দূরবীন নিউজ ডেস্ক :
ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার আলোচিত মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি হত্যা মামলায় ১৬ আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন বিচারিক আদালত।
বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতনদমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুনুর রশিদ এই রায় ঘোষণা করেন। মৃত্যুদণ্ডের পাশাপাশি সব আসামিকে এক লাখ টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে।
নুসরাতকে হত্যার পর প্রায় ৭ মাসের মধ্যে বিচার কাজ শেষ হলো। এর আগে গত ৩০ সেপ্টেম্বর আদালত রায় ঘোষণার জন্য আজকের দিন ধার্য করেন।
মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্তরা হলেন- মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলা, নূর উদ্দিন, সোনাগাজীর পৌর কাউন্সিলর মাকসুদ আলম, শাহাদাত হোসেন শামীম, সাইফুর রহমান মোহাম্মদ জোবায়ের, জাবেদ হোসেন ওরফে সাখাওয়াত হোসেন জাবেদ, হাফেজ আব্দুল কাদের, আবছার উদ্দিন, কামরুন নাহার মনি, উম্মে সুলতানা ওরফে পপি ওরফে তুহিন ওরফে শম্পা ওরফে চম্পা, আব্দুর রহিম শরীফ, ইফতেখার উদ্দিন রানা, ইমরান হোসেন ওরফে মামুন, মোহাম্মদ শামীম, মহিউদ্দিন শাকিল এবং আওয়ামী লীগ নেতা ও মাদ্রাসার গভর্নিং বডির সহ-সভাপতি রুহুল আমীন।
রায় ঘোষণার সময় সকল আসামি আদালতের কাঠগড়ায় ছিলেন। আদালতের রায় পড়তে সময় লাগে ১২ মিনিট ৩৬ সেকেন্ড। রায় পড়ার শুরুতেই গণমাধ্যমের ভূমিকার প্রশংসা করেন। আদালত বলেন, গণমাধ্যমের কারণেই এই ভয়াবহ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা দেশবাসী জানতে পারে।
এর আগে সকাল ১০টা ৫৫ মিনিটে আসামিদের কাঠগড়ায় তোলা হয়। রায় শোনার পর আসামিরা চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করেন। কেউ কেউ কান্নায় ভেঙে পড়েন। কেউ কেউ জানান উচ্চ আদালতে আপিল করবেন। আসামিরা বাদীপক্ষের আইনজীবীদের অশ্লীল ভাষায় গালাগালি করেন। পরে পুলিশ পাহারায় আইনজীবীদের সরিয়ে দেয়া হয়।
গত ২৭ মার্চ ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফিকে যৌন হয়রানির অভিযোগে অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে ৬ এপ্রিল ওই মাদ্রাসার প্রশাসনিক ভবনের ছাদে ডেকে নিয়ে নুসরাতের হাত-পা বেঁধে শরীরে আগুন ধরিয়ে দেয় অধ্যক্ষের সহযোগীরা।
এ ঘটনায় ৮ এপ্রিল নুসরাতের ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান আট জনের নাম উল্লেখ করে নুসরাতকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ এনে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন। অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলার বিরুদ্ধে করা যৌন হয়রানির মামলা তুলে না নেয়ায় নুসরাতকে হত্যাচেষ্টা করা হয় বলে মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়।
১০ এপ্রিল ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় নুসরাতের মৃত্যু হয়। এরপর ‘হত্যাচেষ্টা’ মামলাটি ‘হত্যা মামলায়’ রূপান্তর করা হয়।
এই হত্যাকাণ্ড সারা দেশে ব্যাপক সাড়া ফেলে। কয়েক দিনের মধ্যে পুলিশ দেশের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে মামলায় ২১ জনকে গ্রেপ্তার করে। পরে তদন্তে সম্পৃক্ততা না পাওয়ায় পাঁচ জনকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেয়ার সুপারিশ করা হয়।
অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলা, নূর উদ্দিন, শাহাদাত হোসেন শামীম, উম্মে সুলতানা পপি, কামরুন নাহার মনি, জাবেদ হোসেন, আবদুর রহিম শরীফ, হাফেজ আবদুল কাদের, জোবায়ের আহমেদ, এমরান হোসেন মামুন, ইফতেখার হোসেন রানা ও মহিউদ্দিন শাকিল আদালতে হত্যার কথা স্বীকার করে জবানবন্দি দেন। #