দূরবীণ নিউজ ডেস্ক :
প্রস্তাবিত বাজেট ঘোষণার পরই মধ্যরাত থেকে মোবাইল ফোনের সিম কার্ড ব্যবহারের মাধ্যমে প্রদত্ত সেবার ওপর সম্পূরক শুল্ক বাড়িয়ে নেয়া শুরু হয়েছে। মোবাইলে
এসএমএস পাঠানো, কথা বলা ও ইন্টারনেট ব্যবহারে গ্রাহকদের বাড়তি অর্থ গুনতে হচ্ছে। পাঁচ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক বাড়ানোর প্রস্তাবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) গ্রাহকের কাছ থেকে এই বাড়তি অর্থ নেয়া শুরু করেছে।
বৃহস্পতিবার (১১ জুন) ২০২০-২০২১ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এবার মোবাইল ফোনের সিম বা রিম কার্ড ব্যবহারের মাধ্যমে প্রদত্ত সেবার ওপর সম্পূরক শুল্ক পাঁচ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব করেন।
পাঁচ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক বাড়ানোর ফলে মোবাইল ফোনের সেবায় ১৫ শতাংশ ভ্যাট, এক শতাংশ সারচার্জ, ১৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক এবং অন্যান্য খরচ মিলে ২৭ দশমিক ৭৭ শতাংশ থেকে বেড়ে হয়েছে ৩৩ দশমিক ২৫ শতাংশ।
মোবাইল ফোন অপারেটররা বলছে, আগে ১০০ টাকা খরচ করলে সরকারকে ২১ টাকা ৫৭ পয়সা দিতে হতো। পাঁচ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক বাড়ায় এখন তা হবে ২৪ টাকা ৯৫ পয়সা। এই বাড়তি খরচ বৃহস্পতিবার দিবাগত মধ্যরাত থেকেই কার্যকর হয়েছে।
তবে ইন্টারনেটের ক্ষেত্রে ভ্যাট পাঁচ শতাংশ হওয়ায় ডেটা ব্যবহারে কিছুটা কম খরচ হবে বলে জানায় অপারেটররা।
বিটিআরসির সর্বশেষ মার্চ মাসের হিসেবে, বর্তমানে দেশে চারটি মোবাইল ফোন অপারেটরের গ্রাহক সংখ্যা ১৬ কোটি ৫৩ লাখথ ৩৭ হাজার। আর ইন্টারনেট গ্রাহক ১০ কোটি ৩২ লাখ ৫৩ হাজার।
মোবাইল অপারেটরদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব মোবাইল টেলিকম অপারেটরস অব বাংলাদেশ (এমটব) বলছে, নিয়মিতভাবে করের বোঝা চাপিয়ে সরকার মোবাইল খাতকে ক্রমেই দুর্বল করে তুলছে। ফেলছে গ্রাহকদের ওপর বাড়তি চাপ। এমটব এই বাড়তি কর পুনর্বিবেচনার অনুরোধ করেছে।
বাজেট উত্থাপনের পরই এমটব মহাসচিব ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এসএম ফরহাদ এক বিবৃতিতে বলেন, দেশের অর্থনীতিতে মোবাইল টেলিকম খাতের অবদান যত উল্লেখযোগ্যই হোক না কেন, সরকার নিয়মিতভাবে প্রতিবছর এই খাতের ওপর আরও বেশি করে করের বোঝা চাপিয়ে একে আরও দুর্বল করে তুলছে; গ্রাহকদের ওপর ফেলছে বাড়তি চাপ। ফলে দেশের জিডিপিতে মোবাইলের বর্তমান অবদান সাত শতাংশ থেকে যে দুই অঙ্কের ঘরে যাওয়ার কথা বলা হয়েছিল, তা আর অর্জিত না-ও হতে পারে।
‘এ বছর সরকার মোবাইলের মাধ্যমে প্রাপ্ত সব রকম সেবার ক্ষেত্রে সম্পূরক শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করেছে। যা অত্যন্ত হতাশাজনক। এর ফলে গ্রাহকদের ওপর বাড়তি চাপ পড়বে। এ বিষয়ে এসআরও জারি হওয়ায় তা আজ দিবাগত রাত ১২টার পর থেকেই কার্যকর হবে।’
এমটব মহাসচিব বলেন, দেশে করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে এমনিতেই মানুষের মধ্যে যখন নাভিশ্বাস উঠেছে, মোবাইল হয়ে উঠেছে সব যোগাযোগের মূল চালিকা ও দেশ ডিজিটাল ইকনোমির দিকে এগিয়ে চলছে; ঠিক সে সময় এ ধরনের করের বোঝা কোনোভাবেই দেশের অর্থনীতির জন্য মঙ্গলজনক হবে না। এ বোঝা দরিদ্র মানুষের জন্য অসহনীয় হয়ে পড়বে এবং ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের পথে অন্তরায় হয়ে উঠবে। যা করোনাভাইরাস সংকটের কারণে আরো বাড়বে। এতে মোবাইল শিল্প খাত আরো বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ও দুর্বল হবে।
তিনি বলেন, আমরা মোবাইল খাতের পক্ষ থেকে অলাভজনক কোম্পানির জন্য বর্তমান ২ শতাংশ ন্যূনতম কর বিলোপ ও করপোরেট ট্যাক্স কমানোর জন্য পূর্বাপর অনুরোধ করলেও তা বিবেচনা করা হয়নি। যা চরম হতাশাজনক। আমরা সরকারকে টেলিকম খাতের বাজেটের বিষয়ে পুনর্বিবেচনা করার জন্য আবারও অনুরোধ করছি।
মোবাইল ফোন অপারেটরগুলোও পৃথক বিবৃতিতে বাড়তি খরচ কমানোর অনুরোধ করেছে। #