দূরবীণ নিউজ প্রতিবেদক:
গণভবনে শনিবার (২৭ আগষ্ট) বিকেলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে চা বাগান মালিকদের বৈঠকে চা শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ১৭০ টাকা নির্ধারণ করা হয়।
বৈঠকে চা বাগান মালিকদের পক্ষে বাংলাদেশ টি অ্যাসোসিয়েশেনের চেয়ারম্যান এম শাহ আলমের নেতৃত্বে ১৩ সদস্যের প্রতিনিধিদল অংশ গ্রহণ করেন। অন্যান্য সদস্যদের মধ্যে ন্যাশনাল টি কোম্পানি’র শেখ কবির হোসেন ও এইচ এস এম জিয়াউল আহসান, সাবাজপুর টি ’র তপন চৌধুরী, এম এম ইসপাহানী’র এম সালমান ইসপাহানী,সাতগাঁও টি’র আরদাশির কবির, কেদারপুর টি’র ব্যারিস্টার নিহাদ কবির, দি কাপনা টি’র কামরান টি রহমান, এম আহম্মেদ টি’র মোহাম্মদ সাফওয়ান চৌধুরী, ডিউন্দি টি’র এম ওয়াহিদুল হক, ডানকান ব্রাদার্সের ইমরান আহমেদ, দি কনসোলিডেটেড টি’র সালেক আহমেদ মাসরুর ও তাহসিন আহমেদ চৌধুরী।
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে চা বাগান মালিকদের আলোচনা সভায় শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ১৭০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। ফলে আনুসঙ্গি নানা সুযোগ সুবিধাসহ মোট ৪৭৭ টাকা পাবেন প্রত্যেক চা শ্রমিক। এই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর আহবানে চা শ্রমিকদেরকে টানা ১৫ দিনের লাগাতার ধর্মঘট প্রত্যাহার করে আজ (২৮ আগষ্ট) থেকে কাজে যোগদান করবেন।
বৈঠককালে চা বাগান মালিকদের প্রতিনিধিগণ প্রধানমন্ত্রীর নিকট তাদের অবস্থান তুলে ধরেন। তারা চা পাতা শ্রমিকদের ধর্মঘটের কারণে চা শিল্পে সৃষ্ট অচলাবস্থাসহ এই শিল্পের সার্বিক পরিস্থিতি তুলে ধরেন। উল্লেখ্য, চা শ্রমিকরা তাদের বিদ্যমান দৈনিক মজুরির হার ১২০টাকা থেকে ৩০০ টাকায় উন্নীত করার লক্ষ্যে ৯ থেকে ১৩ আগষ্ট পর্যন্ত প্রতিদিন দুই ঘন্টা করে কর্মবিরতি পালন করেন।
গত আগস্ট ১৩ থেকে তারা অনির্দিষ্ট কালের জন্য সর্বাত্মক ধর্মঘট পালন করছেন। ধর্মঘটের কারণে চা শিল্পে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়। প্রতিদিন চা শিল্পে ২০ কোটি টাকা লোকসান হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শিগগিরই ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে চা শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
বাংলাদেশের অর্থনীতিতে চা শিল্পের গুরুত্ব এবং অবদান কোনোভাবেই অস্বীকার করা যাবে না। পাকিস্তান আমলে এমন কি বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পরও বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্য তালিকা তৈরি করতে গেলে পাটের পর অনিবার্যভাবে চায়ের নাম চলে আসতো। সেই সময় পাট,চা এবং চামড়া ছিল আমাদের প্রধান তিনটি রপ্তানি পণ্য। এর মধ্যে পাট শিল্প তার গৌরবময় ঐতিহ্য হারিয়ে ফেলেছে।
চামরা শিল্পের অবস্থাও খুব একটা ভালো নয়। চা শিল্প কোনোভাবে তার ঐতিহ্য টিকিয়ে রেখেছে। কিন্তু চা শিল্পের এখন বড়ই দুর্দিন চলছে। দেশে মোট ১৬৭টি চা বাগান আছে। এতে শ্রমিক হিসেবে কাজ করছে প্রায় সোয়া লাখ শ্রমিক। এদের উপর নির্ভরশীল মানুষের সংখ্যা প্রায় ৫ লাখ। গত কয়েক বছরে চা শিল্পে রেকর্ড পরিমাণ চা উৎপাদিত হয়েছে। কিন্তু এখন সেই উৎপাদন কার্যক্রমে ভাটা পড়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
এক শ্রেণির পত্র-পত্রিকায় চা শিল্পের সঙ্কটের জন্য ঢালাওভাবে বাগান মালিকদের দোষারোপ করা হচ্ছে। কিন্তু তারা প্রকৃত সত্য উদঘাটনের চেষ্টা করছেন না। ফলে শ্রমিকদের আন্দোলন নিয়ে বিভিন্ন মহলে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হচ্ছে। মনে রাখতে হবে চা শিল্প একটি বিশেষায়িত শিল্প। এটা কেনো সাধারণ ব্যবসায়ের মতো নয়। এই শিল্পের সঙ্গে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন যেমন যুক্ত তেমনি ঐতিহ্যও জড়িত। কারণ বাংলাদেশে উৎপাদিত চা আন্তর্জাতিক মানের। অভ্যন্তরীণ ক্রমবর্ধমান চাহিদা মিটিয়েও প্রতি বছরই বিপুল পরিমাণ চা বিদেশে রপ্তানি করা হচ্ছে। চা শ্রমিকরা বর্তমানে মজুরি বৃদ্ধির যে আন্দোলন করছেন তার স্বরূপ বুঝতে হলে আমাদের কিছু বিষয়ের উপর দৃষ্টি দিতে হবে।
চা শ্রমিকরা তাদের দৈনিক আর্থিক মজুরি ১২০ টাকা থেকে ৩০০ টাকায় বৃদ্ধির দাবি করছেন। মজুরি বৃদ্ধির সঙ্গে উৎপাদিত পণ্যের মূল্য বৃদ্ধির প্রসঙ্গটি নিবিড়ভাবে জড়িত। কোনো পণ্যের মূল্য যদি যৌক্তিকভাবে বৃদ্ধি পায় তাহলে উৎপাদক লাভবান হতে পারেন এবং তিনি শ্রমিকদের মজুরিও বাড়াতে পারেন। প্রাপ্ত তথ্য মতে, গত দশ বছরে চা শ্রমিকদের মজুরি বেড়েছে ৯৪দশমিক ২০ শতাংশ। চা পাতার মূল্য বেড়েছে নিলাম পর্যায়ে শূন্য দশমিক ১৬শতাংশ। একজন চা শ্রমিক ক্যাশ অ্যান্ড কাইন্ড মিলিয়ে দৈনিক যে সুবিধা পান তার আর্থিক মূল্য ৪৬০ টাকার সমান।
একজন চা শ্রমিক প্রতিদিন ন্যূনতম ক্যাশ ওয়েজ পাচ্ছেন ১২০ টাকা। এছাড়া তিনি নগদ আর্থিক মজুরির পাশাপাশি প্রতি সপ্তাহে সাশ্রয়ী মূল্যে(২ দশমিক ৫০টাকা) ৮ কেজি চাল বা আটা পান। শুধু শ্রমিক নন তার স্ত্রী, সন্তান এমনকি নির্ভরশীল বাবা মায়ের জন্যও আলাদা বরাদ্দ থাকে। চা শ্রমিকদের পরিবারের জন্য বিনামূল্যে বিদ্যুৎ, চিকিৎসাসহ আবাসন সুবিধা দেয়া হয়। তাদের সন্তানদের জন্য বিনামূল্যে শিক্ষা লাভের সুযোগ দেয়া হয়। বোনাস এবং অবসর ভাতার ব্যবস্থাও রয়েছে।
#