেছিল। সেই পর্ব সমাপ্ত করে জনগণের নির্বাচিত সরকার এবং শাসন প্রতিষ্ঠা করা দরকার। এর মধ্য দিয়ে অন্ধকারের জুলাই দ্রুতই অবসান করতে হবে। তবে নির্বাচন যাতে অবাধ নিরপেক্ষ হয়, সেজন্য আগেভাগেই প্রয়োজনীয় সংস্কারগুলো করে নিতে হবে।
আ.দৈ. / কাশেম