দূরবীণ নিউজ ডেস্ক:
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের বড় নদীগুলোকে ভাঙন রোধে নিয়মিত ক্যাপিটাল ড্রেজিং (বড় পরিসরে খনন) করতে হবে। ড্রেজিং এর স্থায়ী পরিকল্পনা তৈরীর নির্দেশ দিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সারাবছর নিয়মিত ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে নদীগুলোকে রক্ষণাবেক্ষণ করার জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আসাদুল ইসলাম গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, নদীর প্রবাহ যেন ঠিক থাকে। ভাঙনের প্রধান কারণ নদীর পানি যখন কমে যায় তখন চর পড়ে যায়, বা অন্যান্য কারণে পানি বেড়ে গেলে ভাঙন শুরু হয়। ফলে তিনি (প্রধানমন্ত্রী) বলেছেন, এসব বড় নদীতে সারাবছর একটা ড্রেজিংয়ের পরিকল্পনা থাকতে হবে।
মঙ্গলবার ( ৩ নভেম্বর)শেরেবাংলা নগরস্থ এনইসি সম্মেলন কক্ষে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় তিনি এ নির্দেশনা দেন। প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এনইসি সম্মেলন কক্ষের একনেক সভায় যোগ দিয়ে সভাপতিত্ব করেন। সভাশেষে এনইসি সম্মেলন কক্ষে সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা তুলে ধরেন পরিকল্পনা বিভাগের সচিব মো. আসাদুল ইসলাম।
তিনি জানান, সভায় ২ হাজার ৪৫৯ কোটি ১৫ লাখ টাকা ব্যয়ের চারটি প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এই অর্থের ৬০৭ কোটি ৭০ লাখ টাকা বিদেশী ঋণ, ১ হাজার ৬৬৯ কোটি ৩১ লাখ টাকা সরকারী অর্থায়ন এবং ১৮২ কোটি ১৪ লাখ টাকার সংস্থার নিজস্ব টাকা।
আসাদুল ইসলাম জানান, ড্রেজিংয়ের বিষয়ে যেসব প্রকল্প আছে সেগুলো দ্রুত একনেকে উপস্থাপনের জন্য অনুশাসন দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ড্রেজিংয়ের বিষয়ে একটা স্থায়ী পরিবর্তনের এবং নিয়মিত ব্যবস্থাপনার জন্য একটা প্রকল্প নিতেও প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানান পরিকল্পনা বিভাগের সচিব।
তিনি আরও বলেন, দ্রুত চর ওঠার কারণে যেসব নদীর পথ পরিবর্তন হয়ে যায় বা ভাঙে এগুলো চিহ্নিত করে ড্রেজিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। একইভাবে বর্ষাকালের পানি ধরে রাখার জন্য জোন তৈরি করতে হবে। যাতে পানির স্তর, অন্যান্য ব্যবস্থাপনা, পানির পরিমাণ বজায় থাকে এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন বলেও সচিব জানান।
একই নদীতে এরকম ভাঙন রোধে একাধিক প্রকল্প নেয়া হয়। এ বিষয়ে জানতে চাইলে কৃষি, পানিসম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের সদস্য (সচিব) মো. জাকির হোসেন আকন্দ বলেন, বাংলাদেশে যে পরিমাণ পানির ফ্লো (প্রবাহ) আসে, যে পরিমাণ বালু ও কাদামাটি নিয়ে আসে, এটা একদিকে আশির্বাদ আরেকদিকে কষ্টের কারণ।
আশির্বাদ হলো নদীর পার্শ্ববর্তী কৃষি জমি, সেগুলোতে পলি পাচ্ছে। সমস্যা হলো, এর ফলে আমাদের নদীগুলোতে প্রতিনিয়ত চর পড়ছে। কারণ যখন চর তৈরি হয়, মাঝখানে চর তৈরি হলে পানি হয় ডান-বাম দিকে যাবে, নয়তো ভাগ হয়ে যাবে। যখন ভাগ হয়ে যায়, তখন দুই দিকে ভাঙন সৃষ্টি হয়।
তিনি বলেন, নিয়মিত খনন মজার বিষয় নয়। এখন পর্যন্ত প্রত্যেকটা প্রজেক্ট বেইজড অ্যাপ্রোচ হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী আজকে বলেছেন, প্রজেক্ট বেইজড অ্যাপ্রোচ থেকে সরে এসে আমাদের ক্যাপিটাল ড্রেজিং করতে হবে অ্যাজ মেইনটেন্যান্স ড্রেজিং। সেখানে যেতে হলে পানিসম্পদ সচিব ও মন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করেছি, তাতে আমাদের মেইনটেন্যান্স ড্রেজিংয়ের জন্য নিজস্ব ড্রেজার দরকার। অর্থাৎ, পানি উন্নয়ন বোর্ডের নিজস্ব ড্রেজার দরকার। একটা ড্রেজারের দাম পড়ে প্রায় ৪০০ থেকে ৫০০ কোটি টাকা।
আমাদের সচল ড্রেজার আছে মাত্র ৫-৬টা। তারা ভাড়া করে নিয়ে আসে। তাদের ড্রেজিং সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য ড্রেজারের একটা প্রকল্প দিয়েছে কিছুদিন আগে। এ প্রকল্পে ৬ হাজার কোটি টাকায় তারা ড্রেজার কিনবে মাত্র ৩২টা। সুতরাং সব সমস্যার সমাধান করা যাবে না। কিন্তু বড় নদীগুলোতে আমরা স্টাডির মাধ্যমে মেইনটেন্যান্স ড্রেজিংয়ে যাব। সেই ক্ষেত্রে নদীর ডান ও বাম তীর সংরক্ষণের প্রকল্প যে ঘন ঘন আসছে, হয়তো তখন একই নদীতে এরকম এত প্রকল্প আসবে না।
অনুমোদিত প্রকল্পগুলো হলো, ৫৬০ কোটি ৭ লাখ টাকা ব্যয়ে যমুনা নদীর ডানতীর ভাঙন থেকে সিরাজগঞ্জ জেলার কাজিপুর উপজেলাধীন সিংড়াবাড়ী, পাটাগ্রাম ও বাঐখোলা এলাকা সংরক্ষণ’, ১৯৮ কোটি ৭৯ লাখ টাকা ব্যয়ে কক্সবাজার জেলায় শুঁটকি প্রক্রিয়াকরণ শিল্প স্থাপন প্রকল্প, ১ হাজার ৪৮৯ কোটি ১৪ লাখ টাকা বর্ধিত খরচে পাঁচদোনা-ডাঙ্গা-ঘোড়াশাল জেলা মহাসড়কে এক স্তর নিচু দিয়ে উভয় পাশে পৃথক সার্ভিস লেনসহ চার লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পের প্রথম সংশোধন এবং ২ হাজার ৫০৫ কোটি ৩৭ লাখ টাকা বর্ধিত খরচে আমিনবাজার-মাওয়া-মংলা ৪০০ কেভি সঞ্চালন লাইন’।#