দূরবীণ নিউজ ডেস্ক :
আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুল দখলে নেয়ার জন্য যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন তালেবান যোদ্ধারা। ইতোমধ্যে আফগানিস্তানের ৮৫ শতাংশের বেশি এলাকা নিজেদের দখলে নেয়ার দাবী জানিয়েছেন তালেবান যোদ্ধারা। আফগানিস্তান থেকে পালাচ্ছে মিত্রবাহিনী, এই সুযোগে কাবুল দখলের লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন তালেবান যোদ্ধারা ।
এদিকে টানা ২০ বছর লড়াই করেছে আফগানিস্তান থেকে বিদায় নিচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, অস্ট্রেলিয়া, নেদারল্যান্ড, তুরস্ক, জার্মানি, ইতালি ও পর্তুগালসহ ৩৬টি দেশের সমন্বয়ে গঠিত মিত্র বাহিনী । অবশেষে তালেবানের কাছে পরাজিত হয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নেতৃত্বে গঠিত মিত্রবাহিনী। তারা পালিয়ে যাচ্ছে আফগানিস্তান থেকে। অত্যাধুনিক মারণাস্ত্র ও বিমানবাহিনীসহ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র হামলা চালিয়েছিল আফগানিস্তানে। এক সময় তাদের সৈন্য সংখ্যা আফগানিস্তানে ১ লাখ ২০ হাজারে দাঁড়িয়েছিল।
২০ বছর আগে মার্কিনী মিত্রবাহীর আক্রমণে আফগানিস্তানের তৎকালীন ক্ষমতাসীন তালেবান সরকারকে পিছু হটে রাজধানী কাবুল ছাড়তে হয়েছিল। কিন্তু মোল্লা ওমরের সরকার হটে এলেও কখনোই ময়দান ছাড়েনি। পৃথিবীর সর্বাধুনিক মারণাস্ত্র, বিমান বহর, ক্ষেপণাস্ত্র এমনকি পরমাণু বোমার পর সব থেকে শক্তিশালী বোমা ‘মাদার অফ দ্য বম্বস’ ব্যবহার করেও আফগান যোদ্ধাদের হটাতে পারেনি পৃথিবীর সব থেকে শক্তিশালী মার্কিন মিত্র বাহিনী।
অবশ্য পরিবর্তে গানিব্যাগে পুরে ৪০০০ ও বেশি মার্কিন সেনাদের লাশ ফিরে গেছে ওয়াশিংটন ও নিউ ইয়র্কে। এ ছাড়া আহত প্রায় ২১ হাজার সেনাকে বিমানে করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিজ দেশে নিয়ে গেছে চিকিৎসার জন্য। এই আহত সেনাদের এখন শারীরিক ও মানসিক চিকিৎসা করতে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের লক্ষ লক্ষ ডলার ব্যয় হচ্ছে। পঙ্গু সেনাদের জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে বিশেষ ভাতা ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হয়েছে।
তালেবান সরকারকে সরিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তান দখল করেছিল। কিন্তু ‘বিশ সাল বাদ’ এত ক্ষয়ক্ষতির পর সেই তালিবানের হাতেই ক্ষমতা সমর্পণ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অপমানজনক বিদায় নিতে হচ্ছে কাবুল থেকে। তাদের মিশন তো পুরো হয়নি– বরং অবস্থা যেখানে ছিল তা অপরিবর্তিত রেখেই পাততাড়ি গোটাচ্ছে মার্কিন ও ন্যাটোর সেনা।
তালেবান সদ্য ঘোষণা করেছে, আফগানিস্তানের ৮৫ শতাংশ এলাকা এখন তাদের দখলে। এ ছাড়া ইরানের কাছে বেশ কয়েকটি সীমান্ত চৌকিও তালিবান দখলে নিয়েছে। এই এলাকাটির নাম ইসলাম ক্বালা। আফগানিস্তানের এই সীমান্ত এলাকাটি ইরান থেকে শুরু করে চীন পর্যন্ত বিস্তৃত এবং ভৌগোলিক দিক থেকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
কাবুলে প্রতিষ্ঠিত আফগান সরকারের মুখপাত্ররা তালিবানের এই দাবি স্বীকার করে নিয়েছে। তবে করুণ কণ্ঠে বলেছে– আমরা তা পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করব। আফগান স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র তারেক আরিয়ান বলেছেন– বর্তমানে যা অবস্থা তাতে এটা কখনই সম্ভব হবে না যে– কাবুলের সরকার পুরো আফগানিস্তানের উপর কর্তৃত্ব করবে।
অন্যদিকে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত কাবুল সরকারের হতাশার আর একটি কারণ হচ্ছে– তাদের দোস্ত ও প্রভু মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, মার্কিন সেনাবাহিনী এ বছর ৩১ আগস্টের মধ্যেই তাদের সব সেনা আফগানিস্তান থেকে প্রত্যাহার করে নেবে।
তিনি অবশ্য বলেছেন, ২০ বছর আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেনা প্রেরণ ও যুদ্ধ তার অভীষ্ট লক্ষ্য পূরণ করেছে। তবে তিনি এটাও স্বীকার করেছেন, কাবুল সরকারের পক্ষে আফগানিস্তানকে নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব নয়। কিন্তু দুঃখের কথা হচ্ছে– কাবুল সরকারকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আর সাহায্য করার হিম্মত দেখাবে না। বাইডেন সাফ বলে দিয়েছেন, তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নয়া একটি প্রজন্মকে আর কখনোই আফগান যুদ্ধে পাঠাবেন না।
বর্তমানে অবস্থা হচ্ছে– তালিবান উত্তর আফগানিস্তানে বেশিরভাগ জায়গা থেকে কাবুলের আফগান সেনাকে হটিয়ে দিয়েছে। আর কাবুল সরকার কোনওক্রমে প্রাদেশিক রাজধানীগুলোকে এখনো ধরে রেখেছে। তবে তাদের খাবার ও গোলা বারুদের জন্য বিমানবাহিনীর উপর নির্ভর করতে হচ্ছে। কারণ– স্থলপথে প্রাদেশিক রাজধানীগুলোর সাথে যোগাযোগ রাখা সম্ভব হচ্ছে না।
অসহায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, আফগান জনগণকে তাদের ভবিষ্যত নিজেদেরই নির্ধারণ করতে হবে। অর্থাৎ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তান সম্পর্কে পুরোপুরি হাল ছেড়ে দিয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দ্বারা অধিষ্ঠিত আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি বলেছেন, তার সরকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করবে। কিন্তু আশরাফ গনি এও স্বীকার করেছেন, অবস্থা ভালো নয়, ভবিষ্যৎ সংকটপূর্ণ।
সূত্র : পুবের কলম