দূরবীণ নিউজ প্রতিবেদক :
বিশ্ববিদ্যালয় মুঞ্জরি কমিশনের (ইউজিসি) সিদ্ধান্ত চলতি বছরেই পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সমন্বিত বা গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নেয়া হবে।
ইউজিসির সিদ্ধান্তে বলা হয়েছে, মানবিক, ব্যবসায় ও বিজ্ঞান বিভাগ থেকে উত্তীর্ণরা উচ্চ মাধ্যমিকের পাঠ্যসূচির ওপর ভিত্তি করে তৈরি প্রশ্নপত্রে এই ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেবেন।
বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক কাজী শহীদুল্লাহর সভাপতিত্বে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভিসিদের সাথে এক মতবিনিময় সভায় সর্বসম্মতিক্রমে এই সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে কমিশনের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।
অধ্যাপক শহীদুল্লাহ বলেন, ভর্তি পরীক্ষা পদ্ধতির বিভিন্ন বিষয়ে আলেচনার জন্য ১৯৭৩ এর অধ্যাদেশ বলে গঠিত চারটি বিশ্ববিদ্যালয় এবং কিছু নির্বাচিত বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিদের সাথে শিগগিরই বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।
‘রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রী সমন্বিত পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নেয়ার জন্য বিভিন্ন সময়ে তাদের প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন। গত বছর পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভিসিদের সংগঠন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদ সমন্বিত পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নেয়ার জন্য সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।’
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিরা ‘দৃঢ়কণ্ঠে সমন্বিত পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নেয়ার জন্য তাদের অভিমত পুনর্ব্যক্ত করেন’বলে জানানো হয় বিজ্ঞপ্তিতে।
অধ্যাপক শহীদুল্লাহ বলেন, ‘আজ দেশ ও জাতির আকাঙ্ক্ষা হচ্ছে সমন্বিত পদ্ধতিতে একটি ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হোক, এখানে দ্বিমতের কোনো অবকাশ নেই। আমরা যদি সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণ করি তাহলে দেশ ও জাতি আমাদের অভিনন্দিত করবে।’
ইউজিসিতে অনুষ্ঠিত এই সভায় সমন্বিত পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা বিষয়ে ধারণাপত্র উপস্থাপন করেন কমিশনের সদস্য অধ্যাপক দিল আফরোজা বেগম। কমিশনের সদস্য অধ্যাপক মুহাম্মদ আলমগীর স্বাগত বক্তব্য দেন। আরেক সদস্য অধ্যাপক মো. সাজ্জাদ হোসেন এসময় উপস্থিত ছিলেন।
বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আলাদাভাবে আলাদা পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নেয় বলে এইচএসসি পাস করা শিক্ষার্থীদের দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ঘুরে ঘুরে পরীক্ষা দিতে হয়। একই বিষয়ে ভর্তি হওয়ার পরীক্ষা দিতে তাদের ভিন্ন ভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ভিন্ন ধরনের প্রস্তুতি নিতে হয়।
এ ব্যবস্থার বদলে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা এক দিনে এক পদ্ধতিতে নেয়ার কথা ভাবছে সরকার, যাকে বলা হচ্ছে সমন্বিত বা গুচ্ছ পদ্ধতি।
এ পদ্ধতিতে একজন শিক্ষার্থী একবার পরীক্ষা দিলেই চলবে, প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে তাকে গুচ্ছে থাকা কোনো একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ দেয়া হবে, যেভাবে মেডিকেল কলেজগুলোতে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়।
সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ২০১৩ সালে সমন্বিত পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নেয়ার আয়োজন করেও শেষ পর্যন্ত আন্দোলনের মুখে তা বাতিল করে।
সরকারের গত মেয়াদে তখনকার শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ গুচ্ছভিত্তিক ভর্তি পরীক্ষা নেয়ার উদ্যোগ নিলেও বিভিন্ন পক্ষের বিরোধিতায় তা আর আলোর মুখ দেখেনি।
তবে বর্তমান শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি গতবছর আবারও বিষয়টি বাস্তবায়নে উদ্যোগী হন এবং ২০২০ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভর্তি পরীক্ষা সমন্বিত পদ্ধতিতে নেয়া সম্ভব হবে বলে আশা প্রকাশ করন।
দীপু মনির যুক্তি, গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নেয়া গেলে শিক্ষার্থীদের হয়রানি আর অর্থের অপচয় কমে যাবে। বিশেষ করে নারী শিক্ষার্থীদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ আরও প্রশস্ত হবে, কারণ এখন ইচ্ছা থাকলেও সব জায়গায় পরীক্ষা দেয়া তাদের সবার পক্ষে সম্ভব হয় না। #