দূরবীণ নিউজ প্রতিবেদক :
সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থা ও মন্ত্রণালয়কে পুরান ঢাকায় ঝুঁকিপূর্ণ কেমিক্যাল গোডাউন ও ভবনের তালিকা দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। আগামী ১৭ এপ্রিলের মধ্যে এই তালিকা আদালতে দাখিল করতে বলা হয়েছে। আদালত একই সঙ্গে পুরান ঢাকায় ঝুঁকিপূর্ণ কেমিক্যাল গোডাউন ও ভবন প্রসঙ্গে বিবাদী শিল্প সচিব, রাজউক, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন, পরিবেশ অধিদপ্তরসহ ১৫ জনের কাছে জবাব চেয়ে একাধিক রুল জারি করেছেন।
বিবাদীদেরকে আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে জারি করা রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
পুরান ঢাকায় একর পর এক বড় বড় অগ্নিকান্ডে বিপুল পরিমান জানমালের ক্ষয়ক্ষতির অন্যতম কারণ এসব ঝুঁকিপূর্ণ কেমিক্যাল গোডাউন। পুরান ঢাকায় আবাসিক ও বাণিজ্যিক এলাকায় এসব কেমিক্যাল গোডাউনগুলো আতঙ্কের অন্যতম কারণ। ইতিপূর্বে বেশ কয়টি অগ্নিকান্ড তার প্রমাণ।
মঙ্গলবার (১ ফেব্রুয়ারি) বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি এস এম মনিরুজ্জামানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের একটি দ্বৈত বে এই আদেশ দেন। রিটকারী আইনজীবী অ্যাডভোকেট সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন।
হাইকোর্টের রুলে চুড়িহাট্টায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষকে কেন ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে না, যেখানে ৩৭টি ব্যাংক ৩০ কোটি টাকা জমা দিয়েছে। এই ক্ষতিপূরণ দিয়ে তাদের পুর্নবাসনের ব্যবস্থা কেন করা হবে না এবং কেন পুরান ঢাকায় অগ্নি নির্বাপন ব্যবস্থা স্থাপন করা হবে না, রুলে তাও জানতে চেয়েছেন। সরু গলি প্রশস্ত করতে কেন উদ্যোগ নেওয়া হবে না, পাশাপাশি আবাসিক ভবনে কেমিক্যাল গোডাউন ভাড়া দেওয়া বাড়ির মালিকদের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হবে না সেটিও জানতে চেয়ে রুল জারি করা হয়েছে। ২০১৯ সালের ২০ ফেব্রæয়ারি পুরান ঢাকার চকবাজারের চুড়িহাট্টায় ঘটে যাওয়া ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে ৭১ জন নিহত ও অসংখ্য মানুষ আহত হন। কিন্তু ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের কোনো সদস্য ক্ষতিপূরণ পায়নি। ফলে তারা মানবেতর জীবন-যাপন করছেন।
আইনজীবী রিজওয়ানা হাসান গণমাধ্যমকে বলেন আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে শিল্প সচিব, রাজউক, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন, পরিবেশ অধিদপ্তরসহ ১৫ জনকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে। এর আগে রাজধানীর পুরান ঢাকার চুড়িহাট্টায় অগ্নিকান্ডের ঘটনায় ক্ষতিপূরণ চেয়ে পরিবেশবিদ সংগঠন বেলা, বøাস্টসহ বেশ কয়েকটি সংগঠনের পক্ষ পৃথক একটি রিট দায়ের করা হয়।
আইনজীবী রিজওয়ানা হাসান বলেন, পুরান ঢাকায় কতগুলো ভবনে কেমিক্যালের ফ্যাক্টরি বা গোডাউন বা দোকান আছে তার একটা তালিকা করে আদালতে দাখিল করতে নির্দেশ দিয়েছেন। এছাড়া কেমিক্যাল ব্যবসার জন্য স্থায়ী এবং অস্থায়ী কেমিক্যাল পল্লী নির্মাণের অগ্রগতি কতটুকু হয়েছে সেটিও জানাতে বলেছেন আদালত। আগামী ১৭ এপ্রিলের মধ্যে প্রতিবেদন দিয়ে এটি জানাতে হবে। এ আদেশের পাশাপাশি রুল জারি করেছেন আদালত।
পুরান ঢাকায় কেমিক্যাল গোডাউনগুলো ঝুঁকিপূর্ণ:
এদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) এবং সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থার যৌথভাবে জুরিপে বেরিয়ে আসছে পুরান ঢাকায় এক হাজার ৯২৪টি কেমিক্যাল গোডাউন রয়েছে। এরমধ্যে ৯৮ শতাংশ গোডাউনই মাঝারি ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ। এই তালিকা তৈরিতে ডিএসসিসিকে সহায়তা করেছে বিস্ফোরক অধিদফতর, ফায়ার সার্ভিস, শিল্প মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধিরা।
২০২১ সালের ২৯ এপ্রিল ডিএসসিসির পক্ষ থেকে পুরান ঢাকার কেমিক্যাল গোডাউনের এই তালিকা মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো হয়েছে বলে জানা যায়। পুরান ঢাকায় ডিএসসিসির কর অ ল ৩, ৪ ও ৫ এলাকায় অনুসন্ধান চালিয়ে এক হাজার ৯২৪টি কেমিক্যাল গোডাউনের তালিকা তৈরি করেছেন তারা। তালিকায় ডিএসসিসির কর অ ল-৩ এ এক হাজার ৩০১টি, কর অ ল-৪ এ ৫৮৫টি এবং কর অ ল-৫ এ ৩৮টি কেমিক্যাল গোডাউনের তথ্য রয়েছে। এর মধ্যে কর অ ল-৩ ইসলামবাগে পাঁচশো’র মতো কেমিক্যাল গোডাউন রয়েছে।
কেমিক্যালের ধরন এবং ঝুঁকির মাত্রা বিবেচনায় মাঝারি আকারের ঝুঁকিতে থাকা কেমিক্যাল গোডাউনের ৯৮ শতাংশ। অতি ঝুঁকিপূর্ণ ০.৫ শতাংশ, নিম্ন ঝুঁকিপূর্ণ গোডাউনের সংখ্যা ১.৫ শতাংশ।’ মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো চিঠিতে এসব তথ্যসহ গোডাউনে রাখা রাসায়নিক দ্রব্যাদির ধরন উল্লেখ করা হয়েছে। গত বছর ২৬ এপ্রিল তালিকাটি তৈরি করে ডিএসসিসি। পরে ওই ডিএসসিসির প েেথকে তালিকাটি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো হয়েছে। #