দূরবীণ নিউজ প্রতিনিধি:
দেশের বহুল আলোচিত অর্থপাচারকারী প্রশান্ত কুমার হালদার (পিকে হালদার) সিন্ডিকেটের সদস্য পূর্ণিমা রাণী হালদার ও তার স্বামী স্বপন কুমার মিস্ত্রীর বিরুদ্ধে ৩ কোটি ৪৮ লাখ ৩ ৫২২ টাকার অবৈধ সম্পদের অভিযোগে পৃথক দুই মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
মঙ্গলবার (১০ মে) দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১ এ সংস্থাটির উপ-পরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান বাদী হয়ে আসামীদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন আইন ২০০৪ এর ২৬ (২) ও ২৭ (১) ধারায় মামলা দুটি দায়ের করেন।
গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা ও উপ পরিচালক মুহাম্মদ আরিফ সাদেক।
মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে, নির্দিষ্ট সময় অতিবাহিত হওয়ার পরেও দুদকে সম্পদ বিবরণী জমা না দেওয়ার অপরাধে পিকে হালদার সিন্ডিকেটের অন্যতম সদস্য পূর্ণিমা রাণী হালদার ও তার স্বামী স্বপন কুমার মিস্ত্রীর বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন আইন ২০০৪ এর ২৬ (২) ও ২৭ (১) ধারায় একটি মামলাটি দায়ের করা হয়।
আর অপর মামলায় পূর্ণিমা রাণী হালদারের বিরুদ্ধে ২ কোটি ৩৬ লাখ ৮১ হাজার টাকা ও স্বপন কুমার মিস্ত্রির বিরুদ্ধে ১ কোটি ১১ লাখ ২২ হাজার ৫২২ টাকা জ্ঞাত আয়ের সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে।
এদিকে পিকে হালদারকে দেশে ফিরিয়ে আনার প্রসঙ্গে মামলার বাদী দুদক উপ পরিচালক গুলশান আনোয়ার গণমাধ্যমকে বলেন, ইতিমধ্যে ইন্টারপোলের মাধ্যমে রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। ফিঙ্গারপ্রিন্টসহ চাহিদা করা নথিপত্র সরবরাহ করা হয়েছে। দুদকের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
পিকে হালদারের বিরুদ্ধে প্রায় ৩ হাজার ৬০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৮৩ ব্যক্তির সংশ্লিষ্টতা পেয়েছে দুদক। দুদক ৩ হাজার কোটি টাকার সম্পদ আদালতের মাধ্যমে প্রিজ করেছে। পর্যায়ক্রমে তিন ধাপে ৫২ আসামি ও অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। পিকে সিন্ডিকেটের ৩৩ জনের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে সম্পদ বিবরণী জারির নোটিশ জারি করা হয়েছে। তবে ১৩ জন নির্দিষ্ট সময়ে সম্পদ বিবরণী দুর্নীতি দমন কমিশনে দাখিল করেননি।
দুদক উপ-পরিচালক গুলশান আনোয়ার পধানের নেতৃত্বে একটি টিম পিকে হালদারের আর্থিক কেলেঙ্কারির ঘটনাটি অনুসন্ধান ও তদন্ত করছে। এ পর্যন্ত ৩৪টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। ইন্টারন্যাশনাল লিজিং থেকে প্রায় ৮০০ কোটি টাকা ভুয়া ঋণের নামে উত্তোলন ও আত্মসাতের অভিযোগে ওই প্রতিষ্ঠানের ৩৭ জনের বিরুদ্ধে ১০টি মামলা এবং ৩৫০ কোটি ৯৯ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস’র ৩৩ শীর্ষ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে পৃথক ৫টি মামলা করেছে দুদক।
২০২০ সালের ৮ জানুয়ারি প্রায় ২৭৫ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে প্রথমে পিকে হালদারের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ২০২১ সালের নভেম্বরে ৪২৬ কোটি টাকার জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবে প্রায় ৬ হাজার ৮০ কোটি টাকা লেনদেনের অভিযোগে এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক ও রিলায়েন্স ফাইন্যান্স লিমিটেডের সাবেক এমডি পিকে হালদারসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করে দুদক।
গ্রেফতারি পরোয়ানা দিয়ে ইন্টারপোলের মাধ্যমে রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়। তার কেলেঙ্কারিতে এখন পর্যন্ত গ্রেফতার করা হয়েছে ১২ জনকে।
এর মধ্যে উজ্জ্বল কুমার নন্দী, পিকে হালদারের সহযোগী শংখ বেপারী, রাশেদুল হক, অবান্তিকা বড়াল ও নাহিদা রুনাইসহ আটজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। #