দূরবীণ নিউজ ডেস্ক :
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন বলেছেন, দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ । জাতীয় সংসদে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, এদেশের কৃষক, শ্রমিক ও ক্ষেতমজুরা দুর্নীতি করে না। দেশের শিক্ষিত লোকদের মধ্যে ৫ শতাংশ মানুষ ঘুষ খায় ও দুর্নীতি করে। তাদের প্রতিরোধ করতে হবে। দুদক চেয়ারম্যান দুর্নীতিবাজদের প্রতিরোধে দুদকের হাতকে শক্তিশালী করতে দেশের সুশিল সমাজকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেছেন, দেশে দুর্নীতিবাজদের সংখ্যা অনেক বেড়েছে। তারা প্রতিষ্ঠিত ও ক্ষমতাবান। প্রতিটি সেক্টরেই ঘুষ দুর্নীতি বেড়েছে। নানাভাবে দুর্নীতিবাজদের উৎসাহিত করা হয়। জনগণকে সচেতন ও গণজাগরণের মাধ্যমে দুর্নীতি প্রতিরোধ করার দঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন দুদক চেয়ারম্যান।
বৃহস্পতিবার (৯ ডিসেম্বর) সকালে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদক প্রধান কার্যালয়ে আন্তর্জাতিক দুর্নীতি বিরোধী দিবস উদ্বোধনকালে তিনি এসব কথা বলেন। জাতীয় সংগীত পরিবেশন ও পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে দিবসটি শুরু হয়। এরপর শান্তির প্রতীক পায়রা ও বেলুন উড়িয়ে দিবসটি উদ্বোধন করেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ, কমিশনার (অনুসন্ধান) মোজাম্মেল হক খান ও কমিশনার (তদন্ত) জহুরুল হক এবং দুদক সচিব মু. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার। এ সময়ে দুদকের মহাপরিচালক ও পরিচালকসহ বিভিন্ন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।
এরপর বেলা ১১টায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালা অডিটোরিয়ামে দুদক চেয়ারম্যান মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির ভাষণ দেন মহামান্য রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন। আরো বক্তব্য রাখেন কমিশনার (অনুসন্ধান) মোজাম্মেল হক খান ও কমিশনার (তদন্ত) জহুরুল হক এবং দুদক সচিব ড. মু. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার।
দুদক কমিশনার মোজাম্মেল হক খান বলেছেন, গত ১০ বছরে এ দেশ থেকে সাড়ে ৪ লাখ কোটি টাকা ব্রিটেন, হংকং, কানাডা, দুবাই, মালয়েশিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পাচার হয়েছে। তিনি বলেন, সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টে আপিল বিভাগের একটি রায় ও নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে পারলে দেশে দুর্নীতি প্রতিরোধ অনেকটা সহজ হবে। তবে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধে দুদকের মামলায় শতভাগ সাজা হচ্ছে।
তিনি বলেন, শুধু আইন দিয়ে দুর্নীতি দুর করা সম্ভব নয়। সকল শ্রেণি-পেশার মানুষকে ঐক্যভাবে দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।
কমিশনার জহুরুল হক বলেন, বঙ্গবন্ধু দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে ছিলেন। দুর্নীতিবাজদের অর্জিত সম্পদ উদ্ধার করে জনগণের কল্যাণে ব্যয় করা উচিত। তিনি বলেন, দুর্নীতি বাংলাদেশের উন্নয়নকে মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত করছে। এ দেশে দুর্নীতি না থাকলে বিশ্বে আরো মর্যাদার আসনে পৌঁছতে পারত।
এবারের প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল ‘আপনার অধিকার, আপনার দায়িত্ব: দুর্নীতিকে না বলুন’। আর এই বিষয়টিকে সামনে রেখেই বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে একযোগে উদযাপিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস। কেন্দ্রীয় কর্মসূচির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে দেশের প্রতিটি মহানগর, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে মানববন্ধন, আলোচনা সভা, তথ্যচিত্র প্রদর্শন এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছে।
জাতিসংঘ ২০০৩ সালের ৯ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস ঘোষণা করে। সে হিসেবে এবার ১৯তম আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস পালিত হচ্ছে। জাতিসংঘ সারা বিশ্বকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ করার লক্ষ্যে ইউনাইটেড ন্যাশনস কনভেনশন অ্যাগেইনস্ট করাপশনের (আনকাক) মাধ্যমে দুর্নীতি বিরোধী কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
বাংলাদেশ আনকাকের সদস্য রাষ্ট্র হিসেবে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ২০০৭ সালে আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস পালন শুরু করে। যদিও সরকারিভাবে ২০১৭ সাল থেকে দিবসটি উদযাপিত হচ্ছে।
‘আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস-২০২১’ উপলক্ষে রাজধানীসহ দেশের আটটি বিভাগ, ৬৪টি জেলা এবং ৪৯৫টি উপজেলায় বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে দুদক। পাশাপাশি ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) ও সরকারি বিভিন্ন মন্ত্রণালয় দিবসটি উদযাপন করছে। দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী বিশেষ বাণী দিয়েছেন।