দূরবীণ নিউজ প্রতিবেদক:
আজ শানিবার পহেলা ফাগুন অর্থাৎ বসন্তের প্রথম দিন। এই উপলক্ষ্যে হলুদ শাড়ি আর ফুলের মালায় নতুন সাজে সেজেছেন উঠতি বয়সের অনেক তরুন তরুনীরা। দেখে মনে হচ্ছে হলদে পাখির ঝাঁক রাজপথে নেমেছে। সাদেশেই ফুলের চাহিদা বেড়েছে বলে জানাযায়।
এছাড়াও আগামীকাল রোববার (১৪ ফেব্রুয়ারি) পালিত হচ্ছে বিশ্ব ভালোবাসা দিবস । এই দুইদিনে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ফুলের দোকানে ফুল কেনা বেচার ধুম পড়েছে। ফুল ব্যবসায়ীরাও ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী ফুলের মালা, ফুলের ঝুড়ি, ফুলের স্তবক বানাচ্ছেন। বলতে গেলে ফুলের ব্যবসা বেশ জমে উঠেছে।
সরেজমিন খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে বর্তমানে ৬ হাজারের বেশি ছোট-বড় ফুলের দোকান আছে। এর মধ্যে শুধু রাজধানীতেই আছে সাড়ে ৬০০ ফুলের দোকান। তবে ভালোবাসা দিবসের দিন সারাদেশে পাড়া-মহল্লায় ফুলের অস্থায়ী দোকান খুলে অনেকেই এ ব্যবসায় জড়ান। সে সংখ্যা প্রায় হাজারের কাছাকাছ।
এবছর দেশে চীন, থাইল্যান্ডসহ কয়েকটি দেশ থেকে গোলাপ, লিলি, অর্কিড, কার্নিশন, নীলকণ্ঠ, জিপসিসহ বেশ কিছু ফুল আমদানি হচ্ছে।
প্রতি বছরের মতো এবছরও বিশ্ব ভালোবাসা দিবস এবং পহেলা ফাগুন উপলক্ষকে জমে উঠেছে ফুলেরবাজার। তবে এবার দামের উত্তাপটা একটু বেশিই মনে হয়েছে অন্যান্য বছরের তুলনায়।
আজ শনিবার দুপুরে রাজধানীর শাহবাগে কথা হচ্ছিল বাসেদ মিয়ার ফুলের দোকানের কর্মচারী রাহেলা বেগম বলেন, ‘ফুলে করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) প্রভাব পড়েছে। তিনি বলেন, গত বছর অনেকে ফুলের বাগান নষ্ট করে অন্য কাজে লাগিয়েছেন। এখন সে কারণে ফুলের সরবরাহ কম।’
ফুল ব্যবসায়ী বশির উদ্দিন বলেন, ‘ওই সময়ের পর থেকে এখন পর্যন্ত শুধু ডিসেম্বরেই ব্যবসা ভালো গেছে। আর এখন এসেছে ভ্যালেন্টাইন আর ফাল্গুন। হঠাৎ সরবরাহের তুলনায় চাহিদা বাড়ায় এখন দাম খুবই বাড়তি।’
ফুল ধরে ধরে দাম জানিয়ে ওই ব্যবসায়ী বলেন, ‘গত বছর গদখালীর গোলাপের সবচেয়ে ভালোটার দাম ছিল ছিল ৮ থেকে ১২ টাকা। সেটা এখন ১৫ থেকে ১৭ টাকায় কিনতে হচ্ছে। আমরা ২৫ থেকে ৩০ টাকায় বিক্রি করছি। অর্থাৎ দাম গত বছরের ভ্যালেন্টাইনের তুলনায় প্রায় দেঁড়গুণ।’
তিনি বলেন, ‘এবার গ্লাডিওলাস পাইকারিতে ৮-১০ টাকা থেকে বেড়ে ১৩-১৫ টাকা হয়েছে। বিক্রি হচ্ছে ২০ টাকায়। রজনীগন্ধা ৬-৭ থেকে বেড়ে এখন ৯-১০ টাকা, বিক্রি ১৫ টাকা, ৫ টাকার জারবেরা ফুলের পাইকারি দাম বেড়ে ১০ থেকে ১৫ টাকা হয়েছে। বিক্রি করছি ২০ টাকায়।’
বশির উদ্দিন আরো বলেন, ‘পয়লা ফাল্গুনে সবচেয়ে বেশি চাহিদার ফুল বাসন্তী গাঁদার চেইন (ডাবল)। এর দাম ৫০ থেকে বেড়ে ৭০ টাকা হয়েছে। যা ১০০ টাকার নিচে বেচলে লাভ হচ্ছে না। এছাড়া প্রতি হাজার বাসন্তী গাদা ফুল ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকায় বেচাকেনা হতো, যা এখন ৫০০ টাকার ওপরে।’
শাপলা পুষ্পালয়ের মুমিনুল হোসেন বলেন, ‘কেমন বেচাকেনা হবে, কেমন ফুল দোকানে রাখবো, এখনো বুঝতে পারছি না। দেশের যে পরিস্থিতি তার মধ্যে আগের মতো ফুল বিক্রি হবে না। এর মধ্যে আবার দাম বেশি। বেচাকেনা নিয়ে বড় সমস্যায় পড়েছি।’
এদিকে সরবরাহ কমায় দাম বাড়ার বিষটি জানিয়েছেন বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির সভাপতি আব্দুর রহিম। তিনি বলেন, ‘বিগত সময়ে ফুল চাষি ও ব্যবসায়ীদের অন্তত শত কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। বেচাকেনা বন্ধ থাকায় চাষিরা বাগান থেকে ফুল কেটে তা পশুখাদ্য হিসেবে ব্যবহার করেছেন। অনেক বাগানে এখনো ফুল নেই। তাই বাজারে এর প্রভাব পড়েছে।’
বর্তমানে দেশে সবচেয়ে বেশি ফুল হচ্ছে যশোরে। অন্যান্য এলাকায়ও ফুলের চাষ প্রচুর বেড়েছে। সবমিলে সারাদেশে ছয় হাজার হেক্টর জমিতে এখন ফুল চাষ হচ্ছে। রজনীগন্ধা, গোলাপ, জারবেরা, গাঁদা, গ্লাডিওলাস, রডস্টিক, কেলেনডোলা, চন্দ্র মল্লিকাসহ দেশের চাষিদের উৎপাদিত ১১ ধরনের ফুল দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যাচ্ছে। এছাড়া রফতানিও হচ্ছে।
বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির তথ্য বলছে, শুধু ভালোবাসা দিবসে গোলাপের চাহিদা ৫০ লাখের বেশি হলেও চাহিদা অনুযায়ী এ বছর জোগান কিছুটা কম হতে পারে। গত বছর ভালোবাসা দিবস ও বসন্তবরণকে কেন্দ্র করে প্রায় ২০০ কোটি টাকার ফুল বিক্রি হয়েছিল।/